সিলেট-ঢাকা যোগাযোগে বুলেট ট্রেন চালু হবে- প্রধানমন্ত্রী ‘মৃত্যুর আগে আমি মরতে রাজি নই’

84

কাজিরবাজার ডেস্ক :
সিলেটের সাথে রাজধানীর যোগাযোগে বুলেট ট্রেন চালু হবে বলে ঘোষণা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। সেই সাথে ঢাকা-সিলেট মহাসড়ককে চারলেনে উন্নীত করার কাজও শুরু হবে বলে জানিয়েছেন তিনি।
শনিবার (২১ জুলাই) দেশ ও জাতির উন্নয়ন ও অর্জনে অনন্য-অসাধারণ অবদানের জন্য ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের দেওয়া সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে এ কথা বলেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, রাজধানীর সঙ্গে আমরা ঢাকা-সিলেট, ঢাকা-চট্টগ্রাম, ঢাকা-দিনাজপুর, ঢাকা-বরিশালের সেই পায়রাবন্দরসহ সেখানে বুলেট ট্রেন চালু করে যোগাযোগ ব্যবস্থা সুরক্ষিত করবো।
সিলেট আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরকে উন্নত করা হবে জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, আমরা সিলেট, সৈয়দপুর, রাজশাহী, চট্টগ্রাম ও বরিশাল বিমানবন্দরকে উন্নত করবো। যাতে যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নত হয় সে ব্যবস্থা করবো। সেইসঙ্গে সৈয়দপুর বিমানবন্দর হবে আঞ্চলিক বিমানবন্দর।
শেখ হাসিনা বলেন, আমরা প্রথমবার যখন ক্ষমতায় আসি তখন চট্টগ্রাম ও সিলেট এ দু’টি বিমানবন্দরকে আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে উন্নীত করে গিয়েছিলাম।
তিনি আরো বলেন, ঢাকা-চট্টগ্রাম চারলেন, ঢাকা-সিলেট চারলেনের কাজ শুরু হবে, ঢাকা-ময়মনসিংহ চারলেন এবং আমরা পায়রাবন্দর পর্যন্ত চারলেন করে সমস্ত বাংলাদেশ, উত্তরবঙ্গকে ভবিষ্যতে চারলেনে উন্নীত করে যোগাযোগ যাতে তড়িৎ গতিতে হয় সে ব্যবস্থা করবো।
প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা জানিয়েছেন, তিনি দিনের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে মাত্র পাঁচ ঘণ্টা ঘুমান আর বাকি সময় দেশ ও জনগণের জন্য কাজ করেন।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘একটা মানুষের তো দিনে ২৪ ঘণ্টা সময়। এই ২৪ ঘণ্টা সময় থেকে আমি মাত্র পাঁচ ঘণ্টা নেই। এটা আমার ঘুমানোর সময়। এটা ছাড়া প্রতিটি মুহূর্ত আমি কাজ করি দেশের মানুষের জন্য, দেশের জনগণের উন্নয়নের জন্য। এর বাইরে আমার জীবনে আর কোনো কাজ নেই।’
‘আমি কোনো উৎসবে যাই না। সারাক্ষণ আমার একটাই চিন্তা-দেশের উন্নয়ন, দেশের মানুষের উন্নয়ন। আমি নিজে খোঁজ নেওয়ার চেষ্টা করি- কোথায়, কোন মানুষটা কী কষ্টে আছে। তাদের সমস্যার সমাধান করা।’
জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কাছ থেকে পাওয়া রাজনৈতিক শিক্ষার কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমি দেখেছি ছোটবেলা থেকে আমার বাবা কতো ভালোবাসতেন এদেশের মানুষকে। দেখেছি মানুষের জন্য তার হাহাকার। এই মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনে কতো পরিকল্পনা তার ছিলো।’
‘সেই (বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন) পরিকল্পনা অনুযায়ী বাংলাদেশকে গড়ে তুলবো। প্রতিটি গ্রামকে শহর হিসেবে গড়ে তুলবো আমরা। প্রতিটি গ্রাম হবে উন্নয়নের জায়গা, প্রতিটি গ্রামের মানুষ পাবে নাগরিক সুবিধা। ঠিক শহরের মানুষ যে সুবিধা পায়, সেইভাবে আমরা গ্রামের মানুষের অবস্থার উন্নতি করতে চাই।’
তিনবারের প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘শিক্ষা-দীক্ষায় সব দিক থেকে বাংলার মানুষ উন্নত জীবন পাবে। ক্ষুধা আর হাহাকার থাকবে না। একটি মানুষও গৃহহারা থাকবে না। প্রত্যেকটা মানুষ উন্নত জীবন পাবে। সে লক্ষ্য নিয়েই আমার রাজনীতি, সেই লক্ষ্য নিয়েই আমার কাজ।’
বাবা জীবনটা দিয়ে গেছে, তুমিও মা পথে নেমেছো
পঁচাত্তরের ১৫ আগস্ট বাবা-মাসহ পরিবারের সদস্যদের হারানোর করুণ স্মৃতি স্মরণ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘স্বজন হারানোর বেদনা নিয়ে যখন এসেছিলাম, আপন করে নিয়েছিলো বাংলার মানুষ। গ্রামের একজন দরিদ্র মা যখন বুকে টেনে নিয়ে আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে, গালে চুমো দিয়ে, আদর করে বলে- বাবা জীবনটা দিয়ে গেছে, তুমিও মা পথে নেমেছো। এই খুনিরা তোমাকেও মারবে।’
‘একটি কথা বলেছিলাম- মৃত্যু ভয় আমি করি না। জন্ম মানুষ একদিনই নেয়। আর মৃত্যু যখন আসবে তখন মৃত্যু আসবেই। কিন্তু মৃত্যুর আগে আমি মরতে রাজি নই। তার আগে যতোক্ষণ জীবন আছে বাংলার মানুষের সেবা করে যাবো।’
২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ায় জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ হিসেবে গড়ে উঠবে বলেও আশা প্রকাশ করেন শেখ হাসিনা।
আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, ‘আমরা চাই বাংলাদেশের মানুষ উন্নত-সমৃদ্ধ জীবন পাক। কিন্তু বাংলাদেশের মানুষের ভাগ্য নিয়ে কেউ ছিনিমিনি খেলুক সেটা আমরা কখনো বরদাশত করবো না।’
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে, এগিয়ে যাবে। এগিয়ে চলার পথ আমরা যেনো অব্যাহত রাখতে পারি।’
প্রধানমন্ত্রীর বক্তৃতার আগে তার উদ্দেশে মানপত্র পাঠ করেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। পরে তিনি এই মানপত্র প্রধানমন্ত্রীর হাতে তুলে দেন।
এ মনিহার আমায় নাহি সাজে
প্রাপ্ত সংবর্ধনা বাংলার মানুষকে উৎসর্গ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এ মনিহার আমায় নাহি সাজে, এটা জনগণের। আমার সংবর্ধনার প্রয়োজন নেই। আমি জনগণের জন্য কাজ করতে এসেছি। তাদের জন্য কাজ করছি। এদেশের মানুষের ভাগ্য যেদিন পরিবর্তন হবে, সেদিন নিজেকে সার্থক মনে করবো।’
বাংলাদেশের মানুষ যা কিছু অর্জন করেছে, মহান ত্যাগের মাধ্যমেই অর্জন করেছে বলেও উল্লেখ করেন জাতির জনকের কন্যা।
বাংলার মানুষ যেন অন্ন-বস্ত্র-বাসস্থান পায়, উন্নত জীবন পায়- সেটাই তার জীবনের লক্ষ্য জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমি জনগণের সেবক। জনগণের জন্যই কাজ করতে এসেছি। জনগণ কী পেল, সেটাই আমার কাছে বিবেচ্য। এ ছাড়া আর চাওয়া-পাওয়ার কিছু নেই আমার।’
সংবর্ধনার শুরুতে পরিবেশন করা হয় জাঁকালো সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। বেলা সাড়ে ৩টায় অনুষ্ঠানস্থলে পৌঁছান প্রধানমন্ত্রী। তিনি অতিথি মঞ্চে আসন নিলে অভ্যর্থনা সঙ্গীতের পাশাপাশি জাতীয় ও দলীয় পতাকা নেড়ে তাকে স্বাগত জানানো হয়।
প্রধানমন্ত্রীকে স্বাগত জানিয়ে ‘শেখ হাসিনা, তোমার জন্য বাংলাদেশ ধন্য’ এই শিরোনামে একটিসহ দু’টি গান পরিবেশন করেন শিল্পী মমতাজ। দেশের ঐতিহ্য তুলে ধরে পরিবেশন করা হয় ‘আমার প্রিয় বাংলাদেশ’।
এরপর প্রধানমন্ত্রীর প্রশংসা করে ‘রূপকাহিনীর রূপকথা’ শিরোনামে কবিতার সঙ্গে পরিবেশন করা হয় নৃত্য। দেশের জনপ্রিয় শিল্পীদের দলীয় সঙ্গীতের সঙ্গে নান্দনিক নৃত্যে সরকারপ্রধানের প্রশংসায় পরিবেশন করা হয় ‘তুমি শেখ হাসিনা, তুমি অনন্য’।
মূল মঞ্চে আসন নেন মন্ত্রিপরিষদের সদস্য, প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা, সিনিয়র আওয়ামী লীগ নেতা ও সমাজের বিশিষ্ট ব্যক্তিরা। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও সংসদ উপনেতা সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী।
শেখ হাসিনাকে সংবর্ধনা দিতে আয়োজিত সমাবেশে সকাল থেকেই নামে জনতার ঢল। গায়ে লাল টি-শার্ট, মাথায় সবুজ ক্যাপ, হাতে জাতীয় পতাকা নিয়ে উদ্যানের সবুজ চত্বর থেকে শুরু করে শাহবাগ, টিএসসি, দোয়েল চত্বর আশপাশের এলাকায় জনতার স্রোত নামে।
নৌকার প্রতিকৃতি নিয়ে ঢাক-ঢোল পিটিয়ে, নেচে-গেয়ে খণ্ড খণ্ড মিছিল, ট্রাক-পিকআপ ভ্যানে চেপে জনসভায় আসেন আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মী ও সমর্থকরা। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান ছাপিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ আশপাশের এলাকাগুলো লোকে লোকারণ্য হয়ে যায়। পুরো এলাকা পরিণত হয় জনসমুদ্রে।
আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, দেশকে কিভাবে আগামীতে আরও উন্নত করবো, সেই পরিকল্পনা আমাদের রয়েছে। সে অনুযায়ী আমরা কাজ করে যাচ্ছি। আমরা দেশকে উন্নত করতে চাই। দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা বাস্তবায়নে আমরা কাজ করে যাচ্ছি।
আকাশপথে যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নয়নে সরকারের সফলতা ও আগামীতে আরও উন্নত করার পরিকল্পনার কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের বিমানবহর ধ্বংসপ্রাপ্ত ছিলো। ইতোমধ্যে আমরা কিছু নতুন বিমান পেয়েছি। আরও সাতটি বিমান আমরা কিনবো। যা আন্তর্জাতিক, আঞ্চলিক ও অভ্যন্তরীণ যোগাযোগ ব্যবস্থাকে আরও উন্নত করবে।’
মহাকাশে স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ, স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে উন্নীত হওয়ার যোগ্যতা অর্জন, অস্ট্রেলিয়ায় ‘গ্লোবাল উইমেনস লিডারশীপ অ্যাওয়ার্ড’ এবং ভারতে কবি নজরুল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডি-লিট ডিগ্রি লাভসহ নানা অর্জনের জন্য আজ বিকেলে রাজধানীর ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে শেখ হাসিনাকে এ সংবর্ধনা দেওয়া হয়।