দু’গ্রুপের দ্বন্দ্বে বলি হচ্ছে কোমলমতি শিক্ষার্থীরা ॥ কমলগঞ্জে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কমিটির পদবী পেতে লবিং, গ্রুপিং ও উত্তেজনা

42

কমলগঞ্জ থেকে সংবাদদাতা :
মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার অধিকাংশ প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয় সমূহে ম্যানেজিং কমিটির পদবী পেতে লবিং, গ্র“পি ও উত্তেজনা অব্যাহত রয়েছে। এসব বিষয়ে কোন কোন ক্ষেত্রে শিক্ষকরাও নেপথ্যে থেকে গ্র“পের হয়ে কাজ করেন আবার কোন কোন ক্ষেত্রে তারা রয়েছেন বেকায়দায়। সম্প্রতি কেছুলুটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে কমিটির পদবী নিয়ে দু’গ্র“পের বলি হচ্ছে বিদ্যালয়ের কোমলমতি শিক্ষার্থীরা।
সরেজমিন ঘুরে ও স্থানীয়দের অভিযোগে জানা যায়, বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটি গঠনের লক্ষ্যে গত ২১ জুন নির্বাচনে ৪ জন অভিভাবক সদস্যকে নির্বাচিত করা হয়েছে। পরবর্তীতে স্থানীয় সংসদ সদস্যের মনোনীত পুরুষ ও মহিলা সদস্যও নির্বাচন করা হয়েছে। এখানে সভাপতি পদে দু’পক্ষের স্থানীয় দুই ব্যক্তি নিজেদের অনুকূলে ভোট পেতে বিভিন্নভাবে গ্র“পিং, লবিং শুরু করেন। তবে দীর্ঘদিন অতিবাহিত হলেও নানা অজুহাত দেখিয়ে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সভাপতি নির্বাচনে এখানো কোন দিন তারিখ নির্ধারণ করাতে পারেননি। ফলে ওই বিদ্যালয়ে সভাপতি নির্বাচন নিয়ে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়েছে। সম্প্রতি এসব বিষয় নিয়ে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. শাহরিয়ার আহমদের সাথে বাক-বিতন্ডাকে কেন্দ্র করে শিক্ষক লাঞ্ছনার অভিযোগ তোলে প্রতিপক্ষের লোকজন বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে মানববন্ধনের আয়োজন করে। এলাকাবাসীর আয়োজিত ব্যানারে গত ৯ জুলাই সোমবার বেলা ১১টায় বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে কোমলমতি শিশু শিক্ষার্থীদের ক্লাস থেকে বের করে নিয়ে রোদে দাঁড়িয়ে মানববন্ধন করানো হয়। মানববন্ধন চলাকালীন সময়ে মাইকে শিক্ষক লাঞ্ছিত হওয়ার বিচার দাবি করা হয়। তবে এ বিষয়ে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. শাহরিয়ার আহমদ বলেন, কিছুটা সমস্যা হলেও এগুলো সামাজিকভাবে সমাধানের পর্যায়ে রয়েছে। তাছাড়া শিক্ষার্থীদের দিয়ে মানববন্ধনের দিন ৯ জুলাই সোমবার আমি ছুটিতে ছিলাম। ওইদিন বিদ্যালয়ের দায়িত্বে ছিলেন সহকারী শিক্ষক পারভীন আক্তার। ক্লাসের সময় বিদ্যালয়ের শিশু শিক্ষার্থীদের দিয়ে মানববন্ধন বিষয়ে জানতে চাইলে পারভীন আক্তার বলেন, অভিভাবকরা এসে তাদের বাচ্চাদের বের করে নিয়ে মানববন্ধন করেছেন। আমরা কাউকে মানববন্ধনে পাঠাইনি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মাধ্যমিক ও প্রাথমিক বিদ্যালয়ের কয়েকজন প্রধান শিক্ষক বলেন, মাধ্যমিক ও প্রাথমিক বিদ্যালয় সমূহে ম্যানেজিং কমিটি গঠনের গুঞ্জন শুরু হলেই নিজেদের মতো করে লবিং, গ্র“পিং ও দলীয়করণ করতে মরিয়া হয়ে উঠেন পদ-পদবী প্রাপ্তরা। নির্বাচিত চার জন্য সদস্য নির্বাচনে ভোট গ্রহণের পূর্বে অর্থ ব্যয় থেকে শুরু করে নেপথ্যে থেকে সকল কার্যক্রম তারাই চালিয়ে যান। পরবর্তীতে সভাপতি নির্বাচনের পূর্বে দলীয়করণ, প্রভাব বিস্তার, লবিং, গ্র“পিং ও উত্তেজনা দেখা দেয়। ইতিপূর্বে উপজেলার পতনঊষার উচ্চ বিদ্যালয়, হাজী মোঃ উস্তওয়ার বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় এবং শ্রীসূর্য্য, গুঞ্জরকান্দি ও লক্ষ্মীপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে কমিটি গঠনে ব্যাপক গ্রুপিং, লবিং ও উত্তেজনার মধ্যদিয়েই কমিটি গঠিত হয়েছে। সম্প্রতি সময়ে কেছুলুটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে নতুন কমিটি গঠন নিয়ে গ্র“পিং, দ্বন্দ্ব ও উত্তেজনা চরমে রয়েছে। আর দু’পক্ষের উত্তেজনার বলি হচ্ছেন বিদ্যালয়ের কোমলমতি শিক্ষার্থীরা।
তবে কমলগঞ্জ উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মো. মোশারফ হোসেন বলেন, কেছুলুটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের দিয়ে মানববন্ধন করানো বিষয়ে আমার কাছে কোন অভিযোগ আসেনি বা কেউ জানায়নি। তাছাড়া আমি যেটুকু জানি ওই বিদ্যালয়ে কিছুটা সমস্যা সৃষ্টি হলেও সেটি স্থানীয়ভাবে সমাধানের প্রক্রিয়া চলছে।
কমলগঞ্জ উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা শামসুন্নাহার পারভীন বলেন, আসলে সভাপতি নির্বাচনের ক্ষেত্রে শিক্ষাগত যোগ্যতার কোন মাপকাটি না থাকার কারণে অনেক সময় দু’পক্ষের টানাপোড়েন থাকে। তবে এমন কোন সমস্যা দেখা দেয়নি।
কমলগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ মাহমুদুল হক বলেন, আসলে বিধিবিধান অনুযায়ী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে এক পর্যায়ে আর প্রাথমিক বিদ্যালয় সমূহে আরেক পর্যায়ে কমিটি গঠন করা হয়। যতো সমস্যাই হোক না কেন এসব বিধি বিধানের মাধ্যমেই কমিটি গঠন করা হয়। তাছাড়া কেছুলুটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের দিয়ে মানববন্ধন করানোর বিষয়ে কেউ কোন ধরণের অভিযোগ দেয়নি। তারপরও সেটি খতিয়ে দেখা হবে।