আজ সেমিতে ফিলিস্তিনের মুখোমুখি বাংলাদেশ

31

স্পোর্টস ডেস্ক :
এই নশ্বর পৃথিবীতে অনেক রহস্যময় ব্যাপার ঘটে যেগুলোর কোন ব্যাখ্যা পাওয়া যায় না। বিশ্বের সবচেয়ে জনপ্রিয় খেলা হচ্ছে ফুটবল। চর্মগোলকের এই খেলাটিতেও এ রকম কিছু ঘটে থাকে। ‘অঘটন’, ‘অস্বাভাবিক’ ও ‘ব্যতিক্রম’ বলে তিনটি শব্দ আছে। ফুটবলের সঙ্গে এই শব্দগুলো খুবই খাপ খায়। নইলে খেলাটা হয়ে যেত নীরস, প্রাণহীন বা উত্তেজনা বিবর্জিত।
বাংলাদেশ জাতীয় ফুটবল দলেরও সামনেও আজ তেমনি এক অঘটন ঘটানোর সুবর্ণ সুযোগ উপস্থিত হয়েছে। বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপ আন্তর্জাতিক ফুটবল প্রতিযোগিতার দ্বিতীয় সেমিফাইনালে তারা আজ মোকাবেলা করবে নিজেদের চেয়ে র‌্যাঙ্কিংয়ে ৯৩ ধাপ এগিয়ে থাকা মধ্যপ্রাচ্যের দেশ শক্তিশালী-ফেবারিট ফিলিস্তিনের। কক্সবাজারের বীরশ্রেষ্ঠ রুহুল আমিন স্টেডিয়ামে দুপুর আড়াইটায় ম্যাচটি যখন শুরু হবে তখন মাঠে ও মাঠের বাইরের অগুণিত বাংলাদেশী ফুটবলপ্রেমীর কায়মোনবাক্যে স্রষ্টার কাছে প্রার্থনা করবেন, আন্ডারডগ লাল-সবুজবাহিনী যেন সত্যিই অঘটনটা ঘটাতে পারে ফেবারিট ফিলিস্তিনকে হারিয়ে।
বাংলাদেশ যদি সত্যিই ব্যাপারটা ঘটিয়ে ফেলতে পারে তাহলে তার মূল কৃতিত্ব কাকে দিতে হবে জানেন? বৃষ্টিভেজা পিচ্ছিল মাঠকে। কেননা উষ্ণ আবহাওয়ার দেশ ফিলিস্তিন সবসময়ই গরম ও শুকনো মাঠে গতিশীল ফুটবল খেলতে অভ্যস্ত। এরকম ভেজা-পিচ্ছিল মাঠে খেলা তাদের খুব একটা অভ্যাস নেই।
অথচ দু’দিন আগেও এখানকার আবহাওয়া ছিল সিলেটের মতোই শুকনো, উষ্ণ। এ জন্য বাংলাদেশ বাদে সেমিফাইনালিস্ট বাকি তিন অতিথি দলই ভীষণ চিন্তিত ছিল। যদিও ফিলিস্তিন উষ্ণ অঞ্চলের দেশ, তারপরও তারা ভয় পাচ্ছিল এখানকার অতিরিক্ত আর্দ্রতা নিয়ে। প্রথম সেমির ম্যাচের আগে থেকেই ভোজবাজির মতো বদলে যায় দৃশ্যপট। আর্দ্রতা যায় কমে। আকাশে জমে নিকষ কালো মেঘ। শুরু হয় অবিরাম বর্ষণ। ফলে তাপমাত্রা অনেক কমে যায়। সবই বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট নিম্নচাপের প্রভাবে।
এটা স্থানীয় জনগণ বা পর্যটকদের জন্য স্বস্তির হলেও অস্বস্তির কারণ হয়ে দাঁড়ায় অতিথি দলগুলোর জন্য। বিশেষ করে ফিলিস্তিনের জন্য। যারা আজ সেমিতে মোকাবেলা করবে স্বাগতিক বাংলাদেশকে।
বৃষ্টির ধারা অব্যাহত থাকলে বা রোদ না উঠলে আজ সেটা পোয়াবারো হতে পারে স্বাগতিক বাংলাদেশ দলের জন্য। বৃষ্টিভেজা ও কাদাময় মাঠের কন্ডিশনকে কাজে লাগিয়ে তারা যদি অঘটন ঘটিয়ে ফেলে তাহলে আশ্চর্য হবার কিছু নেই। কেননা শক্তির বিচারে ফিলিস্তিন বাংলাদেশের চেয়ে অনেক এগিয়ে। হেড টু হেডেও পিছিয়ে লাল-সবুজরা। এ পর্যন্ত দু’দল পরস্পরের মোকাবেলা করেছে তিনবার। ২টিতে জিতেছে ফিলিস্তিন। বাকি ম্যাচটি ড্র হয়। এ জন্য অনেকেই বলছেন এই ম্যাচটি হচ্ছে ‘অসম শক্তির লড়াই।
এদিকে বুকের ব্যথা ভাল হওয়ায় পূর্ণ সুস্থ হয়েই হাসপাতাল ছেড়েছেন বাংলাদেশ কোচ জেমি ডে। তিনি ইতোমধ্যেই যোগ দিয়েছেন দলের সঙ্গে। সুস্থ হওয়ায় নিজের শিষ্যদের অনুশীলনও করিয়েছেন। সেমিফাইনালের আগে সোমবার চার দলের সংবাদ সম্মেলন হয়। ফিলিপিন্স, তাজিকিস্তান ও ফিলিস্তিন কোচ সংবাদ সম্মেলনে আসলেও বাংলাদেশ কোচ জেমি ছিলেন অনুপস্থিত। সবাই ভেবেছিল অনুশীলনে দলের সঙ্গে আছেন তিনি।
কিন্তু বাংলাদেশের অনুশীলনে আসার পর জানা যায় ঘটনা সম্পূর্ণ ভিন্ন। বুকে তীব্র ব্যথা নিয়ে কক্সবাজার সদর হাসপাতালে ভর্তি হন জেমি। পুরোপুরি সুস্থ অনুভব করলে মঙ্গলবার দুপুর ১২টায় হাসপাতাল ছেড়ে টিম হোটেলে ফিরে যান জেমি।
ফিলিস্তিন বাংলাদেশকে নিয়ে চিন্তিত না। চিন্তিত বৃষ্টিভেজা পিচ্ছিল মাঠকে। আর এই কন্ডিশনই অঘটন ঘটিয়ে জেতার জন্য ভরসা জোগাচ্ছে বাংলাদেশকে। পারবে কি তারা আজ? সেটাই এখন দেখার বিষয়।