জগন্নাথপুরে স্কুলছাত্রী ধর্ষণের ঘটনায় এলাকায় তোলপাড়

28

মো. শাহজাহান মিয়া জগন্নাথপুর থেকে :
জগন্নাথপুর উপজেলার চিলাউড়া-হলদিপুর ইউনিয়নের খাগাউড়া গ্রামের বিতর্কিত ব্যক্তি সেই জনির বাড়িতে আবারো স্কুলছাত্রী ধর্ষণের ঘটনায় এলাকায় তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে। একের পর এক স্কুলছাত্রী ধর্ষণের প্রতিবাদে ফুঁসে উঠেছেন এলাকাবাসী। এ নিয়ে বড় ধরণের সংঘর্ষের আশঙ্কা বিরাজ করছে।
জানা গেছে, খাগাউড়া গ্রামের জনির বাড়িতে স্থানীয় বাউধরণ গ্রামের বাসিন্দা ও পঞ্চগ্রাম উচ্চ বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণীর ছাত্রীকে ধর্ষণ করা হয়। এরপর ধর্ষণের ভিডিও ইনটারনেটে ছড়িয়ে দেয়া হয়। এ ঘটনায় ২০১৭ সালে জগন্নাথপুর থানায় জনি ও জনির কর্মচারী রুবেলকে আসামী করে মামলা দায়ের হয়। এ মামলা থেকে বাঁচতে রুবেল ধর্ষিতাকে বিয়ে করে।
এ ঘটনার রেশ কাটতে না কাটতেই আবারো সেই জনির বাড়িতে দ্বিতীয় বারের মতো স্থানীয় খাগাউড়া গ্রামের দরিদ্র পরিবারের সুন্দরী কন্যা (১৭) পঞ্চগ্রাম উচ্চ বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির আরেক ছাত্রীকে ধর্ষণ করা হয়। একইভাবে ধর্ষণের পর অশ্লীল ছবি ইন্টারনেটে ছড়িয়ে দেয়া হয়। এবার ধর্ষণের অভিযোগ উঠে জনির মামাতো ভাই রিপন মিয়ার (২৩) বিরুদ্ধে। সে দিরাই থানার এখতিয়ারপুর গ্রামের বাসিন্দা। সে দীর্ঘদিন ধরে জনির বাড়িতে বসবাস করছে।
সরজমিনে খাগাউড়া গ্রামের আবদুল মুকিত সহ প্রতিবাদী জনতা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ৯ মাতব্বরের অধীনে চলে অত্র এলাকা। এর মধ্যে জনি অন্যতম। তারা খুবই প্রভাবশালী। তাদের অন্যায়ের বিরুদ্ধে কেউ প্রতিবাদ করলেই তাকে সমাজচ্যুত (পাঁচেরবাদ) করা হয়। পঞ্চগ্রাম উচ্চ বিদ্যালয়ের পাশে রয়েছে জনির বাড়ি। স্কুলে আসা-যাওয়ার পথে এলাকার দরিদ্র পরিবারের সুন্দরী ছাত্রীদের টার্গেট করে প্রেমের জালে ফেলে ধর্ষণ করা হয়। স্থানীরা অভিযোগ করে বলেন, এ দুই ছাত্রীকে ধর্ষণের পর ভিডিও এবং ছবি ফেসবুকে তারাই ছড়িয়ে দেয়ায় জানাজানি হয়েছে। আরো জানিনা কত ছাত্রীকে ধর্ষণ করেছে লম্পটরা। যে কারণে জনির বাড়িটি এখন এলাকায় ছাত্রী ধর্ষণের সেল হিসেবে পরিচিত হয়েছে। একের পর এক স্কুল ছাত্রীদের ধর্ষণ করে পার পেয়ে যাওয়ায় তারা আরো বেপরোয়া হয়ে উঠেছে।
এদিকে-আবারো জনির বাড়িতে সেই পঞ্চগ্রাম উচ্চ বিদ্যালয়ের ছাত্রী ধর্ষণের ঘটনায় ফুঁসে উঠেছেন স্থানীয় খাগাউড়া, বাউধরণ, ইসমাইল চক, বেরী, শালদিকা, গোপরাপুর, স্বজনশ্রী সহ অত্র অঞ্চলের গ্রামবাসী। তারা তাদের মেয়েদের আর পঞ্চগ্রাম উচ্চ বিদ্যালয়ে পাঠাতে চাইছেন না। এ নিয়ে এলাকায় প্রতিবাদের ঝড় বইছে। ছাত্রীদের নিরাপত্তা নিয়ে তারা বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে দোষারুপ করছেন। সর্বস্তরের এলাকাবসীকে নিয়ে প্রতিবাদ সভার মাধমে তারা পদক্ষেপ নেয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন বলে প্রতিবাদী ক্ষুব্ধ জনতারা জানান।
এ ব্যাপারে ধর্ষিতার মা ও বাবা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, আমরা গরীব হওয়ায় আমাদের মেয়েকে ধর্ষণ করেই ক্ষান্ত হয়নি অশ্লীল ছবি ফেসবুকে দিয়েছে। আমরা এ ন্যাক্কারজনক ঘটনার বিচার চাই। তবে ধর্ষিতা ছাত্রী জানায়, আমি আমার হারিয়ে যাওয়া মান-সম্মান ফিরে পেতে চাই।
এ ব্যাপারে জনি মিয়া জানান, আমি এ ঘটনার সাথে জড়ি নই। আমার মামাতো ভাই রিপন বাড়িতে নেই। তবে বিয়ের মাধ্যমে এ ঘটনার সমাধান দেয়ার চেষ্টা চলছে। বাদ সেজেছে ছাত্রীর বয়স কম।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে পঞ্চগ্রাম উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আবদুল মুহিত বলেন, আর যাতে আমাদের বিদ্যালয়ের ছাত্রীদের সাথে এ ধরণের ঘটনা না ঘটে এ বিষয়ে বিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে কঠোর পদক্ষেপ নেয়া হবে। জানতে চাইলে জগন্নাথপুর থানার ওসি মোহাম্মদ হারুনুর রশীদ চৌধুরী বলেন, আবারো স্কুলছাত্রী ধর্ষণের ঘটনা আমার জানা নেই।