ঈদ উদযাপন

39

ঈদুল ফিতরের ছুটি শেষ হয়েছে। অনেক ভোগান্তি সয়ে আত্মীয়স্বজনের সঙ্গে ঈদ উদযাপন করতে বাড়ি গিয়েছিল অসংখ্য মানুষ। সরকারি-বেসরকারি দপ্তরে চাকরিতে নিয়োজিত ব্যক্তিদের অনেকে ফিরেছেন। আবার অনেকে একা ফিরেছেন। পরিবার-পরিজন ফেরেনি, তাই গতকালও শহরগুলো ফাঁকা ছিল। বাকিরাও ফিরতি যাত্রা শুরু করেছে। আজ থেকে আবার ভিড় বাড়তে শুরু করবে রাজধানী ও অন্যান্য শহরে। তবে পুরোপুরি কর্মব্যস্ত হতে দিন কয়েক লেগে যাবে।
গতকাল সরকারি-বেসরকারি সব দপ্তরই খুলেছে। কর্মচারীদের ধারণা, এ সপ্তাহে সরকারি দপ্তরে উপস্থিতি কমই থাকবে। আগামী সপ্তাহের আগে অফিসপাড়া পুরো সচল হবে না।
কর্মজীবী মানুষ শহরে ফিরেছে বটে, তবে এ শহরের চেনা চেহারায় ফিরতে কয়েক দিন লাগবে। এবার ছুটি ছিল তিন দিন। বেশ কয়েক বছর ঈদের ছুটি ছিল চার দিন। আগে-পিছে সাপ্তাহিক ছুটিও ছিল। ফলে সাত-আট দিন ছুটি কাটানোর সুযোগ হয়েছিল। এবার শুক্র ও শনিবার ঈদের ছুটির মধ্যে পড়ে যাওয়ায় কার্যত ছুটি ছিল এক দিন। তাই আনন্দ উদযাপন অসম্পন্ন রেখেই ফিরতে হচ্ছে লোকজনকে। এ কারণে কিছু আক্ষেপ রয়েছে তাদের মধ্যে।
বেশ কয়েক বছর ধরে বিভিন্ন মহল থেকে বলা হচ্ছে, ঈদের ছুটি (উৎসব ছুটি) বাড়িয়ে দেওয়া হোক। অনেক দেশেই লম্বা উৎসব ছুটির ব্যবস্থা রয়েছে। সারা বছরের ছুটির সঙ্গে তা সমন্বয় করে নেওয়া যেতে পারে। এমনিতেই আগে-পিছে শুক্র-শনিবার পড়ে গেলে সাত-আট দিনের ছুটি পড়ে যায়। সপ্তাহখানেকের ছুটি নির্ধারিত থাকলে প্রস্তুতি নিতে সুবিধা হতো। রেল-সড়ক-নৌপথ সব পথের পরিবহনের ওপর চাপ কম পড়ত। ভাড়া-সন্ত্রাস বন্ধ হতো। দুর্ঘটনার হার কমত। সর্বোপরি প্রশান্ত চিত্তে কাজে যোগ দেওয়া যেত। সরকার বিষয়টি অগ্রাহ্য করেনি, তবে কার্যকর সিদ্ধান্তও নিতে পারেনি।
ঈদের ছুটি দীর্ঘ হলে অনেকে অন্যত্র বেড়াতে যাওয়ার চিন্তাও করতে পারত। পর্যটনশিল্পের কিছুটা হলেও লাভ হতো। ঈদ মুসলমান সম্প্রদায়ের বিশাল ধর্মীয় উৎসব। এ উৎসবের আবহ ধর্ম-বর্ণ-নির্বিশেষে সব মানুষের জন্য তৈরি করা সম্ভব হলে আন্ত সম্প্রদায় যোগাযোগ ও সহমর্মিতা বাড়ত আর তা দেশের ভাবমূর্তিকেই উজ্জ্বল করত। সমাজের স্বাস্থ্য ও মানসিকতার উন্নতি হতো। এখন যে সে রকম যোগাযোগ বা সৌহার্দ্য-বিনিময় হয় না, তা নয়। তবে তা ব্যক্তিপর্যায়ে সীমিত, ব্যাপক অর্থে সামাজিক হয়ে ওঠেনি। ঈদ উৎসব হয়ে উঠুক সবার জন্য, এ কথা ইদানীং বলছে অনেকে। আমাদের সবার সে চেষ্টা থাকা দরকার। আর্থ-সামাজিক ব্যবস্থাটিকেও সবার আনন্দ উদযাপনের উপযোগী করে তোলার চেষ্টা থাকা প্রয়োজন। এ ক্ষেত্রে মুখ্য ভূমিকা রাষ্ট্রের।