আওয়ামীলীগের বর্ধিত সভায় শেখ হাসিনা ॥ অনুপ্রবেশকারীদের দ্রুত বিদায় দিন

66

কাজিরবাজার ডেস্ক :
দল ভারী করতে যারা অন্য রাজনৈতিক শক্তি থেকে নেতাকর্মী আনেন তাদের সাবধান করে দিলেন শেখ হাসিনা। বিভিন্ন দল থেকে এমন যারা দলে এসেছে তাদের তালিকা রয়েছে জানিয়ে তাদেরকে দ্রুত বিদায় দেওয়ারও নির্দেশ দিয়েছেন তিনি।
শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘যারা আমাদের দলের বিরুদ্ধে কথা বলবে, বদনাম করবে তিনি কি বুঝেন না এতে তারও ভোট কমছে? পাঁচবছর-পাঁচবছর দশবছর ক্ষমতায় থাকার পরও যদি দলের বিরুদ্ধে বদনাম করে জনগণ তো তাকেও ভোট দেবে না। তিনি কোন মুখে ভোট চাইতে যাবেন?’
শনিবার আওয়ামী লীগের ৬৯তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে গণভবনে দলের বিশেষ বর্ধিত সভায় দলের নেতাদের উদ্দেশ্যে আওয়ামী লীগের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এসব কথা বলেন।
নেতাদের উদ্দেশে শেখ হাসিনা বলেন, ‘সারাদেশে আমরা যে উন্নয়ন করছি সে কথা বলতে হবে। হ্যাঁ, প্রার্থী হতে পারে, যে কারো প্রার্থী হবার অধিকার আছে। কিন্তু সেই প্রার্থী হতে গিয়ে, আমার দলকে বদনামে ফেলবে, আমি কিন্তু এটা কোনোভাবেই মেনে নেবো না। এটা সবাইকে মাথায় রাখতে হবে।’ বর্তমান সংসদ সদস্যদের উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, ‘একটা কথা মাথায় রাখবেন- আপনাদের বলবো জনগণ কিন্তু খুব হিসেবি। কেউ দুর্নীতি করলে জনগণ কিন্তু তা মনে রাখে। কেউ কিন্তু ভুলে যায় না। ওই কাজ করতে গিয়ে টাকা নিলে, তারপর ভোট চাইতে গেলে বলবে, টাকা দিয়ে কাজ করেছি ভোট দিবো কেন?’
‘জনগণের কিন্তু চোখ খুলে গেছে। এখন ডিজিটাল যুগ। তারা সবকিছু জানতে পারে। যারা এমপি আছেন তারা নমিনেশন পাবেন কি পাবেন না তা নির্ভর করছে এলাকায় কে কতটুকু জনপ্রিয়তা অর্জন করতে পেরেছেন, আর কতটুকু আমাদের নেতাকর্মীকে মূল্যায়ন করেছেন, সেটাও কিন্তু আমি বিবেচনা করবো।’
আওয়ামী লীগ যেহেতু ক্ষমতায় তাই বিভিন্ন দল থেকে অনেকেই ছুটে আসবে। এরা মধু খেতে আসে মন্তব্য করে এমন কারা কারা দলে এসেছেন তার তালিকা রয়েছে বলে জানান প্রধানমন্ত্রী। এদেরকে প্রশ্রয় দিয়ে থাকলে দ্রুত বিদায় দেওয়ারও নির্দেশ দেন তিনি।
বলেন, ‘আমি একটা সার্ভে করে দেখেছি, যেহেতু আমরা ক্ষমতায় বিভিন্ন দল থেকে অনেকেই ছুটে আসবে দলে। গ্রুপ করার জন্য কোনও বাছবিচার নাই যাকে পাচ্ছে তাকে নিয়ে নিজের শক্তি দেখাতে চায়। এরা আসে মধু খেতে। যাদের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে তারা ভাবে এখানে (আওয়ামী লীগ) এলে মামলা থেকে বাঁচতে পারবে। ক্ষমতার সঙ্গে থাকলেই তো পয়সা বানাতে পারবে।’
‘সারাদেশে সার্ভে (জরিপ) করেছি কাদের কাদের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে, আর তাদের কারা কারা আমাদের দলে এসেছে। সেই তালিকা কিন্তু আমার কাছে আছে। তাই বলবো- যদি কেউ তাদের প্রশ্রয় দিয়ে থাকেন, তাহলে এখনই তাদের বিদায় করেন। কারণ তারা তাদের দুঃসময়ে থাকবে। বরং বলবো, অনেকেই আসবে তারাই এসে আপনাদের মধ্যে কোন্দল করে খুন করবে, পরে নাম হবে দলের মানুষ দলের মানুষকে খুন করেছে।’
এসব বিষয় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের যথেষ্ট সজাগ থাকতে হবে, সহনশীল হতে হবে বলে নিদের্শনা দেন তিনি।
বলেন, ‘এটা মনে করবেন না যে, দলের লোক আপন না, ওই বাইরের লোক আপন হয়ে গেছে। এটা মাথায় রেখেই আপনাদের চলতে হবে।’
আগামী জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে সরকারের উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের কথা জনগণের কাছে প্রচার করতেও নেতাকর্মীদের প্রতি আহ্বান জানান শেখ হাসিনা।
‘আপনাদের কাছে আমি বিশেষভাবে এইটুকু চাইবো, যেসব কাজ আমরা করেছি, সে কথাগুলো আপনাদের জনগণের কাছে পৌঁছে দিতে হবে। আমরা বিভিন্ন রকমের স্লোগান দিচ্ছি। কিন্তু সেগুলো জনগণের কাছে দলের পক্ষ থেকে পৌঁছে দিতে হবে। আমাদের বলতে হবে যে, আমরা এই কাজ করছি, এই কাজ করবো।’
আওয়ামী লীগ যে কথা দেয় সে কথা রাখে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘২০০৮ সালের নির্বাচনের আগে যে ইশতেহার দিয়েছিলাম, সেখান থেকে অনেক দূর আমরা এগিয়ে নিয়ে গেছি। আবার ২০১৪ সালের নির্বাচনী ইশতেহারে আওয়ামী লীগ যে কথা দেয় সেকথাও রাখে।’
‘সামনে আমাদের নির্বাচন। আমাদের মাথায় রাখতে হবে নির্বাচন মানেই চ্যালেঞ্জিং হবে। কাজেই এই নির্বাচনে এটা কিন্তু আমাদের একটানা তৃতীয়বার নির্বাচন। এতে কিন্তু সবাইকে এক হয়ে কাজ করতে হবে।
আগামী জাতীয় নির্বাচনকে কেন্দ্র করে কেউ কেউ নিজ থেকে প্রার্থী হয়ে গেছেন মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমি একটা জিনিস লক্ষ্য করেছি ইতোমধ্যে দেখা যায় কেউ কেউ স্বপ্রণোদিত হয়ে প্রার্থী হয়ে গেছেন। আর প্রার্থী হয়ে তারা বক্তব্যে বিএনপি যে লুট করেছে সেসব কথা বলছে না। সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদ বিএনপি সৃষ্টি করেছে সে কথাও বলছে না। তাদের বক্তব্যে এসে যায় আওয়ামী লীগের এমপির বিরুদ্ধে, সংগঠনের বিরুদ্ধে।’
‘পরিষ্কার কথা। আমি রেকর্ড করছি। ডিজিটাল বাংলাদেশ। বক্তৃতা করার সময় মোবাইল ধরলেই আমি কিন্তু শুনি। মোবাইল ধরি না কিন্তু দিনে চারশ-পাঁচশ ম্যাসেজ (এসএমএস) আসে। যখনই সময় পাই তখনই এগুলো পড়ি। সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করি।’
‘সুসময়ে অনেকে বন্ধু বটে হয়, দুঃসময়ে হায় হায় কেউ কারো নয়’- কবিতার চরণ দুইটি উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আওয়ামী লীগের ওপর অনেক ঝড়ঝাপটা গেছে। একটা জিনিস খেয়াল করতে হবে দুঃসময়ের কর্মীরা যাতে অবহেলিত না হয়।’
‘কি পেলাম আর কি পেলাম না’ এমন মনোভাবের পরিবর্তে আগামীতে ‘কি দিতে পারবো’ এমন ত্যাগের মনোভাব নিয়ে নেতাকর্মীদের কাজ করার পরামর্শ দেন আওয়ামী লীগ সভাপতি।