জালিয়াতি ধরা পড়ায় ২ আইনজীবীকে শোকজ, ৮ জনের বিরুদ্ধে মামলা

22

স্টাফ রিপোর্টার :
সিলেটের আদালতে চলমান একটি স্বত্ব মামলার ভুয়া বাদী সাজিয়ে আদিবাসীদের জমি দখলের চেষ্টা চালানো হয়েছে। গতকাল সোমবার বিকেলে সিলেটের যুগ্ম জেলা জজ ২য় আদালতে এই জালিয়াতির বিষয়টি ধরা পড়ে। এই জালিয়াতির সাথে সিলেটের একাধিক আইনজীবী যুক্ত থাকারও অভিযোগ পাওয়া গেছে।
এ সময় বিচারক সাজেদুল করিম জালিয়াতির সাথে জড়িত থাকার অভিযোগে বিবাদী পক্ষের ২ আইনজীবী এডভোকেট আব্দুর রহমান ও এডভোকেট এনামুল করিম আজাদকে শোকজ করেন এবং আদালত ভুয়া ৬ জন বাদী ও এই মামলার ২ বিবাদীর বিরুদ্ধে হাকিম আদালতে প্রতারণা মামলা দায়ের করেন। এই বিবাদীদের মধ্যেও একজন আইনজীবী রয়েছেন।
জানা যায়, শহরতলীর শাহপরানের বুড়িবস্তি এলাকার বাসিন্দা এক চা শ্রমিক পরিবারের এক একর জায়গা নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ চলছে। বালুচর এলাকার ওই জমি রক্ষায় ২০১৪ সালে আদালতে মামলা করেন পরান মুড়া, কর্মী মুড়া, পদ্মাবতী মুড়া, রেবতী মুড়া ও সারদী মুড়া। স্থানীয় আবুল বশরের পুত্র এডভোকেট এনামুল হক ও সাইফুল হককে বিবাদী করে এই মামলা দায়ের করেন তারা।
মামলার বাদী পক্ষের আইনজীবী এডভোকেট ফজলুর রহমান শিপু জানান, এই মামলার বাদী পক্ষের সিনিয়র আইনজীবী বেদানন্দ ভট্টাচার্য দেশের বাইরে রয়েছেন। এই সুযোগে মামলার গত তারিখে খাদিম চা বাগানের ৬ জন শ্রমিককে এই মামলার বাদী সাজিয়ে আদালতে একটি জাল আপোষনামা পেশ করেন বিবাদী পক্ষের আইনজীবীরা। এই আপোসনামায় উল্লেখ করা হয়, বিরোধ থাকা জমি নিয়ে বাদী ও বিবাদী দুই পক্ষই নিজেদের মধ্যে আপোষ করে নিয়েছেন।
ফজলুর রহমান আরো জানান, জালিয়াতির বিষয়টি নজরে আসার পর সোমবার আমরা আদালতে মূল বাদীদের হাজির করে জালিয়াতির বিষয়ে একটি আবেদন করি। এসময় ভূয়া বাদী সাজা ৬ জনও আদালতে হাজির হন। আদালতে তারা স্বীকার করেন, একটি গোষ্ঠীর প্ররোচনায় অর্থের বিনিময়ে তারা এই মামলার বাদীপক্ষ সাজেন। এসময় মামলার বাদী দাবি করা মিন্টু মুড়া, সুনীল মুড়া, রন্টু মুড়া, প্রশান্তি মুড়া, সবিতা বাগচি ও যমুনা মাহালিকে আটকের নির্দেশ দেন আদালত। এই ৬ জনসহ মামলার বিবাদী এডভোকেট এনামুল হক ও সাইফুল হককে আসামী করে বিচারক সাজেদুল করিম নিজে বাদী হয়ে আদালতে প্রতারণা মামলার করা কথাও জানান।
এছাড়া প্রতারণা ও জালিয়াতির সাথে জড়িত থাকার অভিযোগে বিবাদী পক্ষের দুই আইনজীবী এডভোকেট আব্দুর রহমান, এডভোকেট এনামুল করিম আজাদকে মৌখিকভাবে শোকজ করেন আদালত।
ভূয়া বাদী সাজিয়ে জাল আপোসনামা তৈরির ব্যাপারে অভিযুক্ত আইনজীবী এডভোকেট আব্দুর রহমান বলেন, এটি বিচারাধীন বিষয়। আদালত ঠিক করবে কে ভুয়া আর কে ঠিক। আদালতের বাইরে এ নিয়ে মন্তব্য করা উচিত নয়। তাকে শোকজ করা প্রসঙ্গে এই আইনজীবী বলেন, শোকজের ঘটনা ঘটেনি। একটি আপোসনামা নিয়ে কিছু ঝামেলা হয়েছিল। এটা শেষ হয়েছে।
জানা যায়, দুই আইনজীবীদের বিরুদ্ধে জালিয়াতির অভিযোগ উঠার পর তাদের রক্ষায় ওই এজলাসে হাজির হন আইনজীবী নেতাসহ অনেকজন সিনিয়র আইনজীবী। তারা অভিযুক্ত আইনজীবীদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা না নেওয়ার জন্য আদালতে সুপারিশ করেন। এ অবস্থায় আদালত অভিযুক্ত দু’জনের বিরুদ্ধে কেন আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে না তা জানতে চেয়ে মৌখিকভাবে শোকজ করেন।
আইনজীবীদের বিরুদ্ধে এই প্রতারণা ও জালিয়াতিতে জড়িত থাকার অভিযোগ প্রসঙ্গে সিলেট জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি এডভোকেট মোহাম্মদ লালা বলেন, কেউ আইনজীবীদের কাছে এসে বাদী বা বিবাদী পক্ষ দাবি করলে আইনজীবীদের অনেকক্ষেত্রে তা যাছাই-বাছাইয়ের সুযোগ থাকে না। তারপরও আইনজীবীদের কেউ এ কাজে জড়িত কী না তা তদন্ত হওয়া প্রয়োজন। কেউই আইনের ঊর্ধ্বে নন।