পাথুরে জনপদে দুই হেভিওয়েটের লড়াই

135

কে.এম.লিমন গোয়াইনঘাট থেকে :
সীমান্তবর্তী জৈন্তাপুর-গোয়াইনঘাট ও কোম্পানিগঞ্জ উপজেলা নিয়ে গঠিত সিলেট-৪ আসন। খনিজ সম্পদ তেল-গ্যাস আর বালু-পাথর-চুনাপাথরের জনপদ এই তিন উপজেলা। খনিজ সম্পদের পাশাপাশি তিন উপজেলার প্রাকৃতিক সৌন্দর্যও সিলেটের পর্যটনকে করেছে সমৃদ্ধ। দেশের সবচেয়ে বড় পাথর কোয়ারি এই নির্বাচনী এলাকাতেই। ফলে এই আসনের গুরুত্ব সিলেটের অন্য আসনগুলোর থেকে একটু বেশিই বলা চলে।
এ আসনে আওয়ামীলীগ মনোনীত দলীয় প্রার্থী হিসেবে চূড়ান্ত হয়েছেন পাঁচ বারের নির্বাচিত সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামীলীগের সহ সভাপতি ইমরান আহমদ। এবং বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপির মনোনীত দলীয় প্রার্থী হিসেবে চূড়ান্ত হয়েছেন কেন্দ্রীয় বিএনপির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক ও সাবেক সংসদ সদস্য দিলদার হোসেন সেলিম।
নেতাকর্মীদের ভাষ্যমতে বর্তমান সাংসদ ইমরান আহমদ নৌকা, সাবেক সাংসদ দিলদার হোসেন সেলিম ধানের শীষ প্রতিক পাওয়ায় আবারও মুখোমুখি হতে চলেছেন দুই হেভিওয়েট প্রার্থী। হাড্ডাহাড্ডি ভোট যুদ্ধে অবতীর্ণ হতে চলেছে সিলেট-৪ আসন।
এখানে সংসদ সদস্য হিসেবে বর্তমানে আছেন জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ইমরান আহমদ। এই নিয়ে পাঁচ মেয়াদে নির্বাচিত সংসদ সদস্য তিনি। ১৯৮৬, ’৯১, ’৯৬ সালেও এ আসনে বিজয়ী হন তিনি। ’৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত নির্বাচনে প্রয়াত অর্থমন্ত্রী এম সাইফুর রহমান এই আসনে বিজয়ী হন। ২০০১ সালে ইমরান আহমদকে পরাজিত করে বিএনপি নেতা দিলদার হোসেন সেলিম বিজয়ী সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। অবশ্য ২০০৮ সালে দিলদার হোসেন সেলিমকে হারিয়ে আসনটি পুনরুদ্ধার করে ইমরান আহমদ। ১০ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলের বিদ্রোহী প্রার্থী প্রবাসী আ’লীগ নেতা ফারুক আহমদকে হারিয়ে আবার নির্বাচিত হন তিনি।
স্থানীয় সচেতন মহলের ধারণা এই দুই প্রার্থী পরস্পরের প্রতিদ্বন্দ্বী হওয়ায় ভোট যুদ্ধ হবে হাড্ডাহাড্ডি।
উপজেলার বিভিন্ন এলাকা গুরে দেখা যায় এ আসনটি নিজেদের করতে হাটবাজার, চা-স্টল, অফিস-আদালতসহ সর্বত্রই প্রার্থীদের সমর্থকরা নীজ দলের প্রার্থীকে ভোট দিয়ে বিজয়ী করতে চালিয়ে যাচ্ছেন প্রচার প্রচারণা। অপর দিকে উভয় দলের প্রার্থী প্রতি দিনই দলীয় নেতা কর্মীসহ সাধারণ মানুষের সাথে চালিয়ে যাচ্ছেন মত বিনিময়সহ প্রচার প্রচারণা।
এ আসনে বর্তমান সংসদ সদস্য ইমরান আহমদের অনুসারী আওয়ামী লীগ নেতারা বলেন, অতীত সাফল্যের ধারাবাহিকতায় আসন্ন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও নৌকা মার্কার বিজয় সূ-নিশ্চিত। দলের হাইকমান্ড মনোনয়ন দেওয়ার বিষয়ে সঠিক সিদ্ধান্ত— নিয়েছে, আস্থার মূল্যায়ন হিসেবে আবার এই আসন আওয়ামী লীগ সভানেত্রীকে উপহার দেওয়া হবে। কেননা বিগত দিনে তার উন্নয়ন এলাকার জনপ্রিয়তা অতীতের তুলনায় বেড়েছে মনে করেন কর্মী সমর্থকরা।
সাবেক সংসদ সদস্য দিলদার হোসেন সেলিম অনুসারী বিএনপি নেতারা বলেন, দিলদার হোসেন সেলিম এই তিন উপজেলাসহ সিলেটের বিভিন্ন এলাকায় দলকে সু-সংগঠিত করতে গিয়ে তাকে অনেক ত্যাগ-তিতিক্ষা ও মামলার ঘানি টানতে হয়েছে। এরপরও প্রয়াত সাবেক রাষ্ট্রনায়ক জিয়াউর রহমানের রাজনৈতিক আর্দশ থেকে বিচ্যুত হননি। আশা করি, এই ত্যাগ-তিতিক্ষার আমলে নিয়ে দল থেকে যৌগ্য ব্যাক্তিকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। ইনশাআল্লাহ এবারের নির্বাচনে সিলেট-৪ আসন পুনরুদ্ধার করে দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে উপহার দেওয়াসহ বিএনপি চেয়ারপারসনের মুক্তির আন্দেলন ত্বরান্বিত করা হবে।
নির্বাচন কমিশনের তথ্য মতে, এ আসনে মোট ৩ লাখ ৫৮ হাজার ৪৭৯ ভোটারের মধ্যে পুরুষ এক লাখ ৮৪ হাজার ৬২ এবং নারী ভোটার এক লাখ ৭৪ হাজার ৪১৭ জন।
তবে ইমরান আহমদ নাকি দিলদার হোসেন সেলিম কে হচ্ছেন এই আসনের আগামী দিনের সংসদ সদস্য?? সে ফলাফল দেখতে হলে অপেক্ষা করতে হবে নির্বাচনের দিন ৩০ ডিসেম্বর পর্যন্ত।