মানসিক স্বাস্থ্য সনদ আইন

50

দেশে শারীরিক চিকিৎসার বিদ্যমান সুযোগ-সুবিধার তুলনায় মানসিক চিকিৎসার সুযোগ খুবই কম। যাও আছে তার গুণ-মান নিয়ে রয়েছে অজস্র প্রশ্ন। আর তার সুযোগ নিচ্ছে স্বার্থান্বেষী মহল ও নৈতিকতাহীন এক শ্রেণির মানুষ। সম্পত্তির অধিকার পেতে নিকটাত্মীয়কে চিকিৎসকের মাধ্যমে ‘পাগল’ সাব্যস্ত করা, খুনের মামলার আসামিকে ‘পাগল’ দেখিয়ে শাস্তির হাত থেকে রক্ষা করার চেষ্টাসহ অনেক অপচেষ্টাই দেখা যায় এই ক্ষেত্রে। অভিযোগ আছে, চিকিৎসক নামধারী কিছু ব্যক্তি এ ধরনের অন্যায়ে সহযোগিতাও করেন। মোটা অঙ্কের অর্থের বিনিময়ে ‘পাগল’-এর সনদও দিয়ে থাকেন। এ ধরনের অপতৎপরতা বা উদ্দেশ্যপ্রণোদিত মিথ্যা সনদ প্রদান রোধ করার জন্য জেল-জরিমানার বিধান রেখে আইন করা হচ্ছে। গত সোমবার ‘মানসিক স্বাস্থ্য আইন ২০১৮’-এর খসড়াটি মন্ত্রিসভার অনুমোদন লাভ করেছে। এরপর এটি জাতীয় সংসদে অনুমোদনের পর পূর্ণাঙ্গ আইন হিসেবে কার্যকর হবে। ধারণা করা যায়, সনদের এ ধরনের দুঃখজনক অপব্যবহার কিছুটা হলেও কমবে।
সম্পত্তির লোভে নিকটাত্মীয়কে ‘পাগল’ সাব্যস্ত করার এই নিষ্ঠুর চক্রান্ত নতুন নয়। গল্প-উপন্যাস বা চলচ্চিত্রে এ রকম বহু ঘটনা দেখতে পাওয়া যায়। কিছু মানুষের লোভের শিকার একজন ব্যক্তির করুণ পরিণতি দেখে অনেকে চোখের জলও ফেলেছে। বাস্তবে দেখার অভিজ্ঞতা হয়তো আছে অনেকের। খসড়া আইন অনুযায়ী, মানসিক স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারী কোনো পেশাজীবী মানসিক অসুস্থতা সম্পর্কে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হয়ে মিথ্যা সনদ দিলে তাকে তিন লাখ টাকা অর্থদণ্ড বা এক বছরের সশ্রম কারাদণ্ড অথবা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত করা যাবে। এ ছাড়া অভিভাবক বা ব্যবস্থাপক মানসিক অসুস্থতায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও সম্পত্তির তালিকা প্রণয়নে অবহেলা করলে পাঁচ লাখ টাকা অর্থদণ্ড বা তিন বছরের সশ্রম কারাদণ্ড অথবা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন। অনেকেই মনে করেন, এ শাস্তি আরো কঠোর করা প্রয়োজন। আইনে মানসিক স্বাস্থ্য পর্যবেক্ষণ ও মূল্যায়ন কমিটি গঠনের সুপারিশ করা হয়েছে। সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে মানসিক স্বাস্থ্য চিকিৎসাবিষয়ক হাসপাতাল স্থাপন, পরিচালনা ও মানসম্মত সেবা প্রদান সম্পর্কেও বেশ কিছু বিধান রয়েছে খসড়া আইনটিতে। এমন একটি আইনের প্রয়োজনীয়তার কথা অনেক দিন ধরেই আলোচিত হচ্ছিল। অতি প্রয়োজনীয় এই আইন প্রণয়নের উদ্যোগ অবশ্যই প্রশংসার দাবি রাখে।
শারীরিক সুস্থতার মতোই জরুরি মানসিক সুস্থতা। শরীর ও মন একটিকে ছাড়া আরেকটির সুস্থতা সম্ভব নয়। জনস্বাস্থ্যের এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রে অবহেলা কোনো ক্রমেই কাম্য নয়। আমরা চাই, অনুমোদনের পর দ্রুত আইনটি কার্যকর করা হোক। উপযুক্ত বিধি-বিধান প্রণয়নের মাধ্যমে মানসিক স্বাস্থ্য চিকিৎসায় শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠা করা হোক।