সিনহার আর্থিক অনিয়ম ও জালিয়াতির প্রমাণ মিলেছে – দুদক

36

কাজিরবাজার ডেস্ক :
সাবেক প্রধান বিচারপতি এসকে সিনহার সোনালী ব্যাংকের সুপ্রিমকোর্ট শাখার অ্যাকাউন্টে চার কোটি টাকা লেনদেনের অনিয়ম ও জালিয়াতির প্রমাণ পেয়েছে দুদক। ফারমার্স ব্যংকের দু’টি অ্যাকাউন্ট থেকে তার (সিনহা) অ্যাকাউন্টে এই টাকা জমা হয়।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ সুনির্দিষ্টভাবে কারও নাম উল্লেখ না করে বৃহস্পতিবার সাংবাদিকদের বলেন, এ ঘটনায় অনেকের সংশ্লিষ্টতা রয়েছে।
বৃহস্পতিবার বিকালে দুদক কার্যালয়ে সাংবাদিকদের আরও জানান, তদন্তের প্রয়োজনে এসকে সিনহাকে অনুসন্ধানকারী কর্মকর্তারা আমেরিকা গিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করবেন।
দুদক চেয়ারম্যান বলেন, ‘ফারমার্স ব্যাংকের দুটি অ্যাকাউন্ট থেকে চার কোটি টাকা ঋণের ব্যাপারে আমরা তদন্ত করেছি। তদন্ত শেষ হয়ে গেছে। ঋণ প্রক্রিয়ায় জালিয়াতির আশ্রয় নেয়া হয়েছে। সেখানে অনেকেরই সংশ্লিষ্টতা পাওয়া গেছে। আমরা সেগুলো বিচার বিশ্লেষণ করছি।’
সাবেক প্রধান বিচারপতি এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত কিনা- এমন প্রশ্নে দুদক চেয়ারম্যান বলেন, ‘গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি থাকুক আর যে-ই থাকুক, যাদের সংশ্লিষ্টতা পাওয়া গেছে বা যাবে, তাদের বিরুদ্ধেই আমরা ব্যবস্থা নেব। ’ তবে এ ব্যাপারে সুনির্দিষ্টভাবে কোনও ব্যক্তির নাম বলতে রাজি হননি তিনি।
ইকবাল মাহমুদ বলেন, ‘দুটি অ্যাকাউন্ট থেকে ঋণ প্রক্রিয়া এবং এই টাকা মানিলন্ডারিং বা বিভিন্ন জায়গায় যাওয়া, নগদ উত্তোলন এসব বিষয়ে অনেক কিছু এসেছে।’
দুদকের পরবর্তী পদক্ষেপ সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘যা হয়, তা-ই হবে। যদি অভিযোগের প্রমাণ পাওয়া যায়, তাহলে আইন অনুযায়ী মামলা করা হবে।’
ফারমার্স ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ও প্রধান নির্বাহী আবুল খায়ের মোহাম্মদ শামীমসহ (একেএম শামীম) ৭ জন ব্যাংক কর্মকর্তাসহ ৯ জনকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে দুদক। এর মধ্যে দুজন ব্যবসায়ীও রয়েছেন।
যারা অনিয়মের মাধ্যমে ফারমার্স ব্যাংক থেকে ২ কোটি টাকা করে ৪ কোটি টাকা ঋণ নিয়ে এসকে সিনহার ব্যাংক অ্যাকাউন্টে দিয়েছেন। অনুসন্ধানের অংশ হিসেবে ব্যাংকের ৭ কর্মকর্তার দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে দুদক।
ব্যাংকের সাবেক এমডি একেএম শামীম ছাড়া অপর যে ৬ কর্মকর্তার ওপর দেশ ত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়েছে তারা হলেন- ফার্মার্স ব্যাংকের ফাস্ট ভাইস প্রেসিডেন্ট স্বপন কুমার রায়, এক্সিকিউটিভ অফিসার উম্মে সালমা সুলতানা, এসিস্ট্যান্ট ভাইস প্রেসিডেন্ট শফিউদ্দিন আসকারী আহমেদ, ম্যানেজার (অপারেশন) ও ভাইস প্রেসিডেন্ট মো. লুতফুল হক এবং সাবেক হেড অব বিজনেস, সিনিয়র এক্সিকিউটিভ ভাইস প্রেসিডেন্ট গাজী সালাউদ্দিন ও গুলশান শাখার সাবেক ম্যানেজার ও এসভিপি জিয়াউদ্দিন আহমেদ।
এদিকে, দুদকের একটি সূত্রে জানা গেছে, ফারমার্স ব্যাংক থেকে ৪ কোটি টাকা ঋণ নিয়ে সিনহার অ্যাকাউন্টে স্থানান্তরের ঘটনা অনুসন্ধানে ১০ থেকে ১২ জনের সম্পৃক্ততা পাওয়া গেছে। তাদের মধ্যে এসকে সিনহার নামও রয়েছে বলে জানা গেছে।
এ ছাড়া বেশ কয়েকজন ব্যাংক কর্মকর্তার সম্পৃক্ততা নিশ্চিত হওয়া গেছে। পাশাপাশি ওই আলোচিত দুই ব্যবসায়ী মো. শাহজাহান ও নিরঞ্জন চন্দ্র সাহাও আছেন দুদকের অনুসন্ধানের আওতায়।
তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ হচ্ছে, তাদের দু’জনের নামে ব্যাংক হিসাব খুলেই ফারমার্স ব্যাংক থেকে ২ কোটি টাকা করে ৪ কোটি টাকা বের করে সেই টাকা এসকে সিনহার ব্যাংক হিসাবে পে-অর্ডরের মাধ্যমে স্থানান্তর করা হয়েছে।