শাবিতে ন্যাশনাল ক্যাম্পাস জার্নালিজম ফেস্ট-২০১৮ এর উদ্বোধনকালে ড. জাফর ইকবাল ॥ সব জায়গায় আমি নিরপেক্ষ থাকবো না

47

২৭ জুলাই, শুক্রবার শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মরত সাংবাদিকদের সংগঠন শাহজালাল বিশ^বিদ্যালয় প্রেসক্লাব কর্তৃক দুই দিনব্যাপী ন্যাশনাল ক্যাম্পাস জার্নালিজম ফেস্ট-২০১৮ শুরু হয়েছে। শুক্রবার সকাল ১০টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মিলনায়তনের সামনে এ উৎসবের উদ্বোধন করেন বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ, লেখক ও বিশ্ববিদ্যালয়ের তড়িৎ প্রকৌশল বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ড. মুহম্মদ জাফর ইকবাল।
পরবর্তীতে সেখান থেকে ক্যাম্পাসে একটি আনন্দ র‌্যালি বের করা হয়। র‌্যালিটি ক্যাম্পাসের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে একই স্থানে এসে শেষ হয়। উদ্বোধন পরবর্তীতে আলোচনা সভায় তিনি বলেন, ‘আমাদের বিশ্ববিদ্যালগুলোর মান খুবই খারাপ হয়ে গেছে। কেননা এখনকার বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে লবিংয়ের মাধ্যমে ভাইস চ্যান্সেলর নিয়োগ দেয়া হয়। যাদের ভাইস চ্যান্সেলর হওয়ার যোগ্যতাই নাই। কাজেই তারা সাংবাদিকদের খুবই তোয়াজ করেন এবং তাদেরকে অবৈধ উপায়ে সুযোগ-সুবিধা দেয়ার চেষ্টা করেন। ঐ সময়ে অনেক সাংবাদিকরা তাদের পক্ষে কাজ করার ফলে মূল পথ থেকে বিচ্ছিত হয়ে পড়ে।’
ক্যাম্পাস সাংবাদিকদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, ‘সাংবাদিকদের অনেকেই বলেন আমি নিরপেক্ষ। নিরপক্ষে বলতে তোমরা কি বুঝ? ন্যায় আর অন্যায়ের মাঝখানে যেটা সেটাতো নাকি? কিন্তু না, আমি সব জায়গায় নিরপেক্ষ থাকবো না। আমাকে যদি ন্যায় এবং অন্যায়ের মাঝখানে নিরপক্ষে থাকতে বলা হয়, তবে আমি ন্যায়ের পক্ষেই থাকবো। এটা খেয়াল রাখতে হবে। নিরপেক্ষ শব্দটার মাধ্যমে তোমাদেরকে যেন ভুল পথে পরিচালিত না করে সে বিষয়ে তোমাকে সতর্ক থাকতে হবে।’
তিনি বলেন,, ‘আমরা খুব একটা পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে যাচ্ছি। ইন্টারনেটে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের মাধ্যমের ফলে সম্পূর্ণভাবে নতুন আরেকটি জগত সৃষ্টি হয়েছে। সামাজিক যোগাযোগের একটা মাধ্যম যে সংবাদপত্র হয়েছে এটা খুবই বিচিত্র। তবে খবরের যদি আলাদা একটা মাধ্যম তৈরী করে থাকে ফেসবুক কিংবা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম যেটার কোন ভিত্তি নাই, তখন আমি কি করবো? আমি দেখি যে আমাদের বাংলাদেশে সেটা হয় নাই এখনও। কিন্তু ভারতে আমি দুই দিন পরপর দেখি ফেসবুক কিংবা হোয়াটসঅ্যাপে ভুয়া খবর ছড়িয়ে একজন মানুষকে পিঠিয়ে মেরে ফেলা হচ্ছে।’
তিনি আরো বলেন, কাগজের পত্রিকা উঠে যাচ্ছে সেটা নিয়ে আমি চিন্তিত নয়, বরঞ্চ আমি খুশি হই। কেননা একটি কাগজ মানে পৃথিবীর কোথাও না কোথাও একটি গাছ কাটা হচ্ছে। কিন্তু খবরটা যদি অনলাইনে ছাপা হয় তখন আর কোন গাছ কাটা পড়ছে না।
শাবি প্রেসক্লাবের সভাপতি আব্দুল্লাহ আল মনসুরের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক ফয়জুল্লাহ ওয়াসিফের সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় আরো বক্তব্য রাখেন, কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. ইলিয়াস উদ্দিন বিশ^াস, ছাত্র উপদেশ ও নির্দেশনা পরিচালক অধ্যাপক ড. রাশেদ তালুকদার, আধুনিক ভাষা ইনস্টিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক ড. হিমাদ্রী শেখর রায়, চ্যানেল টুয়েন্টিফোর’র বিজনেস এডিটর ফারুক মেহেদী, বাংলাদেশ জার্নাল’র যুগ্ম বার্তা সম্পাদক মুস্তফা মনওয়ার সুজন, শাবি প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি সভাপতি সায়েদ আব্দুল্লাহ যীশু, আজগর খান, যুগ্ম-সম্পাদক আবু সায়েম প্রমুখ।
উদ্বোধন পর্ব শেষে মেনটার হিসেবে সাংবাদিকতায় নিজের অভিজ্ঞতা, সমস্যা এবং সম্ভাবনা তুলে ধরেন যমুনা টিভির বিশেষ প্রতিনিধি মোহসিন উল হাকিম ও মাছারাঙা টিভির বিশেষ প্রতিনিধি বদরুদ্দোজা বাবু।
শাবি প্রেসক্লাবের উদ্যোগে আয়োজিত এই উৎসবে ঢাবি, জাবি, চবি, রাবি, বাকৃবিসহ সারাদেশের ২৬টি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় ২৫০জন ক্যাম্পাস প্রতিবেদক অংশগ্রহণ করেছেন। দু দিনব্যাপী এই অনুষ্ঠানে ক্যাম্পাস সাংবাদিকতার বিভিন্ন সমস্যা ও সম্ভাবনার পাশাপাশি বস্তুনিষ্ঠ ও অনুসন্ধানী সাংবাদিকতার নানা দিক উৎসবের বিভিন্ন ‘লার্নিং সেশনে’র আলোচনার বিষয় বলে জানান উৎসবের সদস্য সচিব ফয়জুল্লাহ ওয়াসিফ। বিজ্ঞপ্তি