জিলহজ্ব মাসের গুরুত্বপূর্ণ আমল সমূহ যা জানা খুবই প্রয়োজন

131

ডাঃ হাফেজ মাওলানা মোঃ সাইফল্লাহ মানসুর

পবিত্র রমজান মাসের পর গুরুত্বপূর্ণ ইবাদতের সময় হলো জিলহজ মাসের প্রথম ১০দিন। এই দিনগুলোর ইবাদত করা আল্লাহ তায়ালার নিকট অতি প্রিয়।সহিহ বোখারির বর্ণনামতে রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ভালো আমলের জন্য আল্লাহর নিকট এই দিনগুলোর চেয়ে প্রিয় কোনো দিন নেই; সাহাবারা প্রশ্ন করলেন ইয়া-রাসুলাল্লাহ (সঃ)- এমনকি আল্লাহর রাহে জিহাদও এই দিনসমূহের ইবাদতের চেয়ে শ্রেষ্ঠ নয়? জবাবে ইরশাদ হলো- না, অন্য সময়ে আল্লাহর রাহে জিহাদও এই দশকের ইবাদতের চেয়ে শ্রেষ্ঠ নয়। অবশ্য যে ব্যক্তি জান ও মাল নিয়ে আল্লাহর রাহে জিহাদ করতে বের হয়েছেন এবং তার কোনোটি নিয়েই ফিরতে পারেননি, তার কথা ভিন্ন।
অতএব যারা কুরবানি করার সামর্থ্য রাখে অথবা সামর্থ রাখে না; তাদের সবার জন্য জিলহজ মাসের প্রথম ১০ দিন অতি গুরুত্বের সাথে অতিবাহিত করা প্রয়োজন । কুরবানি করার আগ পর্যন্ত যে বিধি-নিষেধ রয়েছে যা পালন করার মধ্যে রয়েছে অনেক সাওয়াব। অত্যন্ত পরিতাপের বিষয় যে কোরআন-হাদিসে সর্বোচ্চ গুরুত্ব পাওয়া এই ইবাদত সম্পর্কে আমাদের সমাজের খুব স্বল্পসংখ্যক মানুষই ধারণা রাখেন। চলুন জেনে নিই জিলহজ মাসের প্রথম দশকের উল্লেখযোগ্য ১০টি আমল যথা –
১. সামর্থ্যবান হলে হজ পালন করা। -সূরা আল ইমরান: ৯৭
২. কোরবানি করা। -সূরা কাউসার ও তিরমিজি
৩. অধিক পরিমাণে আল্লাহতায়ালার নামের জিকির করা। -সূরা হজ্ব : ২৮
বর্ণিত আয়াতে অবশ্য নির্দিষ্ট দিনসমূহে আল্লাহর নামের জিকির করার কথা বর্ণিত হয়েছে। সংখ্যাগরিষ্ঠ তাফসিরবিদ উলামায়ে কেরামের অভিমত হলো- ‘নির্দিষ্ট দিনসমূহ’ বলতে জিলহজের প্রথম দশ দিনকে বুঝানো হয়েছে।
৪. বেশি বেশি পরিমাণে নেক আমল করা ও দান-সাদাকাহ করা। -সহিহ বোখারি ও মুসলিম
৫. সকল ধরনের পাপ থেকে নিজেকে মুক্ত রাখা। -সহিহ বোখারি ও মুসলিম
৬. কোরবানি করতে ইচ্ছুক ব্যক্তির এই দশদিন- নখ, চুলসহ শরীর থেকে কোনো কিছু কর্তন না করা। -সহিহ মুসলিম
সেজন্য জিলহজ মাস আসার আগে জিলক্বদ মাসের শেষের দিকে যেমন-
ক.মাথার চুল কাটা কিংবা মাথা ন্যাড়া করা।
খ.হাত ও পায়ের নখ কাটা।
গ.মোচ ছেঁটে ছোট করা ইত্যাদি
৭. বেশি বেশি তাকবির, তাহমিদ ও তাহলিল পাঠ করা। যেমন- আল্লাহু আকবার আল্লাহু আকবার লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াল্লাহু আকবার আল্লাহু আকবার ওয়ালিল্লাহিল হামদ। – আবু দাউদ
৮. আরাফার দিন ফজর হতে আইয়ামে তাশরিকে (ঈদের দিন ও তার পরে আরো তিন দিন) প্রতি নামাজের পর উল্লেখিত তাকবিরটি পাঠ করা। -আবু দাউদ
৯. আরাফার দিনে রোজা রাখা। সহিহ মুসলিমের এক বর্ণনায় আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, আরাফার দিনের রোজার ব্যাপারে আমি মনে করি, তার বিনিময়ে আল্লাহতায়ালা এক বছর পূর্বের ও এক বছর পরের গুনাহ মাফ করে দিবেন।
আরাফার দিন ছাড়াও ঈদের দিন ছাড়া প্রথম দশকের বাকি দিনগুলোতেও রোজা রাখাকে মোস্তাহাব বলেছেন ইমাম নববি (রহ.)। কেননা নফল রোজাও নেক আমলের শামিল। হাদিসে এই দশকে সাধারণভাবে নেক আমলের প্রতি উৎসাহ দেওয়া হয়েছে। অবশ্য হাদিসে স্বতন্ত্র নির্দেশ থাকায় আরাফার দিনের রোজা বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ।
১০. ঈদের দিনের যাবতীয় সুন্নতসমূহ পালনে সচেষ্ট হওয়া যেমন-
ক. উত্তমরূপে গোসল করা।
খ. সাধ্যমত নতুন জামা পরে ঈদগাহে আসা।
গ. আতর ও সুরমা লাগানো।
ঘ. তালবিয়া পাঠ করতে করতে ঈদগাহে আসা।
ঙ. আত্মীয় সজনসহ সকলের সাথে কুশল বিনিময় করা।
চ. পশু কুরবানী থাকলে নামাজ শেষে কুরবানী করা।
ছ. খালিমুখে নামাজ পড়তে আসা, নামাজ শেষে কুরবানীর গোসত দিয়ে খাবার শুরু করা।
প্রিয় পাঠক! জিলহজ মাস তো কতোবারই এসেছে আমাদের জীবনে। কিন্তু আমরা কী পেরেছি জিলহজ মাসের এসব আমলসমূহ পালন করতে? কে জানে আগামী জিলহজ মাস আমাদের জীবনে আসবে কি-না? সুতরাং সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময় কিন্তু এখনই। আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে জিলহজ মাসের সম্মানের প্রতি লক্ষ্য রেখে কুরআন- হাদিসের ওপর আমল করা এবং শরীয়তের বিধি-নিষেধগেুলোর প্রতি যতœবান হওয়ার তাওফিক দান করুন। আমিন।