স্বাভাবিক হচ্ছে মৌলভীবাজারের জনজীবন, ভেসে উঠছে ক্ষয়ক্ষতির চিহ্ন

35

মৌলভীবাজার থেকে সংবাদদাতা :
আকস্মিক বন্যা কাটিয়ে স্বাভাবিক হচ্ছে মৌলভীবাজারের জনজীবন। দ্রুত গতিতে পানি নামছে প্লাবিত এলাকা থেকে। বাড়িঘরে ফিরতে শুরু করেছেন নিরাপদ আশ্রয়ে থাকা মানুষ। তবে পানি যত নামছে ভেসে উঠছে ক্ষয়ক্ষতির চিহ্ন।
জানা যায়, জেলার কুলাউড়া রাজনগর, কমলগঞ্জ ও সদর উপজেলার ১২টি ইউনিয়নের প্লাবিত এলাকার বেশিরভাগ স্থান থেকেই পানি নেমে গেছে।
রাজনগর কামারচাক ইউনিয়ন, কুলাউড়ার হাজিপুর ইউনিয়ন, কমলগঞ্জ পতনউষার ইউনিয়নের কয়েকটি এলাকায় এখনো পুরোপুরিভাবে পানি না নামলেও আগামী দুই থেকে তিনদিনের মধ্যে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে বলে জানিয়েছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তারা।
জেলা প্রশাসনের তথ্যমতে এখন পর্যন্ত বন্যা কবলিত এলাকাগুলোতে ১১শ’ ৬৭ মেট্রিকটন চাল, নগদ ১৩ লাখ ৪০ হাজার টাকা ও ৫ হাজার প্যাকেট শুকনো খাবার বিতরণ করা হয়েছে। বিচ্ছিন্ন এলাকায় ত্রাণ পৌঁছে দিতে তৎপর রয়েছে প্রশাসন।
সরেজমিনে কয়েকটি এলাকা ঘুরে দেখা যায়, পানি নেমে যাওয়াতে রাস্তাঘাট, ঘর-বাড়ি, স্কুল-কলেজ, মসজিদ-মন্দিরসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনার ক্ষয়ক্ষতি স্পষ্ট হচ্ছে। অনেকের বাড়ি পানিতে তলিয়ে থাকায় গুরুত্বপূর্ণ মালামাল নষ্ট হয়ে গেছে। আঞ্চলিক মহাসড়ক থেকে শুরু করে গ্রামীণ রাস্তাঘাটে ভাঙন ও ফাটল দেখা দিয়েছে। বেশিরভাগ পাকা সড়কের পিচ উঠে গিয়ে খানাখন্দ দেখা দিয়েছে। কোথাও আবার রাস্তার পাশ ভেঙে সংকীর্ণ হয়ে গেছে। স্কুল কলেজের আসবাবপত্র ও ভবনের বেশ ক্ষতি হয়েছে। ফলে বন্যা পরবর্তী সময়ে মানুষের দুর্ভোগ বেড়েই চলছে।
তবে এরই মধ্যে রাস্তাঘাটের সংস্কার কাজ শুরু করেছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। যেসব এলাকায় ভাঙন দেখা দিয়েছে সে জায়গায় মেরামত করে যানবাহন চলাচলের উপযোগী করা হচ্ছে। গ্রামীণ রাস্তা মেরামত করে ত্রাণ পৌঁছে দেয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে। কিন্তু ঘরমুখো মানুষের পুনর্বাসনের কাজ এখনো শুরু না হওয়াতে বেকায়দায় পড়েছেন বন্যা কবলিতরা।
মেরামত কাজ চলছেএদিকে মৌলভীবাজার শহরে বড়হাট এলাকাসহ কয়েকটি এলাকায় স্থানীয়দের সহযোগিতায় ভাঙন এলাকায় বাঁধ মেরামত কাজ শুরু করেছে পানি উন্নয়ন বোর্ড।
সরেজমিন পৌরসভার বড়হাট এলাকায় দেখা যায়, (১৯ জুন) স্থানীয়রা বাঁধের মুখ বন্ধ করে পানি প্রবেশ বন্ধ করেছেন। আজ বাঁধটি মেরামতের কাজ শুরু করেছে পাউবো ও পৌরকর্তৃপক্ষ। এতে স্বেচ্ছাশ্রমে এগিয়ে এসেছেন স্থানীয়রা।
বাঁধ দিয়ে পানি প্রবেশ বন্ধ করলেও পৌরসভার ৬, ৮ ও ৯ নম্বর ওয়ার্ডের কয়েকটি আবাসিক এলাকার নিম্নাঞ্চলের পানি নামতে পারছে না। ফলে স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে প্রতিবন্ধকতা দেখা দিয়েছে পৌরবাসীর।
বড়হাট এলাকার আফতাব মিয়া বলেন, ঢলের পানি আসা বন্ধ হলেও বাসাবাড়ির আশপাশে জলাবদ্ধতা রয়েছে, কিছু রাস্তায় এখনো পানি আছে। ফলে আমাদের স্বাভাবিক চলাচলে অসুবিধা হচ্ছে।
এ ব্যাপারে পৌর মেয়র ফজলুর রহমান বলেন, আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করে বাঁধ দিয়ে পানি প্রবেশ বন্ধ করেছি। আজ বাঁধটি মেরামত করা হচ্ছে। কিন্তু যেসব এলাকায় জলাবদ্ধতা রয়েছে সেসব এলাকায় সেচ দিয়ে পানি বের করে দিতে হবে। নতুবা ১০ থেকে ১৫ দিন অপেক্ষা করতে হবে। এজন্য আমরা বিকল্প চিন্তা করছি।
এদিকে বন্যার পানি নামলেও দুর্ভোগ কমেনি চার উপজেলার বন্যা দুর্গতদের। বিশুদ্ধ পানি সংকট রয়েছে বানভাসিদের। রাস্তাঘাট ও ঘর বাড়ি ভেঙে যাওয়াতে বেকায়দায় রয়েছেন তারা। নিম্নাঞ্চল প্লাবিত থাকায় গোখাদ্য সংকট দেখা দিয়েছে। ২ হাজার ৬০ হেক্টর এলাকার ধানক্ষেত বিনষ্ট হওয়াতে হতাশ হয়েছেন কৃষক পরিবার।
কমলগঞ্জ উপজেলার পতনঊষার এলাকার বাসিন্দা রমজান আলী বলেন, রাস্তাঘাট থেকে পানি নামলেও নিম্ন এলাকায় এখনো প্রচুর পানি রয়েছে। আশ্রয় কেন্দ্র থেকে ঘরে ফিরে আসতে চাইছি কিন্তু পানি নামায় ঘরের অবস্থা খুব খারাপ দেখছি। এ অবস্থায় ছেলে-মেয়ে নিয়ে বাড়ি ফিরতে পারছিনা।
একই এলাকার আফসা বেগম বলেন, ঘর বাড়ি থেকে পানি নেমেছে কিন্তু রাস্তাঘাট ভাঙা হওয়াতে যাতায়াত করতে অসুবিধা হচ্ছে। মাঠে গরু-ছাগল চরানোর সুযোগ নেই। এদের খাদ্য সংকট দেখা গিয়েছে।
এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মাহমুদুল হক বলেন, এখন পর্যন্ত আমরা যা ত্রাণ বিতরণ করেছি তাতে মানুষের চাহিদা মিটানো সম্ভব হয়েছে। আজ থেকে পুনর্বাসনের কাজ শুরু করেছি। আশা করছি দু’একদিনের মধ্যে সব মানুষকে নিশ্চিতভাবে ঘরে ফিরিয়ে দেয়া যাবে।
জেলা প্রশাসক (ডিসি) মো. তোফায়েল ইসলাম বলেন, আমাদের লক্ষ্য ছিল কোনো মানুষ যাতে সাহায্য সহযোগিতার অভাবে বানের জলে ভেসে না যায়। সেই লক্ষ্য আমরা পূরণ করেছি। সব এলাকার মানুষকে নিরাপদে নিয়ে ত্রাণ দিয়েছি। এখন পর্যন্ত ত্রাণ দেয়া হচ্ছে। বিচ্ছিন্ন এলাকাগুলোতে এখনো ত্রাণ তৎপরতা অব্যাহত রয়েছে। এখন পুনর্বাসনের কাজ শুরু করব। বন্যা পরিস্থিতি এখন স্বাভাবিক হয়ে গেছে। পানি নেমে যাওয়ায় ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নির্ধারণের কাজ চলছে।