মন্ত্রীসভার বৈঠকে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ ॥ দূরপাল্লার চালকরা পাঁচ ঘণ্টার বেশি একটানা গাড়ী চালাতে পারবেন না

71

কাজিরবাজার ডেস্ক :
দূরপাল্লায় চালকরা যেন পাঁচ ঘণ্টার বেশি একটানা গাড়ি না চালান, তা নিশ্চিত করার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বিষয়টি তদারকি করবেন পরিবহন শ্রমিক নেতা নৌমন্ত্রী শাজাহান খানসহ তিন জন মন্ত্রী।
ঢাকা থেকে উত্তরবঙ্গের প্রায় প্রতিটি রুটেই যাত্রার সময় পাঁচ ঘণ্টার বেশি হয়ে যায়। ঢাকা-চট্টগ্রাম রুটেও এমনটি হয়ে যায়। তাই এসব রুটে বিকল্প চালক রাখার ব্যবস্থা হচ্ছে বাসে। একজন পরিবহন বিশেষজ্ঞ সরকারের এই চিন্তার প্রশংসা করে এগুলো বাস্তবায়নের জন্য বিভিন্ন রুটে গাড়িগুলোকে একটি কোম্পানির অধীনে এনে চালানোর পরামর্শ দিয়েছেন। তার মতে এতে শৃঙ্খলা নিশ্চিত করা সহজ হবে।
সোমবার প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে মন্ত্রিসভার নিয়মিত বৈঠকে এই নির্দেশ দেন শেখ হাসিনা। বৈঠক শেষে সচিবালয়ে ব্রিফিংয়ে এই তথ্য নিশ্চিত করেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব শফিউল আলম।
সড়ক দুর্ঘটনার জন্য যেসব কারণ চিহ্নিত করা হয় তার একটি হলো চালকদের পর্যাপ্ত বিশ্রামের অভাব। টানা গাড়ি চালাতে গিয়ে ক্লান্ত চালকরা প্রায়ই গাড়ির নিয়ন্ত্রণ হারান বলে নানা সময় দুর্ঘটনার পর জানা গেছে। আর পরিবহন বিশেষজ্ঞরা এই বিষয়টির ওপর বরাবর জোর দিয়ে আসছেন।
সড়ক দুর্ঘটনা রোধে দুর্ঘটনা প্রবণ এলাকায় সড়কের ‘ব্ল্যাক স্পট’ সংস্কার, সড়ক বিভাজক তৈরি, দুই লেনের সড়ক চার লেনে উন্নীত করা, গাড়ির ফিটনেসের ওপর জোর দেয়া, যান চলাচলে শৃঙ্খলার বিষয়টি নিয়ে নানা উদ্যোগ এবং আলোচনা থাকলেও চালকদের বিশ্রামের বিষয়টি এতদিন সেভাবে গুরুত্ব পায়নি।
মন্ত্রিসভার বৈঠকে সড়ক দুর্ঘটনা রোধে প্রধানমন্ত্রী কিছু অনুশাসন দিয়েছেন উল্লেখ করে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী ড্রাইভার ও হেলপারদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করার জন্য বলেছেন। দূরপাল্লায় বিকল্প ড্রাইভারের ব্যবস্থা রাখতে হবে। কোনো চালক একটানা পাঁচ ঘণ্টার বেশি গাড়ি চালাতে পারবেন না।’
সচিব বলেন, ‘রাস্তার পাশে চালকদের বিশ্রামাগার করতে হবে। ঝুঁকি নিয়ে রাস্তা পারাপার বন্ধ করতে হবে। রাস্তায় সিগন্যাল মানতে হবে। যাত্রী ও চালকদের সিটবেল্ট বাঁধতে হবে।’
সচিব জানান, সভার শুরুর আগে টাঙ্গাইলের সড়ক দুর্ঘটনায় ৬ জন নিহত হয়েছেন। এ প্রসঙ্গে টেনে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সড়ক দুর্ঘটনা সরকারকে ভাবিয়ে তুলেছে। এরপর তিনি দুর্ঘটনা প্রতিরোধে ছয়টি নির্দেশনা দেন। এগুলো হলো, ১. বাসের চালক ও হেলপারদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে। ২. লং রুট বা দীর্ঘ পথে কখনোই একজন চালক ৫ ঘণ্টার বেশি গাড়ি চালাতে পারবেন না। সেক্ষেত্রে বিকল্প ড্রাইভারের ব্যবস্থা করতে হবে। ৩. রাস্তার পাশে চালক ও হেলপারদের জন্য বিশ্রামাগার নির্মাণ করতে হবে। যেখানে তারা বিশ্রাম নিতে পারবেন এবং সেখানে তাদের আপ্যায়নের ব্যবস্থাও রাখতে হবে। ৪. যাত্রীদের অনিয়ন্ত্রিত রাস্তা পারাপার বন্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে। ৫. সড়ক পথের সিগন্যাল শতভাগ মেনে চলাতে হবে। সবাই যাতে সিগন্যাল মেনে চলে তার ব্যবস্থা করতে হবে। ৬. প্রত্যেক পরিবহনে চালক ও যাত্রীদের সিটবেল্ট বেঁধে রাখতে হবে। সিটবেল্ট না থাকলে তার ব্যবস্থা করতে হবে।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী এবং নৌ পরিবহনমন্ত্রীকে বসে এ বিষয়ে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেয়ারও নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।
চমৎকার অনুশাসন: বিশেষজ্ঞ
মন্ত্রিসভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যেসব অনুশাসন দিয়েছেন, সেগুলোকে এক কথায় চমৎকার বলেছেন বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের দুর্ঘটনা গবেষণা কেন্দ্র-এআরআই এর সাবেক পরিচালক শামসুল হক।
এই বিশেষজ্ঞ ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘এগুলো আরও আগেই বিআরটিএর দেয়া উচিত ছিল। উন্নত বিশ্বে চালকরা কতক্ষণ একটানা গাড়ি চালাবেন, সে বিষয়ে নিয়ম কানুন রয়েছে এবং সেগুলো কঠোরভাবে মানা হয়। কিন্তু বাংলাদেশেই এই বিষয়গুলো গুরুত্ব পায়নি।’
তবে প্রধানমন্ত্রীর এই নির্দেশ বাস্তবায়নে চ্যালেঞ্জ রয়েছে বলেও মনে করেন শামসুল হক। বলেন, ‘আমাদের এখানে লাখ লাখ গাড়ি, মালিকদের কারা এসব মানাতে বাধ্য করবেন? আমার মতে প্রতি মালিকের আলাদা গাড়ির বদলে যদি কোম্পানি করা যায়, তাহলে নীতিমালা বাস্তবায়ন করা সহজ হবে।’