শোকাহত আগষ্ট

111

কাজিরবাজার ডেস্ক :
আর মাত্র দুদিন পরই সেই ভয়াল দিন। যে দিনে বাঙালি হারিয়েছিল তাঁর জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে। দেশকে পিছিয়ে দেয়া হয়েছিল অগ্রমিছিল থেকে। বাঙালির জীবনে শোকাহত ও অভিশপ্ত আগষ্ট মাসের আজ তেরোতম দিন। শহরের মোড়ে, প্রধান সড়কে, অলিগলিতে উঠছে শোকতোরণ। সকাল থেকে মধ্যরাত বাজছে শোকগাঁথা। ৩২ নম্বরের ঐতিহাসিক বাড়ির সামনে মনে হয় এখনও কালো ফ্রেমের চশমার ফাঁক দিয়ে হাসছে যে উজ্জ্বল চোখের দ্যূতি, একদিন তাঁরই আঙ্গুল ধরেই তো পথে নামে বাঙালি জাতি। এক সাগর রক্তের বিনিময়ে ছিনিয়ে মহার্ঘ্য স্বাধীনতা।
বঙ্গবন্ধু মানেই বাংলাদেশ। বঙ্গবন্ধু মানেই স্বাধীনতা। বাঙালির অমোঘ নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ডাকেই ঘর ছেড়েছিল মানুষ। মৃত্যুর থাবায় বুক মেলে দেয় কোটি জনতা। শুরু করে স্বাধীনতার লড়াই। তারপর টানা ৯ মাস সেই প্রাণপ্রিয় নেতার নির্দেশেই চলে মুক্তির যুদ্ধ। একদিন স্বাধীন হয় দেশ। পৃথিবীর বুকে জন্ম নেয় আরও একটি স্বাধীন রাষ্ট্র- ‘গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ’।
জন্ম নেন এক চিরভাস্বর মুখ জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। সেই কালজয়ী মানুষকেই একদিন, এই আগষ্টেই নৃশংসভাবে হত্যা করে ঘাতকরা। তাঁর রক্তে রঞ্জিত হয় বাংলার পবিত্র মাটি। বাঙালির ইতিহাসে যোগ হয় এক কলঙ্কময় অধ্যায়। বাঙালি কাঁদে। কাঁদায় বিশ্ববাসীকে। বুকের খুনে, বঙ্গবন্ধু রচনা করেন ভালোবাসা ও শ্রদ্ধার এক কালজয়ী ইতিহাস।
শোকের মাসে আজ সর্বত্র একই দাবি, বঙ্গবন্ধুর পলাতক খুনীরা বিশ্বের যেখানেই পালিয়ে থাকুক, তাদের খুঁজে বের করে দেশে ফিরিয়ে এনে রায় কার্যকর করতে হবে। বাঙালির এই প্রচন্ড দাবির প্রতি শ্রদ্ধা রেখে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল জানিয়েছেন, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হত্যাকারী সাজাপ্রাপ্ত ছয় পলাতক আসামিকে ফিরিয়ে আনার জন্য আমরা সম্প্রতি আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন এক আইনজীবীকে নিয়োগ দিয়েছি। ওই আইনজীবীর নাম প্রকাশ না করে তিনি জানান, সাজাপ্রাপ্ত হত্যাকারীদের দেশে ফিরিয়ে আনার লক্ষ্যে আইনী লড়াইয়ের পাশাপাশি কার্যকর কূটনৈতিক প্রচেষ্টা চালানোর জন্যও সম্প্রতি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে একটি চিঠি পাঠানো হয়েছে।
জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর শাহাদাত বার্ষিকী জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে সরকারী ও বেসরকারী অজস্র সংগঠন বাংলাদেশের স্থপতি জাতির জনক বঙ্গবন্ধুকে শ্রদ্ধা ও কৃতজ্ঞতা জানাতে পালন করছে মাসব্যাপী বিস্তারিত কর্মসূচী। রবিবার জাতীয় প্রেসক্লাবের ভিআইপি লাউঞ্জে মুক্তিযোদ্ধা সন্তান সাংবাদিক ফোরাম আয়োজিত শোক দিবসের আলোচনা সভায় নৌপরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খান বলেন, স্বাধীনতাবিরোধীদের নির্মূলে এবং বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনা প্রতিষ্ঠা করতে মুক্তিযোদ্ধা সন্তানদের ঐক্যবদ্ধ থেকে কাজ করতে হবে।
সংগঠনের সভাপতি জিহাদুর রহমান জিহাদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে জাতীয় প্রেসক্লাবের সভাপতি মুহম্মদ শফিকুর রহমান, বিএফইউজের সভাপতি মোল্লা জালাল, আওয়ামী লীগ নেতা এ্যাডভোকেট বলরাম পোদ্দার প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।
মন্ত্রী শাজাহান খান আরও বলেন, জিয়াউর রহমান বঙ্গবন্ধু হত্যাকান্ডের সঙ্গে জড়িত। সে সুপরিকল্পিতভাবে কাজটি করেছে। জিয়া মুক্তিযুদ্ধের স্লোগান ‘জয় বাংলা’ ঝেটিয়ে বিদায় করতে চেয়েছিল। বাংলাদেশকে পাকিস্তানের সঙ্গে ‘কনফেডারেশন’ করতে চেয়েছিল এই জিয়াউর রহমান। তিনি বলেন, সামনে বিশাল যুদ্ধ অপেক্ষা করছে। সত্য যদি বিজয় লাভ করে তাহলে তোমরাও বিজয়ী হবে। তোমরা বঙ্গবন্ধুর সৈনিক। বঙ্গবন্ধু কখনও ভীত হননি, তোমরাও ভীত হবে না। আর শেখ হাসিনার ভীত নড়বড়ে নয়, তাঁকে ফুঁ দিয়ে উড়িয়ে দেয়ার অপচেষ্টা সফল হবে না। সবাইকে মনে রাখতে হবে, শেখ হাসিনার ভীত বাঙালীর হৃদয়ে প্রতিষ্ঠিত। তার উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে।