আজমিরীগঞ্জে আ’লীগের বর্ধিত সভায় হামলা ও সংঘর্ষের ঘটনা ॥ নিহতের ময়নাতদন্ত সম্পন্ন, উপজেলা সভাপতিসহ আটক ১১

94

হবিগঞ্জ থেকে সংবাদদাতা :
হবিগঞ্জের আজমিরীগঞ্জে আওয়ামী লীগের বর্ধিত সভায় দু’পক্ষের হামলা পাল্টা হামলায় সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আতর আলী মিয়ার ছেলে নিহত আল-আমিন মিয়ার ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয়েছে। মঙ্গলবার দুপুরে সদর আধুনিক হাসপাতাল মর্গের তার ময়নাতদন্ত সম্পন্ন করা হয়। এদিকে উক্ত ঘটনায় জেলা আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা কাকাইলছেও ইউপি চেয়ারম্যান নূরুল হক ভূঁইয়া ও উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি মিসবাহ উদ্দিন ভূইয়াসহ ১১ জনকে আটক করা হয়েছে। আটককৃতদের হবিগঞ্জ সদর থানায় সেইভ কাস্টরিতে রাখা হয়েছে বলে জানান আজমিরীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. ইকবাল হোসেন। তিনি বলেন, তাদের কাউকেই এখনও গ্রেফতার করা হয়নি। নিহতের পরিবার মামলা দায়েরের প্রস্তুতি নিচ্ছে। মামলা দায়েরের পর বলা যাবে কাদেরকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
এ ব্যাপারে ময়নাতদন্তকারী চিকিৎসক সদর হাসপাতালের মেডিকেল অফিসার ডা. দেবাশীষ দাশ জানান, রাসায়নিক পরিক্ষার জন্য তার শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ প্রত্যঙ্গের নমুনা সংরক্ষণ করা হয়েছে। ভিসেরা রিপোর্ট পাওয়ার পর মৃত্যুর প্রকৃত কারণ জানা যাবে।
নিহতের চাচাতো ভাই মো. সাবিন মিয়া জানান, তৃণমূলের ভোটের মাধ্যমে প্রার্থী মনোনিত করার দাবি করেছিলেন আল-আমিন। এ জন্যই পরিকল্পিতভাবে তাকে হত্যা করা হয়েছে।
পুলিশ সূত্রে জানা যায়, আটককৃত জেলা আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা কাকাইলছেও ইউপি চেয়ারম্যান নূরুল হক ভূঁইয়া ও তার ভাই উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি মিসবাহ উদ্দিন ভূঁইয়া গুরুতর অসুস্থ হওয়ায় তাদেরকে সদর আধুনিক হাসপাতালে পুলিশ প্রহরায় চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। বাকিদের সদর থানায় আটক রেখে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। তবে তাদের কাউকেই এখনও গ্রেফতার দেখানো হয়নি।
প্রত্যক্ষদর্শী ও দলীয় সূত্রে জানা যায়, আজমিরীগঞ্জ উপজেলা চেয়ারম্যান আতর আলী মিয়া গত ৩০ এপ্রিল হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান। এরপর পদটি শূন্য ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশন। গত ১১ জুন এ উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে উপ-নির্বাচনের জন্য তফসিল ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশন। ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী ২৪ জুন মনোনয়নপত্র দাখিলের কথা। ২৬ জুন বাছাই, ৩ জুলাই প্রত্যাহার ও ২৫ জুলাই ভোট গ্রহণ। এ অবস্থায় আওয়ামী লীগের দলীয় প্রার্থী চূড়ান্ত করতে জেলা আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দ উপজেলা আওয়ামী লীগ নেতাদের ৩ জনের নাম প্রস্তাব করে প্রেরণের জন্য বলেন। এর প্রেক্ষিতে উপজেলা আওয়ামী লীগ সোমবার দুপুরে উপজেলা পরিষদের হলরুমে বর্ধিত সভায় বসে। উপজেলা সভাপতি মিসবাহ উদ্দিন ভূইয়ার সভাপতিত্বে ও ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মনোয়ার আলীর পরিচালনায় সভায় উপজেলা, পৌরসভা, ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড পর্যায়ের আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। সভায় সভাপতি মিসবাহ উদ্দিন ভূইয়া, জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মর্তুজা হাসান, সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান আতর আলী মিয়ার ছেলে আল-আমিন ও রানা রায় মনোনয়ন প্রত্যাশা করে নিজেরা প্রার্থী হওয়ার জন্য ঘোষণা দেন। কেউই ছাড় দিতে রাজি হননি। এ সময় মিসবাহ উদ্দিন ভূইয়া এবং আল-আমিনের মাঝে বাকবিতন্ডা হয়। এক পর্যায়ে সভায় হট্টগোল শুরু হলে একাধিক ভাগে বিভক্ত হয়ে নেতাকর্মীরা হামলা পাল্টা হামলায় জড়িয়ে পড়েন। এ সময় আল-আমিন ঘটনাস্থলে মারা যান। এ খবর ছড়িয়ে পড়লে তার পক্ষের লোকজন হামলা চালালে কয়েক দফায় হামলা পাল্টা হামলার ঘটনা ঘটে। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে। রাতে পুলিশ উল্লেখিতদের আটক করে।