জোড়া সেঞ্চুরিতে বাংলাদেশের দিন

37

স্পোর্টস ডেস্ক :
২৬ রানে তিন উইকেট হারিয়ে বিপর্যয়ে দল। এরপর পথ দেখালেন মুমিনুল হক ও মুশফিকুর রহিম। দুজনই সেঞ্চুরি করলেন। গড়লেন ২৬৬ রানের জুটি। যার ফলে প্রথম দিনটা নিজেদের করে নিল বাংলাদেশ। মিরপুর টেস্টের প্রথম দিন শেষে বাংলাদেশের সংগ্রহ পাঁচ উইকেটে ৩০৩ রান। মুমিনুল হক ১৬১ রান করে আউট হয়ে গেলেও দিন শেষে ১১১ রান করে অপরাজিত থাকেন মুশফিকুর রহিম। ব্যক্তিগত শূন্য রানে অপরাজিত থাকেন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। জিম্বাবুয়ের বোলারদের মধ্যে কাইল জারভিস ৩টি, টেন্ডাই সাতারা ১টি ও ডোনাল্ড তিরিপানো ১টি করে উইকেট শিকার করেন।
মিরপুরে রবিবার শুরু হয়েছে বাংলাদেশ ও জিম্বাবুয়ের মধ্যকার দুই ম্যাচ টেস্ট সিরিজের শেষ ম্যাচ। টস জিতে ব্যাট করতে নামে টাইগাররা। বাংলাদেশ ব্যাটিংয়ে নেমে দলীয় ২৬ রানে তিন উইকেট হারিয়ে চাপে পড়ে। ইনিংসের সপ্তম ওভারে ইমরুল কায়েস ও নবম ওভারে লিটন দাসকে সাজঘরে ফেরান জিম্বাবুয়ের পেসার কাইল জারভিস। ইমরুল কায়েস রানের খাতা খুলতে পারেননি। আর লিটন দাস করেন ৯ রান।
কাইল জারভিসের বল ডিফেন্স করতে চেয়েছিলেন ইমরুল কায়েস। কিন্তু ঠিকমতো খেলতে পারেননি। বল গিয়ে জমা পড়ে উইকেটরক্ষক রেজিস চাকাভার হাতে। ইমরুল ফেরার পর বেশি সময় নেননি লিটন। ইনিংসের নবম ওভারে কাইল জারভিসের বলে ফ্লিক শট খেলতে গিয়ে মাভুতার হাতে ক্যাচ তুলে দেন তিনি।
অভিষেক টেস্ট খেলতে নামা মোহাম্মদ মিথুনও রানের খাতা খুলতে পারেননি। চার বল খেলে শূন্য রান করে প্যাভিলিয়নের পথ ধরেন। ইনিংসের ১২তম ওভারে ডোনাল্ড তিরিপানোর বলে ব্রেন্ডন টেইলরের হাতে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন মিথুন। বাংলাদেশের ক্রিকেটারদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি সংখ্যক প্রথম শ্রেণির ম্যাচ খেলে টেস্টে অভিষেক ম্যাচ খেলতে নেমেছেন মিথুন।
দলের তিন উইকেট পড়ে যাওয়ার পর মুমিনুল হকের সঙ্গে জুটি বাঁধেন মুশফিকুর রহিম। দুজনে সাবলিলভাবে ব্যাট করে দলকে এগিয়ে নিয়ে যান। দুজনেই সেঞ্চুরি করেন। ইনিংসের ৫৫তম ওভারে সিকান্দার রাজাকে বাউন্ডারি হাঁকিয়ে সেঞ্চুরি পূর্ণ করেন মুমিনুল হক। টেস্ট ক্যারিয়ারে এটি তার সপ্তম সেঞ্চুরি। টানা আট ইনিংস পর সেঞ্চুরির দেখা পেয়েছেন মুমিনুল। গত আট ইনিংসে তার সর্বোচ্চ স্কোর ছিল ৩৩। গত জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারিতে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে এক ম্যাচের দুই ইনিংসেই সেঞ্চুরি করেছিলেন মুমিনুল হক। কিন্তু তারপর থেকে ব্যর্থ ছিলেন তিনি। অবশেষে ব্যর্থতার বৃত্ত থেকে বেরিয়ে এলেন বাংলাদেশের ‘ডন ব্রাডম্যান’ খ্যাত এই ব্যাটসম্যান।
ইনিংসের ৭৬তম ওভারে সেঞ্চুরি পূর্ণ করেন মুশফিকুর রহিম। টেস্ট ক্যারিয়ারে এটি তার ষষ্ঠ সেঞ্চুরি। টেস্ট ক্রিকেটে দীর্ঘ ২৩ ইনিংস পর সেঞ্চুরির দেখা পেলেন মুশফিকুর রহিম। এর আগে সর্বশেষ তিনি সেঞ্চুরির দেখা পেয়েছিলেন ২০১৭ সালের ফেব্রুয়ারিতে, ভারতের বিপক্ষে। এরপর তিনি কয়েকটি ভালো ইনিংস খেলেছেন। সেঞ্চুরি না করলেও চারটি হাফ সেঞ্চুরি করেছেন। গত জানুয়ারিতে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ৯২ রানের একটি ইনিংস খেলেন তিনি।
টেস্টে বাংলাদেশি ক্রিকেটারদের মধ্যে চতুর্থ উইকেট জুটিতে সর্বোচ্চ রানের পার্টনারশিপের রেকর্ড গড়েছেন মুমিনুল হক ও মুশফিকুর রহিম। গতকাল চতুর্থ উইকেট জুটিতে ২৬৬ রান করেন তারা। এর আগে ১৮০ রানের জুটি গড়ে এই রেকর্ডের মালিক ছিলেন মুমিনুল হক ও লিটন দাস। গত জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারিতে চট্টগ্রামে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে এই রেকর্ড গড়েছিলেন তারা।
রবিবার তিন উইকেটেই দিন শেষ করতে পারতো বাংলাদেশ। কিন্তু শেষ বিকালে ইনিংসের ৮৬তম ওভারে টেন্ডাই সাতারার বলে ব্রায়ান চারির হাতে ধরা পড়েন মুমিনুল হক। এরপর নাইট ওয়াচম্যান হিসাবে নামানো হয় তাইজুল ইসলামকে। কিন্তু তিনিও আউট হয়ে যান। ৮৯তম ওভারে কাইল জারভিসের বলে উইকেটরক্ষকের হাতে ক্যাচ হন তিনি। অবশ্য প্রথমে আম্পায়ার তাইজুলকে আউট দেননি। পরে রিভিউ নিয়ে সফল হয় জিম্বাবুয়ে।
এই ম্যাচে একাদশে তিনটি পরিবর্তন নিয়ে খেলতে নেমেছে বাংলাদেশ। বাদ পড়েছেন নাজমুল হোসেন শান্ত, নাজমুল ইসলাম অপু ও আবু জায়েদ রাহি। একাদশে ঢুকেছেন মোহাম্মদ মিথুন, মোস্তাফিজুর রহমান ও সৈয়দ খালেদ আহমেদ। এই ম্যাচের মাধ্যমে টেস্ট ক্রিকেটে অভিষেক হলো উইকেটরক্ষক-ব্যাটসম্যান মোহাম্মদ মিথুন ও পেসার সৈয়দ খালেদ আহমেদের।
মিরপুর টেস্ট শুরুর আগে টেস্টে সর্বশেষ আট ইনিংসে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ স্কোর ছিল ১৬৯। এই ম্যাচে মাঠে নামার আগেও তাই দলের ব্যাটিং নিয়ে চিন্তা ছিল। শুরুটা যেভাবে হয়েছিল তাতে মনে হচ্ছিল হয়তো আগের চারটি ম্যাচের মতোই কিছু হচ্ছে। কিন্তু দলের নির্ভরযোগ্য দুই ব্যাটসম্যান তেমন কিছু হতে দেননি। প্রথম দিনই ৩০০ পেরিয়ে গেছে বাংলাদেশ। সিলেটে অনুষ্ঠিত সিরিজের প্রথম ম্যাচে বাংলাদেশ হেরেছিল ১৫১ রানে। তাই সিরিজ হার এড়াতে হলে এই ম্যাচে বাংলাদেশের জয়ের কোনো বিকল্প নেই।
সংক্ষিপ্ত স্কোর
বাংলাদেশ প্রথম ইনিংস: ৩০৩/৫* (৯০ ওভার)
(লিটন দাস ৯, ইমরুল কায়েস ০, মুমিনুল হক ১৬১, মোহাম্মদ মিথুন ০, মুশফিকুর রহিম ১১১*, তাইজুল ইসলাম ৪, মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ ০*; কাইল জারভিস ৩/৪৮, টেন্ডাই সাতারা ১/২৮, ডোনাল্ড তিরিপানো ১/৩৩, সিকান্দার রাজা ০/৬৩, শন উইলিয়ামস ০/৩১, ব্রান্ডন মাভুতা ০/৭৯, হ্যামিলটন মাসাকাদজা ০/৭)।