সুনামগঞ্জ হাসপাতালে রোগীর মৃত্যুর ঘটনায় উত্তেজনা

44

আল-হেলাল সুনামগঞ্জ থেকে :
কর্তব্যরত চিকিৎসক ও নার্সদের অবহেলায় জেলা সদর হাসপাতালে সোহেল মিয়া (৩৫) নামের এক ডায়রিয়া রোগীর মৃত্যু হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। রোগীর আত্মীয় স্বজনদের আর্ত চিৎকার ও উত্তেজনায় হাসপাতালে ভোরবেলা থেকেই পুলিশ মোতায়েন করা হয়।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার সুরমা ইউনিয়নের পূর্ব সদরগড় গ্রামের বর্তমান বাসিন্দা সোহেল মিয়া (৩৫) নামের এক যুবককে আশঙ্কাজনক অবস্থায় শুক্রবার ভোর রাত ৩ টায় জেলা সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। জরুরী বিভাগের কর্তব্যরত চিকিৎসক ঐ রোগীকে সাড়ে ৩টায় জেলা সদর হাসপাতালের ডায়রিয়া ওয়ার্ডে ভর্তি করেন। সেখানে দায়িত্বরত নার্সরা কলেরা রোগের একটি স্যালাইন রোগীর শরীরে পুশ করার সময় ৩টা ৪০ মিনিটে ঐ রোগী মারা যায়। সাথে সাথে রোগীর আত্মীয় স্বজনরা চিকিৎসক ও নার্সদের দায়িত্বে অবহেলার অভিযোগ এনে চেঁচামেচি হুরস্থুল ও আর্ত চিৎকার শুরু করেন। সোহেল মিয়ার মৃত্যু সংবাদে ইব্রাহিমপুর ও সদরগড় গ্রামের লোকজন ভোর শেষ হতে না হতেই জেলা সদর হাসপাতালে ছুটে আসেন। আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির আশঙ্কায় ডাক্তারদের পক্ষ থেকে হাসপাতাল মোড়ে পুলিশ মোতায়েন করা হয়। জরুরী বিভাগে দায়িত্ব পালনকারী সংশ্লিষ্ট ডাক্তার শাখাওয়াৎ জাহান, সিনিয়র স্টাফ নার্স শাহ মোঃ ইব্রাহিম ও হামিদুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, রোগী আসা মাত্র আমরা তাকে ডায়রিয়া ওয়ার্ডে পাটিয়ে দেই। আমাদের কোন গাফিলতি নেই। নার্স মোছাঃ মর্জিনা খাতুন ও রীমা আক্তার বলেন, আমরা স্যালাইন লাগানোর সাথে সাথেই রোগী মারা যায়। আমরা রোগীকে আমাদের কাছে পাওয়া মাত্র স্যালাইন দেওয়া শুরু করি। কোন গাফিলতির আশ্রয় নেইনি। তবে কেন মারা গেল জানতে চাইলে নার্স ও ডাক্তার বলেন, রোগীকে যথাসময়ে না এনে শেষ মুহূর্তে হাসপাতালে আনাই মৃত্যুর কারণ। ডায়রিয়া রোগে মানুষ মারা যাওয়ার কথা নয়, কিন্তু তারা রোগীকে যথাসময়ে হাসপাতালে নিয়ে আসেননি বা এর আগে একটি স্যালাইন খাওয়ানোর প্রয়োজন মনে করেননি। রোগীর পরিবারের অসচেতনতাই এই মৃত্যুর কারণ। রোগীর আত্মীয় আলী হোসেন বলেন, আমরা রোগীকে হাসপাতালে এনে ডাক্তার ও নার্সদের খোজ নিতে নিতেই অনেক সময় পার হয়ে গেছে। জরুরী বিভাগের ও ডায়রিয়া ওয়ার্ডের রেকর্ড অনুযায়ী রাত ৩.১৫টায় আমাদের রোগীকে জরুরী বিভাগে এবং ৩.৩০টায় ডায়রিয়া ওয়ার্ডে ভর্তি দেখানো হয়। রোগী মারা যায় ৩.৪০টায়। এ থেকে প্রমাণিত হয় ২৫ মিনিটে জরুরী বিভাগ ও ডায়রিয়া ওয়ার্ডের দৌরাত্মের কারণে ২৫ মিনিটের ব্যবধানে আমাদের রোগীর করুণ মৃত্যু হয়েছে। এর জন্য কর্তব্যরত ডাক্তার ও নার্সরা আসলেই দায়ী। ঘটনার ব্যাপারে জানতে চাইলে জেলা সিভিল সার্জন ডাঃ আশুতোষ দাশ বলেন, ডিজিটাল যুগে ডায়রিয়া রোগে মানুষ মারা যাওয়াটা আসলেই দু:খজনক। হয়তো পাতলা পায়খানার সময়ে ঐ রোগীকে দুএকটি খাবার স্যালাইন খাওয়ালে তাকে অসময়ে মরতে হত না। তবে চিকিৎসক বা নার্সদের কোন গাফিলতি থাকলে সেটা অবশ্যই তদন্তপূর্বক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।