অর্থনৈতিক অগ্রযাত্রা অব্যাহত থাকুক

90

কোনো একটি দেশের অর্থনীতির গতি-প্রকৃতি অনেকাংশেই নির্ভর করে দেশটির শক্তিশালী ব্যাংকিং ব্যবস্থার ওপর। আমাদের মতো একটি বিকাশমান অর্থনীতিতে এই খাতের গুরুত্ব আরো বেশি। অথচ বাস্তব অবস্থা তার উল্টো। ভুয়া ঋণ, খেলাপি ঋণ, অনিয়ম, লুটপাট, সর্বোপরি রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ ব্যাংকগুলোকে নিঃশেষ করে দিচ্ছে।
জানা যায়, বিভিন্ন ব্যাংকের খেলাপি ঋণের প্রায় ৮৪ শতাংশই (৮৩.৯) মন্দ ঋণ। অর্থাৎ এসব ঋণ আদায়ের সম্ভাবনা খুবই কম। টাকার অঙ্কে এর পরিমাণ ৭৪ হাজার ৯৩০ কোটি টাকা। বাংলাদেশ ব্যাংকের আর্থিক স্থিতিশীলতা মূল্যায়ন একটি প্রতিবেদনে এমন তথ্য উঠে এসেছে। প্রতিবেদনে কোনো ব্যাংকের নাম উল্লেখ করা না হলেও ধারণা করা হয় যে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোতেই এমন ঋণের পরিমাণ সবচেয়ে বেশি।
গত জুন মাসের শেষে ব্যাংকগুলোতে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল ৮৯ হাজার ৩৪০ কোটি টাকা। গত ডিসেম্বরের তুলনায় এর পরিমাণ ১৫ হাজার ৩৭ কোটি টাকা বেশি। আর অবলোপন করা ঋণের পরিমাণ ধরা হলে খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়ায় এক লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা। অর্থাৎ খেলাপি ঋণ ও মন্দ ঋণের পরিমাণ ক্রমাগত বাড়ছে। দেশের ব্যাংকিং খাতের বিশ্লেষকদের পাশাপাশি আন্তর্জাতিক অনেক সংস্থাও বাংলাদেশের ব্যাংকিং খাতের দুর্বলতাগুলো কাটিয়ে ওঠার জন্য অনবরত তাগিদ দিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু দুর্বলতা কাটছে না, বরং বেড়ে যাচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক আন্তর্জাতিক আর্থিক কর্মকাণ্ড পর্যালোচনাকারী সংস্থা ফিচ রেটিংসের মূল্যায়ন অনুযায়ী, বাংলাদেশের ব্যাংকিং খাত অতিমাত্রায় ঝুঁকিপূর্ণ। ফিচ রেটিংসে ‘ট্রিপল এ’ থেকে ‘ডি’ পর্যন্ত ১১টি ধাপ রয়েছে। এর মধ্যে বাংলাদেশের ব্যাংকিং খাত রয়েছে পঞ্চম ধাপে, যা খুবই ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থা বোঝায়। প্রতিবেদনে আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছে, এখনই উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া না হলে পরিস্থিতি আরো খারাপের দিকে যেতে পারে।
শুধু খেলাপি ঋণ নয়, আরো অনেক কারণেই বাংলাদেশে ব্যাংকিং খাতের অবস্থা দিন দিন খারাপই হচ্ছে। প্রয়োজনীয় কাগজপত্র ছাড়াই ঋণ দেওয়া হচ্ছে। ভুয়া ঋণগ্রহীতা বানিয়ে ব্যাংকের অর্থ লোপাট করা হচ্ছে। শুধু তা-ই নয়, গ্রাহকের অর্থ হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগও উঠছে। ঘটছে ক্রেডিট কার্ড জালিয়াতির ঘটনা। এসব কারণে ব্যাংকের ওপর মানুষের আস্থা কমে যাচ্ছে। অন্যদিকে অনিয়মজনিত লোকসান মোকাবেলা করতে ব্যাংকঋণের সুদহার অত্যন্ত উঁচুতে তুলে রেখেছে, যা নিয়ে প্রকৃত উদ্যোক্তারা বিপদগ্রস্ত হচ্ছেন। ব্যাংকের এমন দুর্বলতার কারণে সরকারের অনেক উন্নয়ন প্রচেষ্টা ও ভালো উদ্যোগও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। কৃষকদের সহায়তার জন্য সরকার অধিক হারে কৃষিঋণ বিতরণের যে উদ্যোগ নিয়েছিল, সরকারি পরিসংখ্যান বিবিএসের জরিপেই তার করুণ চিত্র উঠে আসে। প্রায় ৭০ শতাংশ কৃষক আবেদন করেও ঋণ পায়নি। ঋণ পেতে ব্যাংক কর্মকর্তাদের খুশি করতে হয়। দেশের বর্তমান অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখার স্বার্থেই ব্যাংকিং খাতের এসব দুর্বলতা দূর করতে হবে।