ইয়াবা রোধে পদক্ষেপ জরুরী

38

দেশে মাদক, বিশেষ করে ইয়াবার বিস্তার ভয়ংকর রূপ ধারণ করেছিল। ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে মাদকের হাট বসত বলেও গণমাধ্যমে খবর এসেছে। গত ১৬ জুন থেকে শুরু হয়ে চলমান মাদকবিরোধী অভিযানের কারণে মাদকের প্রকাশ্য বেচাকেনা কিছুটা কমলেও এর বিস্তার এখনো ভয়াবহ পর্যায়েই রয়ে গেছে। গত সোমবার রাতেও ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের ফেনী অংশে ১০ হাজার ইয়াবাসহ একটি প্রাইভেট কার জব্দ করা হয়েছে এবং চারজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। প্রতিদিনই এ রকম অনেক চালান ও ক্রেতা-বিক্রেতাকে গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। তা সত্ত্বেও সারা দেশেই মাদকের অবৈধ কারবার চলছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, মাদকের এমন বিস্তার এক দিনে ঘটেনি। এর জন্য দায়ী দীর্ঘদিনের অবহেলা। পাশাপাশি রয়েছে মাদকবিরোধী আইনের দুর্বলতা, বিচারের দীর্ঘসূত্রতা এবং পুলিশসহ মাদক নিয়ন্ত্রণে দায়িত্বপ্রাপ্ত সংস্থাগুলোর কিছু সদস্যের অনৈতিক লোভ ও মাদক কারবারে সহায়তা করা। সরকার এবার আইন সংশোধন করে আরো কঠোর আইন প্রণয়নের উদ্যোগ নিয়েছে। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইন ২০১৮-এর খসড়া গত সোমবার মন্ত্রিসভার অনুমোদন পেয়েছে। এতে কারো কাছে ২০০ গ্রামের বেশি ইয়াবা পাওয়া গেলেই মৃত্যুদণ্ডের বিধান রাখা হয়েছে। অন্যান্য মাদকের ব্যাপারেও আইন অনেক কঠোর করা হয়েছে। কঠোর শাস্তির বিধান রয়েছে সংশ্লিষ্টদের জন্যও।
মাদকে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় দেশের তরুণসমাজ। পত্র-পত্রিকায় প্রকাশিত খবর থেকে জানা যায়, কিশোররাও ব্যাপক হারে এই মরণনেশায় জড়িয়ে পড়ছে। অনেক ক্ষেত্রে মাদক কারবারিরা কিশোরদের আসক্ত বানিয়ে মাদকের বাহক বানাচ্ছে। এতে সংশ্লিষ্ট পরিবারগুলোতে নেমে আসছে এক ভয়াবহ অন্ধকার। আর এভাবে কিশোর-তরুণরা মাদকাসক্ত হয়ে পড়লে দেশের সব উন্নয়ন প্রচেষ্টাও মুখ থুবড়ে পড়বে। তাই দেরিতে হলেও বর্তমান সরকার মাদকের বিরুদ্ধে বড় ধরনের অভিযানে নেমেছে। মাদক নিয়ন্ত্রণ আইন কঠোর ও যুগোপযোগী করার উদ্যোগ নিয়েছে। প্রচলিত আইনে অনেক অস্পষ্টতা ছিল। নতুন অনেক মাদক সম্পর্কে আইনে অস্পষ্টতা ছিল। কারো কাছে লাখ লাখ ইয়াবা পাওয়া গেলেও তাকে চরম শাস্তি দেওয়া যেত না। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, নতুন আইনে সেসব অস্পষ্টতা দূর হবে, পাশাপাশি মৃত্যুদণ্ডসহ কঠোর শাস্তির বিধান থাকায় মাদক কারবারি ও মাদকসেবীরা নিরুৎসাহ হবে। তবে শুধু আইন করলেই হবে না, আইনের যথাযথ বাস্তবায়নও নিশ্চিত করতে হবে। পাশাপাশি বিচারের দীর্ঘসূত্রতা দূর করতে হবে। পর্যাপ্ত ট্রাইব্যুনাল সৃষ্টির মাধ্যমে দ্রুত বিচারের ব্যবস্থা করতে হবে। যত দূর জানা যায়, বাংলাদেশে ব্যবহৃত মাদকের বেশির ভাগই আসে বাইরে থেকে বিভিন্ন সীমান্ত দিয়ে। এ জন্য সীমান্ত নিয়ন্ত্রণ করাও অত্যন্ত জরুরি। পুলিশের বিরুদ্ধে মাদক কারবারিদের সঙ্গে যোগসাজশের যে অভিযোগ রয়েছে, সে ব্যাপারে আরো কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে।
নতুন আইনের আরেকটি ভালো দিক হলো মাদক কারবারিদের পাশাপাশি তাদের পৃষ্ঠপোষক, গডফাদারদের জন্যও সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ডের বিধান রাখা। আইনটি এখন দ্রুত জাতীয় সংসদে অনুমোদন ও কার্যকর করতে হবে। আমরা চাই দেশে মাদকের বিস্তার দ্রুত শূন্যের কোঠায় নেমে আসুক।