হবিগঞ্জে আলোচিত বিউটি হত্যাকান্ড ॥ বাবা সায়েদ আলীসহ ৩ জনের বিরুদ্ধে চার্জশীট

78

হবিগঞ্জ থেকে সংবাদদাতা :
হবিগঞ্জের শায়েস্তাগঞ্জে আলোচিত বিউটি হত্যাকান্ডের ঘটনার দায়েরকৃত মামলার চার্জশীট দাখিল করা হয়েছে। বিউটির বাবা সায়েদ আলী ও প্রতিবেশী চাচা ময়না মিয়াসহ ৩ জনকে অভিযুক্ত করে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ডিবি পুলিশের ওসি শাহ আলম চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে এ চার্জশীট দাখিল করেন। এ বিষয়ে রবিবার দুপুরে পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন পুলিশ সুপার বিধান ত্রিপুরা। এ সময় তিনি বলেন, বিউটি হত্যাকান্ড দেশে বিদেশে একটি আলোচিত ঘটনা। পুলিশ সুষ্ঠু তদন্ত করে প্রকৃত হত্যকারীদের বিরুদ্ধে চার্জশীট দাখিল করেছে। যেহেতু ঘটনাটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়, তাই এ মামলার তদন্তকাজ অনেকটাই চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলে দেয় পুলিশকে। অনেক সতর্কতার সাথে এটি তদন্ত করতে হয়েছে। কোন ঘটনায় বাবা যদি হত্যার সাথে জড়িয়ে পড়েন সেক্ষেত্রে খুনী সাসপেক্ট করা অনেক কঠিন হয়ে পড়ে।
একই সাথে বিউটিকে ধর্ষণের অভিযোগে বাবুল মিয়া ও সহযোগি হিসেবে তার মাকে অভিযুক্ত করে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আদালতে পৃথক চার্জশিট দেয়া হয়েছে। যেহেতু বাবুল মিয়া তাকে ধরে নিয়ে ১৭ দিন আটক করে রেখে ধর্ষণ করেছে এবং বিউটির বয়স ১৮ বছরের নিচে ছিল তাই এ মামলায় তার বিরুদ্ধে চার্জশিট দেয়া হয়। আর বিভিন্ন সময় বাবুলের মা ইউপি সদস্য কলম চান বিবি সালিশে ছেলের পক্ষে অবস্থান নেয়ায় তাকেও সহযোগি হিসেবে উক্ত মামলায় অভিযুক্ত করা হয়।
উল্লেখ্য, গত ২১ জানুয়ারি বিউটি আক্তারকে বাড়ি থেকে অপহরণ করে নিয়ে যায় বাবুল মিয়াসহ তার লোকজন। এ ঘটনায় ২ মার্চ আদালতে একটি ধর্ষণ মামলা দায়ের করেন তার বাবা সায়েদ আলী। এরপরই বিউটিকে তার নানার বাড়ি লাখাই উপজেলার গুনিপুর গ্রামে পাঠিয়ে দেয়া হয়। ১৬ মার্চ রাতে সেখান থেকে তাকে বাবা সায়েদ আলী নিয়ে এসে তুলে দেন খুনী ময়না মিয়ার হাতে। ময়না ও কামাল তাকে বাবার সামনেই হত্যা করে হাওরে লাশ ফেলে রাখে। ১৭ মার্চ বিউটি আক্তারের হাওরে পরে থাকা মরদেহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়। বিষয়টি দেশ বিদেশে আলোড়ন সৃষ্টি করে। খবর পেয়ে পুলিশ গিয়ে তার মরদেহ উদ্ধার করে। উক্ত ঘটনায় বিউটির বাবা সায়েদ আলী বাদি হয়ে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। গ্রেফতার করা হয় বাবুল মিয়া ও তার মা ইউপি সদস্য কলম চান বিবিকে। পরবর্তীতে বিউটির নানী ফাতেমা বেগম পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে হত্যার মোটিভ ঘুরিয়ে দেন। তিনি স্বীকার করে নেন বাবাই খুনের অন্যতম হোতা। সায়েদ আলীই তাকে নানার বাড়ি থেকে বাবুলের সাথে বিয়ে দেয়ার কথা বলে নিয়ে যান। তিনিই রাতে মেয়েকে খুনীদের হাতে তুলে দেন। পরবর্তীতে বিউটির বাবা সায়েদ আলীকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হলে তিনি সব স্বীকার করে নেন। আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। তার দেয়া জবানবন্দির ভিত্তিতে আটক করা হয় ময়না মিয়াকে। তিনিও আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। পরবর্তীতে বিউটির বাবা সায়েদ আলীর দায়ের করা হত্যা মামলাটির চূড়ান্ত রিপোর্ট দেয়া হয়েছে। আর শায়েস্তাগঞ্জ থানার ওসি তদন্ত মানিকুল ইসলাম বাদি হয়ে বিউটির বাবা সায়েদ আলী, ময়না মিয়াসহ ৩ জনের বিরুদ্ধে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। তদন্ত শেষে উক্ত মামলায় রবিবার আদালতে উক্ত মামলায় চার্জশিট দেয়া হয়। মামলায় ২১ জনকে সাক্ষী রাখা হয়েছে।