আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে \ দলীয় প্রার্থী চূড়ান্ত সহ ৭টি কাজে ব্যস্ত আওয়ামী লীগ

47

কাজিরবাজার ডেস্ক :
আগামী নির্বাচন সামনে রেখে গুরুত্বপূর্ণ সাতটি কাজে ব্যস্ত ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ। নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগেই কাজগুলো সেরে ফেলতে চায় দলটি। দলীয় প্রার্থী চূড়ান্ত, তৃণমূলের বিরোধ নিষ্পত্তি, আসনভিত্তিক কমিটি গঠন, নির্বাচন ও সরকারের উন্নয়ন প্রচার, দলীয় ইশতেহার তৈরি, ভোটকেন্দ্র ভিত্তিক কমিটি গঠন এবং নির্বাচনী জোট-মহাজোটের সঙ্গে আসন সমঝোতা। গুরুত্বপূর্ণ এই সাতটি কাজ দ্রুত নিষ্পত্তি করতে ব্যস্ত সময় পার করছেন ক্ষমতাসীন দলটির হাইকমান্ড। এই সাতটি কাজকে সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়ে টানা তৃতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় যাওয়ার কর্মকৌশল চূড়ান্ত করছেন দলটির নীতিনির্ধারকরা। ইতোমধ্যে জাতীয়-আন্তর্জাতিক জরিপের মাধ্যমে দলীয় প্রার্থী তালিকা প্রায় চূড়ান্ত করে ফেলেছে দলটি। চলছে এখন শেষ পর্যায়ের জরিপ। আর এই মাঠ জরিপকে সামনে রেখেই দলীয় প্রার্থী তালিকা চূড়ান্ত করে গ্রিণ সিগন্যাল দিয়ে ইতোমধ্যে দলীয় প্রার্থীদের নির্বাচনী মাঠে ঝাঁপিয়ে পড়ার নির্দেশও দেয়া হচ্ছে কেন্দ্রীয় হাইকমান্ড থেকে। দলটির একাধিক সূত্র জানায়, একাদশ জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে সবচেয়ে গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে দলের ঐক্যের ওপর। দলীয় মনোনয়ন নিয়ে যেসব আসনে কিংবা জেলায় দলের মধ্যে কোন্দল-দ্ব›দ্ব রয়েছে সেসব আসনের নেতাদের ঢাকায় তলব করে বিরোধ মেটানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুর কাদেরসহ দায়িত্বপ্রাপ্ত কেন্দ্রীয় নেতারা রাজশাহী, বরগুনা, পিরোজপুরসহ কয়েকটি বিরোধপূর্ণ জেলার নেতাদের ঢাকায় তলব করে বিরোধী মেটানোর চেষ্টা করা হয়েছে। কিছু জেলার নেতা এমপিকে গণভবনে ডেকে এনে তাঁদের সঙ্গে কথা বলেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজেও।
এছাড়া ক্ষমতাসীন দল হিসেবে পুরোদমে নির্বাচনী প্রচারের কাজও শুরু করতে যাচ্ছে আওয়ামী লীগ। ইতোমধ্যে সারাদেশে দলকে চাঙ্গা এবং দেশজুড়ে নির্বাচনী জোয়ার তুলতে ওবায়দুল কাদেরের নেতৃত্বে দলটির কেন্দ্রীয় নেতারা গত ৮ ও ৯ সেপ্টেম্বর ঢাকা থেকে উত্তরাঞ্চলে ট্রেন সফর এবং ২২ সেপ্টেম্বর থেকে তিন দিনব্যাপী ঢাকা থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত রোড মার্চ করেছে। আগামী কয়েকদিনের মধ্যে ঢাকা থেকে দক্ষিণাঞ্চলে লঞ্চ মার্চ শুরু হবে বলে জানা গেছে। এছাড়া ১ অক্টোবর থেকে দেশজুড়ে সপ্তাহব্যাপী নির্বাচনী প্রচার ও গণসংযোগ কর্মসূচী শুরু করেছে দলটি। প্রথম দুই দিনেই সারাদেশে নির্বাচনী গণজোয়ার তুলতেও সক্ষম হয়েছে দলটি। এসব নির্বাচনী সফরের মাধ্যমে দলের নেতাকর্মীদের চাঙ্গা, নির্বাচনীমুখী করা এবং মনোনয়ন নিয়ে সৃষ্ট বিভেদ নিষ্পত্তির চেষ্টাসহ জনগণের কাছে টানা সাড়ে ৯ বছরের সরকারের উন্নয়ন-সফলতাগুলো তুলে ধরে নৌকার পক্ষে ভোট চাইছেন দায়িত্বপ্রাপ্ত কেন্দ্রীয় নেতারা।
গত ২২ সেপ্টেম্বর শনিবার রাতে আওয়ামী লীগ নির্বাচনী পরিচালনা কমিটির প্রথম সভা অনুষ্ঠিত হয়। ওই সভাতেই টানা তৃতীয়বারের মতো জনগণের ভোটে বিজয়ী হতে বেশ কিছু কর্মকৌশল চূড়ান্ত করা হয়। সভায় আসনভিত্তিক মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের সব শক্তির সমন্বয়ে শক্তিশালী নির্বাচন পরিচালনা কমিটি গঠনের সিদ্ধান্ত হয়। কেন্দ্রের এই সিদ্ধান্ত তৃণমূলের নেতাদের ইতোমধ্যেই চিঠির মাধ্যমে জানিয়ে দেয়া হয়েছে। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ইতোমধ্যে জেলা-উপজেলা এবং দলের এমপিরা আসনভিত্তিক নির্বাচন পরিচালনা কমিটি গঠনের পাশাপাশি ভোট কেন্দ্রভিত্তিক আলাদা কমিটি গঠনের কাজও শুরু করে দিয়েছেন। বিভাগীয় দায়িত্বপ্রাপ্ত যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও সাংগঠনিক সম্পাদকরা এতে সমন্বয়কের দায়িত্ব পালন করছেন এবং প্রয়োজনীয় দিক-নির্দেশনা দিচ্ছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, তরুণ ও নারী ভোটারদের কাছে টানতে দলের নির্বাচনী ইশতেহার প্রণয়নেরও কাজ চলছে বেশ জোরেশোরেই। আওয়ামী লীগের এই নির্বাচনী ইশতেহারেও বেশ কিছু চমক থাকবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। দেশের খ্যাতনামা কিছু বুদ্ধিজীবী, আমলা, আইনজ্ঞ ও প্রবীণ রাজনীতিকদের সমন্বয়ে গঠিত একটি শক্তিশালী কমিটি অনেকটা গোপনেই ইশতেহার প্রণয়নের কাজ এগিয়ে নিচ্ছেন। যেটির সার্বিক মনিটরিং করছেন স্বয়ং দলের প্রধান শেখ হাসিনা।
অন্যদিকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সার্বিক তত্ত¡াবধানে তাঁর বিশ্বস্ত দলের কিছু নেতা ও সংসদীয় নির্বাচনী বোর্ডের সদস্যরা আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে দলের মনোনয়ন চূড়ান্ত করছেন। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক স্বনামধন্য কয়েকটি সংস্থার মাধ্যমে পরিচালিত কয়েক দফা জরিপ এবং দলের নিজস্ব মাঠ পর্যায়ের জরিপ বিশ্লেষণ করে জনপ্রিয়তা, দলের প্রতি একাগ্রতা, আদর্শিক ভিত্তি, সব মহলের কাছে গ্রহণযোগ্য নেতারা উঠে আসছেন দলের চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকায়। জানা গেছে, এবার ভিন্ন কৌশলে প্রার্থী ঘোষণা করবে আওয়ামী লীগ। মনোনয়নকে ঘিরে যাতে করে আগে থেকেই নির্বাচনী এলাকায় দলের মধ্যে বিভেদ-দ্ব›দ্ব সৃষ্টি না হয়, প্রধান রাজনৈতিক প্রতিপক্ষরা যাতে আগে থেকেই মনোনয়ন তালিকা দেখে নিজেদের প্রার্থিতা চূড়ান্ত করতে না পারে, সেজন্য এবার নির্বাচনের ঠিক আগ মুহূর্তে দলের চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকা ঘোষণা করবে দলটি। তবে এর আগে চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকায় নাম উঠে আসা নেতাদের কেন্দ্র থেকে আগেই গ্রিন সিগন্যাল দিয়ে নির্বাচনী মাঠে নামানো হবে। ইতোমধ্যে প্রায় শতাধিক দলের প্রার্থীকে সবুজ সঙ্কেত দিয়ে নির্বাচনী মাঠে নামানো হয়েছে।
দলটির নির্ভরযোগ্য একাধিক সূত্র থেকে জানা গেছে, আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে দলীয় প্রার্থিতা চূড়ান্ত করার ক্ষেত্রে এবার ভিন্ন কৌশল গ্রহণ করেছে আওয়ামী লীগ। বিএনপি নির্বাচনে আসবে এটি ধরে নিয়েই মহাজোটগতভাবে নির্বাচনের কথাটি মাথায় রেখে তিনশ’ আসনেই সর্বশেষ জরিপের মাধ্যমে প্রার্থী তালিকা করছে দলটির হাইকমান্ড। আর শেষ পর্যন্ত বিএনপি নির্বাচনে না আসলে ১৪ দলীয় জোটগতভাবে নির্বাচনে যাবে আওয়ামী লীগ। সেক্ষেত্রে মহাজোটে থাকা জাতীয় পার্টিসহ অন্যান্য রাজনৈতিক দল সমন্বয়ে একটি বৃহত্তর জোট আলাদাভাবে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে পারে।
অন্যদিকে বিএনপির জোটের বিপরীতে আওয়ামী লীগেও মুক্তিযুদ্ধের সবপক্ষকে নিয়ে আরেকটি বৃহত্তর জোট গঠনের প্রক্রিয়াও এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে আওয়ামী লীগ। হাইকমান্ডের নির্দেশে ইতোমধ্যে দলটির সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বামপন্থীসহ কয়েকটি সমমনা রাজনৈতিক দলের নেতাদের সঙ্গে কথা বলেছেন। জোটগতভাবে নির্বাচনের জন্য এসব দলকে কাছে টানার চেষ্টা করছেন। এ কাজে দায়িত্বপ্রাপ্ত কয়েকজন নেতার মতে, আওয়ামী লীগের সঙ্গে জোট করতে কয়েকটি রাজনৈতিক দল আগ্রহ প্রকাশ করে আমাদের সঙ্গে কথা বলেছে। কিন্তু আদর্শিক জোটের কথা চিন্তা করে এদের মধ্যে কয়েকটি দলকে আনুষ্ঠানিকভাবে জোটে না নিলেও নির্বাচনী কর্মকান্ডে তাদের কিছুটা ছাড় দিয়ে পক্ষে আনার প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে।
এ প্রসঙ্গে মঙ্গলবার আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, আমরাও জাতীয় ঐক্য চাই। আমরা জাতীয় ঐক্য চাই সাম্প্রদায়িক অশুভ শক্তির বিরুদ্ধে। আমরা জাতীয় ঐক্য চাই স্বাধীনতার শত্রুদের বিরুদ্ধে, আমরা জাতীয় ঐক্য চাই মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের শক্তির সঙ্গে, আমরা জাতীয় ঐক্য চাই এদেশের জন্মের চেতনা, এই চেতনা নিয়েই আমরা জাতীয় ঐক্য চাই।