প্রথম সেমির লড়াই আজ ॥ ফরাসী সৌরভ নাকি বেলজিক বিপ্লব?

253

স্পোর্টস ডেস্ক :
রাশিয়া বিশ্বকাপের শেষ চারের লড়াই শুরু আজ। ২০১৮ বিশ্বকাপের প্রথম সেমিফাইনালে বেলজিয়ামের মুখোমুখি ফ্রান্স। দুই দিনের বিরতি শেষে গোটা দুনিয়ার ফুটবলপ্রেমীদের দৃষ্টি আবার রাশিয়ার সেন্ট পিটার্সবার্গে। এখানেই যে রচিত হবে বেলজিয়ামের নতুন ইতিহাস কিংবা ফরাসী ফুটবলের পুনঃজন্ম! বাংলাদেশ সময় রাত ১২টায় শুরু হওয়া ফ্রান্স-বেলজিয়ামের মহারণ সরাসরি সম্প্রচার করবে বিটিভি, নাগরিক টিভি এবং মাছরাঙা টেলিভিশন।
ইতিহাস-ঐতিহ্যে সমৃদ্ধ ফরাসী ফুটবল। ষষ্ঠবারের মতো বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে পৌঁছেছে তারা। যদিওবা শেষ চারের আগের পাঁচ লড়াইয়ের তিনটিতেই হেরেছে ফরাসীরা। ২০০৬ সালে পর্তুগালকে হারিয়ে সর্বশেষ বিশ্বকাপের ফাইনালেও জায়গা করে নেয় তারা। তবে ফরাসী ফুটবলের সেরা সাফল্যটা দেখেছে ১৯৯৮ সাল। সেবারই যে প্রথম বিশ্বকাপের স্বপ্নের ট্রফিটাকে উঁচিয়ে ধরেছিলেন অঁরি-দেশমরা। ১২ বছর আগে জার্মানি বিশ্বকাপেও সেই সুযোগ এসেছিল তাদের। কিন্তু ফরাসীদের স্বপ্ন খুন করে সেই বিশ্বকাপের চ্যাম্পিয়ন হয় ইতালি। দীর্ঘ এক যুগ পর আবারও বিশ্বকাপের ময়দানে ফেবারিটের ‘ট্যাগ’ লাগানো ফ্রান্সের।
অসাধারণ পারফর্মেন্স উপহার দিয়ে রাশিয়া বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে জায়গা করে নিয়েছে দিদিয়ের দেশমের দল। টুর্নামেন্টের শুরু থেকেই ফরাসী সৌরভ ছড়িয়েছেন কিলিয়ান এমবাপে, এ্যান্টনি গ্রিজম্যান, রাফায়েল ভারানে কিংবা পল পোগবাদের মতো একঝাঁক তারকা। গ্রুপ পর্ব, শেষ ষোলো কিংবা কোয়ার্টার ফাইনাল-রাশিয়া বিশ্বকাপের পুরোটা সময়ই প্রতিপক্ষের জন্য ফ্রান্স ছিল এক আতঙ্কের নাম! গ্রুপ পর্বের কোন ম্যাচেই হার দেখেনি তারা। নকআউট পর্বেও দিদিয়ের দেশমের শিষ্যরা ছিল দুর্বার! দ্বিতীয় রাউন্ডে আর্জেন্টিনাকে বিদায় করে শেষ আট থেকে ছিটকে দিয়েছে লাতিন আমেরিকার আরেক শক্তিধর ক্ষমতার অধিকারী উরুগুয়েকেও।
তবে ফ্রান্সের কঠিন পরীক্ষাটা আজ, বেলজিয়ামের বিপক্ষে ম্যাচেই। এই ম্যাচটাকেই বলা হচ্ছে ফাইনালের আগে ‘ফাইনাল’! একযুগ পর শিরোপা কী পুনরুদ্ধার করতে পারবে প্লাতিনি-জিদানের উত্তরসূরীরা? সেজন্য আরও দুটি ম্যাচ ফরাসীদের সামনে। তবে আজ জিতলেই তা অনেকটা সহজ হয়ে যাবে বলে মনে করছেন ফুটবলবোদ্ধারা। সেটা দেখতেই যেন উন্মুখ হয়ে রয়েছেন ফরাসী সমর্থকরা। প্রতিপক্ষ যেহেতু বেলজিয়াম তাই বেশ সতর্ক দিদিয়ের দেশম। সেমিফাইনালের আগেই দলকে সতর্ক করে দিয়েছেন তিনি। শিষ্যদের সাফ বলে দিয়েছেন দেশম, ‘বেলজিয়াম কতটা শক্তিশালী দল, তারা তা প্রমাণ করেছে। বড় বড় জনপ্রিয় দলগুলোকে পেছনে ফেলে সেমিফাইনালে উঠে এসেছে তারা। আমাদের লক্ষ্যের পথে বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে বেলজিয়াম। তবে আমরা সতর্ক। এ বিষয়টিই ভালভাবে দলের খেলোয়াড়দের বুঝাতে চেষ্টা করছি আমি।’
দেশমের লক্ষ্য প্রতিপক্ষকে কোন সুযোগ না দিয়ে বরং চাপে রাখা। তিনি বলেন, ‘বেলজিয়ামের বিপক্ষে আমাদের ম্যাচটি অনেক বেশি চ্যালেঞ্জিং। দারুণ সব ম্যাচ জিতে শেষ আটে এসেছে তারা। এখানেও চমক দেখাতে মুখিয়ে আছে বেলজিয়াম। কিন্তু আমরা তাদের চমকের শিকার হতে চাই না। আমরা বেশ সতর্ক। বেলজিয়ামকে কোন ধরনের সুযোগ দিতে রাজি নই। বরং শুরুতেই তাদের চাপে ফেলাই হবে আসল উপায়।’ অতীত ভুল বিশেষ করে উরুগুয়ের বিপক্ষে ম্যাচ থেকেও শিক্ষা নিয়েছেন দেশম। তিনি বলেন, ‘এক ভুল বার বার করা যাবে না। দলের সবাইকে ভুলগুলো ধরিয়ে দিচ্ছি, আর বুঝাচ্ছিÑ বেলজিয়ামের বিপক্ষে মোটেও ওই ভুল করা যাবে না।’
এদিকে রাশিয়ার আগে একবারই মাত্র বিশ্বকাপের সেমিফাইনাল খেলেছে বেলজিয়াম। ১৯৮৬ সালে। সেই বিশ্বকাপে ফ্রান্সের কাছে হেরে চতুর্থ হয়েছিল বেলজিয়াম। এবার শেষ চারে সেই ফ্রান্সকে পেল রবার্তো মার্টিনেজের দল। রাশিয়া বিশ্বকাপে বেলজিয়াম কী পারবে নিজেদের অতীত সাফল্যকে ছাড়িয়ে যেতে? ফুটবল দুনিয়ায় সেটাই আজ মূল আলোচনায়।
তবে বেলজিয়ামের এই দলটাকেই ‘সোনালি প্রজন্ম’র আখ্যা দিয়েছেন ফুটবল বিশেষজ্ঞারা। শুরু থেকেই দুর্দান্ত ফুটবল খেলেছেন দলের খেলোয়াড়রা। গ্রুপ পর্বের তিন ম্যাচের সবকটিতেই জয়ের স্বাদ পেয়েছে বেলজিয়াম। গতি ছিল তাদের খেলায়। শেষ ষোলোতে জাপানের বিপক্ষে পিছিয়ে পড়েও রোমাঞ্চকর জয় নিয়ে কোয়ার্টার ফাইনালে ওঠে তারা। শেষ আটে বড় খেলাটা দেখিয়েছে এই বেলজিয়ামই। যেখানে ব্রাজিলের মতো দলকে হারিয়ে দেয় দেয় হ্যাজার্ড-লুকাকুরা। কোয়ার্টার ফাইনালে ব্রাজিলকে হারিয়ে ৩২ বছর পর দ্বিতীয়বারের মতো বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে উঠেছে বেলজিয়াম। ইডেন হ্যাজার্ড, রোমেলু লুকাকু, কেভিন ডি ব্রুইন কিংবা মারোয়ান ফেলাইনির মতো অসাধারণ খেলোয়াড়দের নিয়ে গড়া রবার্তো মার্টিনেজের দল। ফ্রান্সের বিপক্ষে ম্যাচটা অনেকে সেয়ানে সেয়ানে টক্কর বলেও মন্তব্য করছেন।
বিশ্বকাপের গ্রুপ পর্বের প্রথম দুই ম্যাচেই চার গোল করেছেন রোমেলু লুকাকু। শেষ ষোলো আর কোয়ার্টার ফাইনালে অবশ্য গোলের দেখা পাননি তিনি। তবে প্রথম সেমিফাইনালে ফ্রান্সের বিপক্ষেই গোল পাবেন বলে আত্মবিশ্বাসী ম্যানইউ তারকা। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘শেষ দুই ম্যাচে গোল করতে পারিনি। তবে সতীর্থদের দিয়ে গোল তো করিয়েছি। ফ্রান্সের বিপক্ষে গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচেই গোল করব। আমরা পুরো টুর্নামেন্টেই ভাল ফুটবল খেলেছি।, আক্রমণাত্মক ফুটবলশৈলীকেই আমরা সবচেয়ে বেশি প্রাধান্য দিয়েছি। আমরা ফ্রান্সের বিপক্ষেও আক্রমণাত্মক খেলা খেলব। যাতে তারা আমাদের ওপর চাপ সৃষ্টি করতে না পারে।’ তাদের গোলরক্ষক থেকে আক্রমণভাগ, সব বিভাগেই তারা সেরা পারফর্ম করেছে। তাদের চেয়ে ভাল খেলতে পারলে জয় আমাদেরই হবে। কিন্তু কাজটা মোটেও সহজ হবে না। আমাদের জন্য সামনে কঠিন চ্যালেঞ্জ অপেক্ষা করছে।’
পরিসংখ্যান ঘেঁটে দেখা যায় ইউরোপের দুই প্রতিবেশী বেলজিয়াম ও ফ্রান্সের মুখোমুখি লড়াইয়ের ইতিহাসটা যথেষ্ট দীর্ঘ। ৭৩ বার এর আগে একে অপরের মুখোমুখি হয়েছে এই দুই দল। সেখানে ফরাসীদের জয় ২৪ আর বেলজিয়ানদের ৩০। বাকি ১৯ ম্যাচ ড্র।