সিলেটে জামায়াতের জুবায়ের সহ জামানত হারালেন ৫ মেয়র প্রার্থী ॥ ৩ সিটিতে জামানত হারিয়েছেন ১৪ জন

60

কাজিরবাজার ডেস্ক :
তিন সিটি করপোরেশন নির্বাচনে প্রধান দুই দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মেয়র প্রার্থীর বাইরে আলোচনা তৈরি করা সিলেটে জামায়াতের এহসানুল মাহবুব জুবায়ের, বরিশালে বাসদের মনীষা চক্রবর্তী ও রাজশাহীতে নাগরিক সংহতির মুরাদ মোর্শেদ জনতার সমর্থন না পেয়ে জামানত হিসেবে জমা দেয়া টাকা খুইয়েছেন।
সব মিলিয়ে তিন মহানগরে ১৯ জন মেয়র প্রার্থীর ১৪ জনই জামানত হারিয়েছেন। এদের মধ্যে আছেন বরিশালে ভোট বর্জন করা মজিবর রহমান সরোয়ারও জামানত ফেরত পাবেন না। তবে তিনি ভোটে থাকলে নিশ্চিতভাবেই এই অবস্থা হতো না।
অর্থাৎ আওয়ামী লীগ ও বিএনপির বাইরে সারাদেশে জনভিত্তি আছে, এই মুহূর্তে সেটা বলার সুযোগ নেই।
আইন অনুযায়ী ভোটগ্রহণ বা ভোট গণনা শেষ হওয়ার পর কোনও প্রার্থী প্রদত্ত ভোটের আট ভাগের এক ভাগ বা সাড়ে ১২ শতাংশ সমর্থন না পেলে তার জামানত সরকারের অনুকূলে বাজেয়াপ্ত হবে।
সিলেটে যারা জামানত হারালেন : সিলেটে তিন লক্ষ ২১ হাজার ৭৩২ ভোটারের মধ্যে ভোট পড়েছে ১ লাখ ৯৮ হাজার ৬৫৭টি। এর ৮ শতাংশ হিসেব করলে আসে ১৬ হাজারের কিছু কম ভোট।
আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মেয়রপ্রার্থী বাদে বাকি পাঁচ জনের সবাই সে শর্ত পূরণে ব্যর্থ হয়েছে।
প্রধান দুই দলের বাইরে এই মহানগরে পাঁচ মেয়র প্রার্থীর মধ্যে স্বতন্ত্র হিসেবে লড়াই করা জামায়াতের এহসানুল মাহবুব জুবায়ের পেয়েছেন ১০ হাজার ৯৫৪, ইসলামী আন্দোলনের মোয়াজ্জেম হোসেন দুই হাজার ১৯৫, সিপিবি-বাসদের আবু জাফর ৯০০ ভোট, বিএনপির বিদ্রোহী বদরুজ্জামান সেলিম পান ৫৮২ এবং স্বতন্ত্র মো. এহছানুল হক তাহের পেয়েছেন ২৯২ ভোট।
এদের মধ্যে সেলিম ভোটের আগেই নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দিয়েছিলেন, যদিও নির্ধারিত সময়ের মধ্যে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার না করায় তার নাম ও প্রতীক রয়ে যায় ব্যালটে।
এই মহানগরে অবশ্য এখনই দুইটি কেন্দ্রে ভোট বাকি আছে। কিন্তু সেই দুটি কেন্দ্রের সব ভোট পেলেও জামানত ফিরে পাওয়া সম্ভব হবে না এই পাঁচ প্রার্থীর।
এখানে নিশ্চিত জয়ের পথে থাকা বিএনপির আরিফুল হক চৌধুরী ১৩৪ কেন্দ্রের মধ্যে ১৩২টিতে পেয়েছেন ৯০ হাজার ৪৯৬ ভোট ও আওয়ামী লীগের বদর উদ্দিন আহমদ কামরান পেয়েছেন ৮৫ হাজার ৮৭০ ভোট।
রাজশাহীতে যারা ফেরত পাবেন না জামানতের টাকা : এখানেও ৫ মেয়র প্রার্থীর মধ্যে জামানত হারিয়েছেন তিন প্রার্থী। এদের মধ্যে গণমাধ্যমে আলোড়ন তৈরি করা বামপন্থী সংগঠন নাগরিক সংহতির মুরাদ মোর্শেদ ছাড়াও আছেন ইসলামী আন্দোলনের শফিকুল ইসলাম এবং বাংলাদেশ জাতীয় পার্টির প্রার্থী হাবিবুর রহমান।
এই মহানগরে তিন লাখ ১৮ হাজার ১৩৮ ভোটারের মধ্যে ভোট পড়েছে ২ লাখ ৫০ হাজার ৮৮১টি, এর মধ্যে বাতিল হয়েছে ৩ হাজার ৬৯১ টি। মোট ৭৮.৮৬ শতাংশ ভোট পড়েছে সেখানে।
প্রদত্ত ভোটের ৮ শতাংশের কম পেয়ে শফিকুল ইসলামের পক্ষে রায় আসে তিন হাজার ২৩, হাবিবুর রহমানের পক্ষে আসে ৩২০ ও মুরাদ মোর্শেদের পক্ষে এক হাজার ৫১ ভোট।
এখানে এক লাখ ৬৫ হজার ৯৬ ভোট পেয়ে মেয়র নির্বাচিত হয়েছেন আওয়ামী লীগের এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন। আর নিকটতম প্রতিদ্বনদ্বী বিএনপির মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল পেয়েছেন ৭৭ হাজার ৭০০ ভোট।
বরিশালে যাদের টাকা রেখে দেবে ইসি : বরিশালে সাত মেয়র প্রার্থীর মধ্যে জামানত হারিয়েছেন ছয় জন। এদের মধ্যে বিএনপির সরোয়ারের নাম থাকার বিষয়টি অবশ্য অস্বাভাবিক।
এখানে মোট ২ লাখ ৪২ হাজার ১৬৬ ভোটারের মধ্যে ভোট পড়েছে এক লাখ ৩৩ হাজার ৩০০ টি। বাতিল হয়েছে তিন হাজার ৪৫১ টি।
জামানত রক্ষার জন্য এখানে নূন্যতম ভোটের সংখ্যা ১৬ হাজার ৬৬৩ ভোটের দরকার পড়ত। কিন্তু ভোট বর্জনকারী বিএনপির সরোয়ার পেয়েছেন ১৩ হাজার ১৩৫ ভোট।
জামানত হারানো অন্য প্রার্থীদের মধ্যে ইসলামী আন্দোলনের ওবাইদুর রহমান মাহাবুব ৬ হাজার ৪২৩, বাসদের তুমুল আলোচিত মনীষা চক্রবর্ত্তী এক হাজার ৯১৭, জাতীয় পার্টির ইকবাল হোসেন ৬৯৬, সিপিবির আবুল কালাম আজাদ ২৪৪ এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী বশির আহমেদ ঝুনু পেয়েছেন ৮১ ভোট।
এই নগরে অবশ্য স্বতন্ত্র প্রার্খী ছাড়া অন্য চার জন আওয়ামী লীগ প্রার্থীর বিরুদ্ধে কারচুপির অভিযোগ এনে ভোট বর্জন করেছেন।আর তারা ভোটে থাকলে কী পরিণতি হতো, সেটি নিশ্চিত নয়।
এখানে বিজয়ী আওয়ামী লীগের সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহ্ পেয়েছেন এক লাখ ৭ হাজার ৩৫৩ ভোট।