আল্লাহুম্মা লাব্বায়েক

60

পবিত্র ইসলাম ধর্মের পাঁচটি মূল স্তম্ভের একটি হচ্ছে হজ্ব। আর্থিকভাবে সচ্ছল, দৈহিকভাবে সক্ষম ও সুস্থ মস্তিষ্কসম্পন্ন প্রত্যেক মুসলমানের জন্য হজ্ব পালন ফরজ করা হয়েছে। সৎ পথে উপার্জিত অর্থ দ্বারা হজ্ব পালন করা প্রত্যেক মুসলমানের জন্য অবশ্যকর্তব্য। ইসলাম ধর্মাবলম্বীদের গুরুত্বপূর্ণ ও ভাবগাম্ভীর্যপূর্ণ অনুষ্ঠান এই হজ্বব্রত পালনের লক্ষ্যে সারাবিশ্ব থেকে নানা বর্ণের, নানা ভাষার লাখ লাখ মুসলমান নর-নারী পবিত্র মক্কা নগরীতে সমবেত হন। এবারও হজ্ব পালনের লক্ষ্যে সারাবিশ্ব থেকে অগণিত মুসলমান সৌদি আরবে মহান আল্লাহতালার নির্দেশ পালনে একত্রিত হয়েছেন। বাংলাদেশের বিপুলসংখ্যক ধর্মপ্রাণ মুসলমানও অংশ নিচ্ছেন।
এ ধরনের বিশাল ধর্মীয় সমাবেশ পৃথিবীর আর কোথাও হয় না। সৃষ্টিকর্তার কাছে নিজেকে পরিপূর্ণভাবে সমর্পণের মাধ্যমে আত্মার পরিশুদ্ধির অন্যতম লক্ষ্য নিয়েই এই ভাবগম্ভীর সমাবেশ। ফলে এর গুরুত্ব অপরিসীম। সুশৃঙ্খল নিয়মের মধ্য দিয়ে হজ পালিত হয়। ইহরাম বাঁধা, কাবা শরীফ তাওয়াফ করা, আরাফাতের ময়দানে অবস্থান- সবকিছুর মধ্যেই রয়েছে নির্দিষ্ট নিয়মশৃঙ্খলা মেনে চলার নির্দেশ। হজ পালনের উদ্দেশে সমবেত বিশ্বের ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা তা মেনে চলেন। প্রতি বছর হজ্ব পালনের সময় মক্কা থেকে প্রায় ১৫ কিলোমিটার দূরে বিশাল আরাফাত ময়দানে লাখ লাখ মুসলমান লাব্বায়েক আল্লাহুম্মা লাব্বায়েক উচ্চারণ করতে করতে সমবেত হন। মূলত আল্লাহপাকের সন্তুষ্টি অর্জনের জন্যই হজ্বের এই মহান সম্মিলন। হজ্বের মাধ্যমেই প্রমাণিত- মুসলমানদের মধ্যে রয়েছে পারস্পরিক সমতা এবং বিভেদহীন ঐক্য। আরাফাতের ময়দানে মানুষ সব বৈষম্য ভুলে যায়, বিশ্বের সব মুসলমানের মধ্যে গড়ে ওঠে সাম্য ও সৌভ্রাতৃত্বের পবিত্র বন্ধন। প্রত্যেক মানুষ আল্লাহর সৃষ্টি, তাঁরই অনুগত দাস এবং হযরত মুহম্মদের (সা) উম্মত। হজ্ব পালনের সময় ভাষা, বর্ণ, ধনী-দরিদ্র নির্বিশেষে সবাইকে পরিধান করতে হয় সেলাইবিহীন ইহরাম, যার দ্বারা প্রমাণিত হয় পবিত্র ইসলাম সাম্য ও শান্তির ধর্ম, যা রাসূলুল্লাহ (সা) কর্তৃক প্রতিষ্ঠা ও পূর্ণতা পেয়েছে। বস্তুত সমগ্র মানবজাতিকে শান্তি ও সম্প্রীতির চেতনায় উজ্জীবিত করার প্রকৃত আবেদন এই সুবিশাল মহাসমাবেশের এক পরম শিক্ষা।
হজ্বব্রত পালনের নিমিত্তে বাংলাদেশের বহু ধর্মপরায়ণ মুসলমান এবারও সৌদি আরবে গেছেন। নানা সময় অনেক হজ্বযাত্রীকে বিড়ম্বনায় পড়তে হয়। আল্লাহপাকের কাছে বাংলাদেশের সব মুসলমানের প্রার্থনা, হজ্বযাত্রীরা তাঁদের পবিত্র দায়িত্ব যথাযথ পালন করে যেন দেশে ফিরে আসতে পারেন। পাশাপাশি আরও প্রার্থনা, বিশ্বের সব মুসলমানের মধ্যে ইসলামের মৌলিক সত্যটি উদ্ভাসিত হয়ে উঠুক, শান্তি ও সাম্যের সুবাতাস বইতে থাকুক।