নানা কর্মসূচির মধ্যদিয়ে শুভ জন্মাষ্টমী পালিত ॥ সিলেট সম্প্রীতির নগরী এই সম্প্রীতি ধরে রাখতে হবে

160

সনাতন ধর্মের প্রাণপুরুষ ভগবান শ্রী শ্রী কৃষ্ণের পূত:আবির্ভাব স্মরণে রবিবার সিলেটে পালিত হয়েছে জন্মাষ্টমী উৎসব। সকাল ১০টায় নগর পরিক্রমার মধ্যদিয়ে দিনের কর্মসূচির উদ্বোধন করেন সিলেট সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী। বিশ্ব শান্তি ও মানবতার কল্যাণ কামনায় অনুষ্ঠিত নগর পরিক্রমার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী বলেন, সিলেট সম্প্রীতির নগরী। এই সম্প্রীতি রক্ষার দায়িত্ব নগরীর প্রত্যেক নাগরিকের। কারণ এই নগরী আমাদের। দুষ্টের দমন আর শিষ্টের পালনের লক্ষ্যে সনাতন ধর্মের প্রাণপুরুষ শ্রী কৃষ্ণের আবির্ভাব। এই দিনে বিশ্বশান্তি ও মানবতার কল্যাণ কামনা করছি। রজত কান্তি গুপ্তের পরিচালনায় এ সময় বক্তব্য রাখেন সিলেট মহানগর আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক আসাদ উদ্দিন, উদযাপন পরিষদের আহ্বায়ক প্রবীণ শিক্ষাবিদ অধ্যাপক বিজিত কুমার দে ও সদস্য সচিব নির্মল কুমার সিনহা।
সার্বজনীন জন্মাষ্টমী পরিষদের দিনব্যাপী কর্মসূচির মধ্যে ছিল সকাল সাড়ে ১০টায় ভগবান শ্রী কৃষ্ণ শীর্ষক ধর্মালোচনা সভা। বেলা ২টায় মহাপ্রসাদ বিতরণ, রাত সাড়ে ৮টায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও গীতি আলেখ্য, রাত সাড়ে ৯টায় সংগীত পরিবেশন করবেন প্রখ্যাত সংগীত শিল্পী অনিতা মুক্তি গোমেজ ও সহশিল্পীরা, রাত ১০ টায় শ্রী শ্রী কৃষ্ণের বিশেষ পূজানুষ্ঠান, অঞ্জলি প্রদান শেষে মহাপ্রসাদ বিতরণ। রাত ১২টা ১ মিনিটে ভগবান শ্রী শ্রী কৃষ্ণের আবির্ভাব স্মরণে উলুধ্বনি ও শঙ্খধ্বনি। নগরীর মণিপুরী রাজবাড়িস্থ শ্রী শ্রী লোকনাথ ব্রম্মচারী মন্দির ও আশ্রমে এসব কর্মসূচি পালিত হয়।
পরিষদের দুদিনব্যাপী আয়োজনের অংশ হিসাবে শনিবার সকাল সাড়ে ৮ টায় শ্রী হট্ট অখন্ডমন্ডলীর পরিচালনায় সমবেত উপাসনা, ১০ টায় শ্রীমা সারদা সংঘের পরিবেশনায় সমবেত গীতা পাঠ, সাড়ে ১১টায় নিম্বার্ক গীতা শিক্ষা কেন্দ্রের পরিবেশনায় সমবেত গীতা পাঠ, বেলা ২টায় শিশু কিশোরদের সমবেত গীতা পাঠ প্রতিযোগিতা, বিকেল ৪টায় শিশু কিশোরদের একক চিত্রাংকন প্রতিযোগিতা, বিকেল সাড়ে ৫টায় শিশু কিশোরদের একক কীর্তন প্রতিযোগিতা ও রাতে লোকনাথ ভক্তবৃন্দ পরিষদের সমবেত উপাসনা অনুষ্ঠিত হয়।
গোয়াইনঘাট থেকে সংবাদদাতা জানিয়েছেন : সারা দেশের ন্যায় গোয়াইনঘাট উপজেলার জাফলংয়ে যথাযোগ্য মর্যাদায় গীতাযজ্ঞ, প্রার্থনা, ঐতিহাসিক মিছিল আর ভাবগাম্ভীর্যের মধ্যদিয়ে হিন্দুধর্মের প্রবর্তক শ্রীকৃষ্ণের জন্মদিন উপলক্ষে ‘শুভ জন্মাষ্টমী’ উৎসব পালন করা হয়েছে। রবিবার সকালে দেশ ও জাতির মঙ্গল কামনায় সোনালী যুব সংঘের আয়োজনে জাফলং পাথর টিলা কালি মন্দিরে গীতাযজ্ঞের মধ্য দিয়ে এ উৎসব শুরু হয়। বেলা ১২ টায় পাথরটিলা কালি মন্দির থেকে শোভাযাত্রা বের হয়ে জাফলংয়ের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে।
এ সময় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পূর্ব জাফলং ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মুক্তিযোদ্ধা লুৎফুর রহমান লেবু। এ সময় অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন ইউ পি সদস্য আব্দুল কাদির, আতাউর রহমান খান আতাই, পূর্ব জাফলং যুবলীগের আহ্বায়ক কমিটির সদস্য রাশেদ পারভেজ লাবলু, শেরগুল গোসাই, প্রবীন মুরব্বি অনিল সিং, হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রীষ্টান ছাত্র-যুব ঐক্য পরিষদ জাফলং শাখার সভাপতি অংশু গোসাই রানা, কালি মন্দির পরিচালনা কমিটির সাধারণ সম্পাদক নিপেন্দ্র রায়, সহ সাংগঠনিক সম্পাদক সুনিল তুরি, বৃহত্তর মামার বাজার সমাজ কল্যাণ যুব সংঘের আহ্বায়ক কমিটির সদস্য অরুণ গোসাই, সোনালী যুব সংঘের সভাপতি লব গোয়ালা, সাংগঠনিক সম্পাদক নির্মল সিং, গিতা সংঘের সদস্য প্রজেশ তালুকদার প্রমুখ।
হিন্দু ধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্ট : পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণের শুভ আবির্ভার তিথি জন্মাষ্টমী মহোৎসব-২০১৮ উপলক্ষে হিন্দু ধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্ট সিলেটের আয়োজনে ও জেলা প্রশাসনের সার্বিক সহযোগিতায় আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
রবিবার সকাল ১১টায় সিলেট জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে এ আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।
মন্দির ভিত্তিক শিশু ও গণশিক্ষা কার্যক্রম হিন্দু ধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্ট সিলেট জেলার সহকারী প্রকল্প পরিচালক মিলন কুমার দাসের সভাপতিত্বে ও মাস্টার ট্রেইনার গোপাল চন্দ্র রায়ের পরিচালনায় প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন- অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) সন্দ্বীপ কুমার সিংহ।
পবিত্র গীতা পাঠের মধ্যে দিয়ে পরমশ্বের ভগবান শ্রীকৃষ্ণের শুভ জন্মাষ্টমী উপলক্ষে আলোচনা সভার অনুষ্ঠান শুরু হয়।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন- ইসকন সিলেটের অধ্যক্ষ নবদ্বীপ দ্বিজ গৌরাঙ্গ দাস ব্রহ্মচারী, প্রভু জগবন্ধু ধামের অধ্যক্ষ প্রীতম ব্রহ্মচারী, সিলেট জেলা প্রেসক্লাবের সভাপতি তাপস দাস পুরকায়স্থ, শ্রীহট্ট সংস্কৃত কলেজ অধ্যক্ষ দিলীপ কুমার দাস চৌধুরী, জেলা মুক্তিযোদ্ধা ইউনিট কমান্ডার সুব্রত চক্রবর্ত্তী জুয়েল, চৈতন্য গবেষনা কেন্দ্রের সাধারণ সম্পাদক প্রকৌশলী মনোজ বিকাশ দেবরায়, হিন্দু ধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্টের সাবেক ট্রাস্টি নীহার রঞ্জন দাস, এমসি কলেজের প্রভাষক (গণিত) সাগর চন্দ্র বিশ্বাস, শ্রীহট্ট সংস্কৃত কলেজের অধ্যাপক রাকেশ শর্ম্মা, এসআরএসসিপিএস’র প্রশিক্ষন কর্মকর্তা বিকাশ কুমার শীল, যীশু কুমার দাস, নকুল বর্মন, মোঃ আবুল হাছনাত প্রমুখ।
শ্রীকৃষ্ণ ভক্তবৃন্দ সম্মিলিত জন্মাষ্টমী উদযাপন পরিষদ : শ্রীকৃষ্ণ ভক্তবৃন্দ সম্মিলিত জন্মাষ্টমী উদযাপন পরিষদের আয়োজনে ২ সেপ্টেম্বর রবিবার মিরাবাজারস্থ বলরাম জিউর আখড়ায় অনুষ্ঠিত জন্মাষ্টমী ১৪২৫ বাংলা শোভাযাত্রা অনুষ্ঠিত হয়। শোভাযাত্রাটি নগরীর প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে পুণরায় বলরাম জিউর আখড়ায় মিলিত হয়। শোভাযাত্রা উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন, সিলেট সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী এবং উদ্বোধক ছিলেন, বাংলাদেশ হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রীষ্টান ঐক্য পরিষদ সিলেট জেলা শাখার সভাপতি বিরাজ মাধব চক্রবর্তী মানস, বিশেষ অতিথি ছিলেন, সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট প্রদীপ কুমার ভট্টাচার্য্য।
পরিষদের আহ্বায়ক অধ্যাপক অনিরুদ্ধ বিশ্বাসের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানটি যৌথভাবে পরিচালনা করেন কাশ্যপ কল্যাণ পরিষদের সাধারণ সম্পাদক জ্যোতি মোহন বিশ্বাস, সাংগঠনিক সম্পাদক অরুণ কুমার বিশ্বাস এবং সদস্য সচিব মহিম বিশ্বাস।
শোভাযাত্রা শেষে দ্বিতীয় অধিবেশনে পরিষদ কর্তৃক প্রকাশনা ‘সারথি’ এর মোড়ক উন্মোচন, গীতা কুইজ প্রতিযোগিতা, সম্মাননা স্মারক প্রদান ও আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন, বাংলাদেশ ব্যাংক সিলেটের মহাব্যবস্থাপক জীবন কৃষ্ণ রায়, বিশেষ অতিথি ছিলেন, সুসেন্দ্র চন্দ্র নম: খোকন, রঙ্গলাল বিশ্বাস, মুক্তিযোদ্ধা সুখময় বিশ্বাস যাদব, ডা: হিরণ মোহন বিশ্বাস, সিতাংশু বিশ্বাস, পুলিন সরকার, দুর্যোধন বিশ্বাস, পুলিন রায়, প্রণব কুমার দেবনাথ, এপেক্সিয়ান চন্দন দাশ, জিডি রুমু, অভিনাষ বিশ্বাস, রাজেন্দ্র বিশ্বাস, সত্য কুমার বিশ্বাস।
অনুষ্ঠানে এ বছর পরিষদের পক্ষ হতে ধর্ম ও সমাজসেবায় অবদানের জন্য অধ্যাপক বিজিত কুমার দে, বিরাজ মাধব চক্রবর্তী মানস, অধ্যক্ষ ব্রজেন্দ্র কুমার দাস, অসিত ভট্টাচার্য্য (মরণোত্তর) ও সুসেন্দ্র চন্দ্র নম: খোকনকে সম্মাননা স্মারকে ভূষিত করা হয়। এছাড়াও ১২জন দরিদ্র শিক্ষার্থীকে মেধাবৃত্তি প্রদান করা হয়। গীতা কুইজ প্রতিযোগিতায় ৩০ জন প্রতিযোগীর মধ্যে প্রাপ্তি বিশ্বাস ১ম, সুজন কৃষ্ণ দাস ২য় এবং অর্পনা রায় ৩য় স্থান অধিকার করে।
বক্তব্য রাখেন, ললিত মোহন বিশ্বাস, তপন দাস, সুবিনয় মল্লিক, ক্ষিতীশ সরকার, অনিল বিশ্বাস, ফনিভূষণ সরকার, ডা: বিমল কান্ত সরকার, রাখাল সরকার, সবুজ বিশ্বাস পাখি, বিজিত বিশ্বাস, রনজিত বিশ্বাস, মনোরঞ্জন বিশ্বাস, নিরেশ বিশ্বাস, অভিরাম বিশ্বাস, কাজল সরকার, নারায়ন বিশ্বাস, কার্তিক বিশ্বাস, লনিকান্ত বিশ্বাস, নিখিল বিশ্বাস, অনন্ত সরকার, নাদুরাম বিশ্বাস, মিঠুন বিশ্বাস, গোবিন্দ বিশ্বাস, মিন্টু বিশ্বাস, রুবেল বিশ্বাস, পারুল বিশ্বাস, বাসন্তি সরকার, সুভাষ বিশ্বাস, রতœা সরকার, চিত্ত রঞ্জন বিশ্বাস, লক্ষ্মণ রায় কাজল, নিতাই বিশ্বাস প্রমুখ।