প্রিন্সিপাল হাবিবুর রহমানের জানাযায় লাখো মানুষের ঢল ॥ তাঁর আদর্শকে অনুসরণ করে বাতিলের বিরুদ্ধে সোচ্চার থাকতে হবে-সর্বস্তরের নেতৃবৃন্দ

117
বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের আমীর ও কাজিরবাজার মাদ্রাসার প্রিন্সিপাল আল্লামা হাবিবুর রহমানের জানাযা নামাজের একাংশ। ছবি- মো: করিম মিয়া
বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের আমীর ও কাজিরবাজার মাদ্রাসার প্রিন্সিপাল আল্লামা হাবিবুর রহমানের জানাযা নামাজের একাংশ। ছবি- মো: করিম মিয়া

স্টাফ রিপোর্টার :
লাখো মানুষের উপস্থিতিতে বরেণ্য আলেম, নাস্তিক মুরতাদ বিরোধী আন্দোলনের অন্যতম সিপাহীশালার বাতিলের আতংক বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের আমীর ও জামেয়া মাদানিয়া ইসলামিয়া কাজিরবাজার মাদরাসার প্রিন্সিপাল আল্লামা হাবিবুর রহমানের জানাযা সম্পন্ন হয়েছে। গতকাল শুক্রবার বিকেল সাড়ে ৩টায় সিলেট সরকারি আলিয়া মাদরাসা মাঠে তাঁর জানাযার নামাজ অনুষ্ঠিত হয়। জানাযায় ইমামতি করেন মরহুমের দ্বিতীয় ছেলে মাওলানা ইউসুফ। পরে প্রিন্সিপাল হাবিবুর রহমানকে তাঁর কর্মস্থল কাজিরবাজার মাদ্রাসা চত্বরে সমাহিত করা হয়।
জানাযার পূর্বে বরুণার পীর মাওলানা রশীদুর রহমান ফারুক, সিলেট সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী, সংসদ সদস্য ইয়াহইয়া চৌধুরী এহিয়া, সাবেক মেয়র ও মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি বদর উদ্দিন আহমদ কামরান, সাবেক পৌর চেয়ারম্যান বাবরুল হোসেন বাবুল, মরহুমের বড় ছেলে মাওলানা ছামিউর রহমান মুছা, জামেয়ার শায়খুল হাদীস মাওলানা শাহ মমশাদ আহমদসহ দেশের প্রখ্যাত আলেম উলামা বক্তব্য রাখেন।
প্রিন্সিপাল মাওলানা হাবীবের জানাযায় যোগ দিতে দুপুর থেকেই সিলেটের প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে লোকজন আলীয়া মাদ্রাসা মাঠে জড়ো হতে থাকেন। এক পর্যায়ে আলীয়া মাঠ লোকে লোকারণ্য হয়ে উঠে। মাঠে স্থান সংকুলান না হওয়ায় আশপাশ এলাকায় দাঁড়িয়ে লোকজন জানাযার নামাজে শরীক হন।
এ সময় তাঁর রুহের মাগফিরাত কামনা করে শোক সন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি গভীর সমবেদনা জ্ঞাপন জানিয়ে বক্তারা বলেন, প্রিন্সিপাল হাবিবুর রহমান ছিলেন একজন সংগ্রামী আলেমে দ্বীন। নাস্তিক-মুরতাদ ও বাতিলের বিরুদ্ধে তিনি ছিলেন এক আতংক। অনৈসলামিক যে কোন কার্যকলাপের বিরুদ্ধে তার ভূমিকা ছিল সোচ্চার ও নির্ভীক। বরেণ্য এ আলেম দ্বীনি শিক্ষা প্রচারে মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত অগ্রণী ভূমিকা পালন করে গেছেন। তার মৃত্যুতে ইসলামী আন্দোলনের যে ক্ষতি হয়েছে তা সহজে পূরণ হবার নয়।
গত বৃহস্পতিবার রাত ১২টা ১০ মিনিটে তিনি তার বাসভবনে অসুস্থ হয়ে পড়েন। এরপর তাকে নগরীর ইবনে সিনা হাসপাতালে নেয়া হলে চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন। তাঁর বয়স হয়েছিল ৬৯ বছর। মৃত্যুকালে তিনি স্ত্রী, ৪ ছেলে, ৩ মেয়েসহ অসংখ্য গুণগ্রাহী ও আত্মীয়-স্বজন রেখে গেছেন। প্রিন্সিপাল হাবীবুর রহমানের গ্রামের বাড়ি গোলাপগঞ্জ উপজেলার ফুলবাড়ি ইউনিয়নের ঘনশ্যাম গ্রামে। তার বাসা নগরীর ৭২ ঝেরঝেরিপাড়ায়।
কাজিরবাজার মাদ্রাসার শায়খুল হাদীস মাওলানা শাহ মমশাদ আহমদ জানান, প্রিন্সিপাল হাবীব হার্টের সমস্যা ও ডায়াবেটিসসহ বিভিন্ন রোগে ভুগছিলেন। ভারত চিকিৎসা নিয়ে ১৬ অক্টোবর তিনি দেশে ফেরেন। অবস্থার উন্নতি হওয়ায় গত বুধবার ও বৃহস্পতিবার তিনি যথারীতি মাদ্রাসায়ও আসা-যাওয়া করেন। বৃহস্পতিবার রাত ১২টায় তার শারীরিক অবস্থার অবস্থার অবনতি ঘটলে দ্রুত তাকে ইবনে সিনা হাসপাতালে নেয়া হয়। সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
বিভিন্ন মহলের শোক:
প্রিন্সিপাল আল্লামা হাবীবুর রহমানের মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছেন বিভিন্ন সংঘটন ও শ্রেণী পেশার মানুষ। গতকাল শুক্রবার গণমাধ্যমে পাঠানো পৃথক পৃথক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে শোক প্রকাশ করে তাঁর বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনা করে শোক সন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা প্রকাশ করা হয়।
মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী: শোক বার্তায় সিলেট সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী বলেছেন, মরহুম মাওলানা হাবীবুর রহমান ছিলেন সহীহ্ আক্বীদার পীর, একজন বিশ্ব বরেণ্য আলেমেদ্বীন, ইসলামী চিন্তাবিদ ও সাহসী মর্দে মুজাহিদ। তাঁর মৃত্যুতে মুসলিম জাতির অপূরণীয় ক্ষতি হয়েছে। সিলেটবাসী একজন ইসলামের সেবককে হারিয়েছে। এ ক্ষতি পূরণ হবার নয়।
সরওয়ার হোসেন : কানাডা আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ও দৈনিক শুভ প্রতিদিনের সম্পাদক ও প্রকাশক সরওয়ার হোসেন এক শোকবার্তায় বলেছেন, প্রিন্সিপাল হাবিুবর রহমানের মৃত্যুতে যে শূন্যতার সৃষ্টি হয়েছে তা সহজে পূরণ হওয়ার নয়। ইসলামের প্রসারে তার আপসহীন ভূমিকা জাতি কৃতজ্ঞচিত্তে স্মরণ করবে।
দক্ষিণ সুরমা প্রেসক্লাব : প্রিন্সিপাল হাবীবুর রহমানের মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছেন দক্ষিণ সুরমা প্রেসক্লাবের সভাপতি জাহাঙ্গীর আলম মুসিক ও সাধারণ সম্পাদক আশরাফুল ইসলাম ইমরান। শোকবার্তা প্রেসক্লাব নেতৃবৃন্দ বলেন, প্রিন্সিপাল হাবীবুর রহমান সিলেটের দাবী-দাওয়া আদায়ে ও ইসলামী আন্দোলনে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছেন। সিলেটের এই সিংহ পুরুষ দাবী আদায়ের আন্দোলন সংগ্রামে ছিলেন অকুতোভয়। দেশবিরোধী যেকোনো ষড়যন্ত্র মোকাবেলায় তাঁর ভূমিকা ছিল সাহসীপূর্ণ। ইসলামি শিক্ষা সম্প্রসারণে তার ভূমিকা ও অবদান চিরস্মরণীয়।
জালালাবাদ ইমাম ফাউন্ডেশন : শোক বার্তায় জালালাবাদ ইমাম ফাউন্ডেশন সিলেটের সভাপতি ক্বারী মাওলানা মতিউর রহমান ও সেক্রেটারি মাওলানা জামাল আহমদ বলেন- সর্বজন শ্রদ্ধেয় আলেমে দ্বীন মাওলানা হাবিবুর রহমানের মৃত্যুতে আমরা গভীরভাবে শোকাহত।
তাহফীজুল কুরআন শিক্ষা বোর্ড : শোক বার্তা তাহফীজুল কুরআন শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান শায়খ আব্দুস সালাম আল মাদানী ও সচিব হাফিজ মিফতাহুদ্দীন আহমদ মরহুমের মাগফেরাত কামনা করে বলেন- মাওলানা হাবিবুর রহমানের মৃত্যুতে সিলেটবাসী একজন আলেম অভিভাবককে হারালো। যা সহজে পূরণ হওয়ার নয়।
হাফিজ মাছুম আহমদ দুধরচকী : শোক বার্তায় তিনি মরহুমের বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা ও শোক সন্তপ্ত পরিবার-পরিজনের প্রতি গভীর সমবেদনা জ্ঞাপন করেন।
কাউন্সিলর উজ্জ্বল’র শোক : শোক বার্তায় সিলেট সিটি কর্পোরেশনের ১৮ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর এবি এম জিল্লুর রহমান উজ্জ্বল বলেন, মাওলানা হাবীবুর রহমান ছিলেন একজন বিশ্ব বরেণ্য আলেমেদ্বীন, ইসলামী চিন্তাবিদ ও সাহসী মর্দে মুজাহিদ। তাঁর মৃত্যুতে মুসলিম জাতির অপূরণীয় ক্ষতি হয়েছে, এ ক্ষতি পূরণ হবার নয়।
ইসলামী ঐক্যজোট জেলা ও মহানগর : বাংলাদেশ ইসলামী ঐক্যজোট সিলেট জেলা ও মহানগর শাখার যৌথ উদ্যোগে পূর্ব ঘোষিত এক সভা ১৯ অক্টোবর শুক্রবার বাদ জুমআ জেলা কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত হয়। সভায় প্রিন্সিপাল মাওলানা হাবিবুর রহমানের মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করে নেতৃবৃন্দরা শোকবার্তায় বলেন, প্রিন্সিপাল মাওলানা হাবিবুর রহমান দ্বীনি শিক্ষা প্রসারে আজীবন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে গেছেন। তিনি ইসলামী সমাজ বিপ্লবের লক্ষ্যে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছেন। তার মৃত্যুতে যে শুন্যতা হয়েছে এ শূন্যতা কখনও পূরণ হবার নয়।