ওসমানীনগরে নির্মাণ কাজ শেষ হতেই গার্ড ওয়ালে ধস ! নিম্নমানের নির্মাণ সামগ্রী ব্যবহারের অভিযোগ

78

ওসমানীনগর থেকে সংবাদদাতা :
ওসমানীনগরের উমরপুর ইউনিয়নের হিজলশাহ গ্রামের একটি রাস্তার গার্ডওয়াল নির্মাণে অনিয়মের অভিযোগ ওঠেছে। নির্মাণ কাজ শেষ করার এক সপ্তাহের মধ্যেই দেওয়ালটি ধসে যাওয়ায় স্থানীয়রা ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। স্থানীয়দের পক্ষ থেকে অভিযোগ ওঠেছে অপরিকল্পিত ভাবে দেয়ালটি নির্মাণে নিম্নমানের নির্মাণ সামগ্রী ব্যবহার করা হয়েছে। সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান উপজেলা এলজিইডি সহকারী প্রকৌশলীকে ম্যানেজ করে দায়সারা কাজ করার কারণে নির্মান কাজ শেষ হতে না হতেই দেয়ালটি হেলে পড়েছে। এদিকে স্থানীয়দের অভিযোগের ভিত্তিতে বুধবার দুপুরে উমরপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান গোলাম কিবরিয়া ধসে পড়া দেওয়ালটি পরিদর্শন করেন।
পরিদর্শনকালে তিনি স্থানীদের অভিযোগ শুনেন এবং ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি অবগত করবেন বলে আশ্বস্থ করেন। এ সময় উপস্থিত ছিলেন- ইউপি সদস্য রোকন আহমদ চৌধুরী, আব্দুল খালিক ও উমরপুর বাজার পরিচালনা কমিটির সেক্রেটারী ইসহাক আহমদ শিপন প্রমুখ। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে- ২০১৬-১৭ অর্থবছরে এলজিইডি প্রকল্পের আওতায় উমরপুর ইজলশাহ গ্রামের রাস্তা পুন:সংস্কার ও রাস্তার পাশে ১৩৯ ফুট দৈর্ঘ্যরে গার্ড ওয়াল নির্মাণের কাজ পায় মাহফুজ ট্রেডার্স নামের একটি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান। সম্মেলিত প্রকল্পটির ব্যয় নির্ধারণ করা হয়েছে- ১১ লক্ষ ২৪ হাজার টাকা। কিন্তু নির্মাণ কাজ শেষ হতে না হতে নির্মাণের এক সপ্তাহের মধ্যে গত মঙ্গলবার রাতে রাস্তার পাশে সদ্য নির্মিত গার্ড ওয়ালটি ধসে পড়ে। ধসে পড়া দেওয়ালটির প্রায় ২৫টি স্থানে ফাটল দেখা দেয়া দিয়েছে। স্থানীয়রা জানান- দেওয়াল নির্মাণের পর পর্যাপ্ত ভাবে বালু ভরাট করার কথা থাকলেও ঠিকাদারী বালু ভরাট না করেই নির্মাণ কাজ সমাপ্ত করেন। এবিষয়ে এলাকার লোকজন এলজিইডি কর্মকর্তাদের নিকট মৌখিক অভিযোগ করেন। অভিযোগের পরিপ্রক্ষিতে ও এলাকার লোকজনের চাপের মুখে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের কর্তা ব্যক্তিরা গার্ডওয়ালের পাশে পর্যাপ্ত মাটি ভরাট করতে গ্রামের লোকজনের নিকট ১৫ হাজার টাকা দেন। সেই ১৫ হাজার টাকার সাথে গ্রামের লোকজন আরো ১০ হাজার টাকা চাঁদা তুলে প্রায় ২৫ হাজার টাকা ব্যয়ে বালি মাটি দিয়ে ভরাট করেন। কিন্তু বালি মাটি দিয়ে ভরাটের পরই দেয়ালটিতে ফাটল দেখা দিয়ে মঙ্গলবার রাতে দেয়ালটি ধসে পড়ে যায়। ইজলশাহ্ গ্রামের হাজী আব্দুল খালিক, হাজী খালিছ মিয়া, হাজী আব্দুল হাকিম ময়না মিয়া, হাজী আতাব মিয়া, বশর মিয়া, দরাজ মিয়া, দুদু মিয়া, কয়েছ মিয়া, আশিক মিয়া, মুজিব, আব্দুর রহমান, জিলু মিয়া, মুক্তর মিয়া, লেবু মিয়া, জয়নুল মিয়া বলেন- নির্মাণ কাজের শুরুতেই ঠিকাদার ফারুক আহমদ ওসমানীনগরে কর্মরত এলজিইডির উপ-প্রকৌশলী আব্দুর রহিমকে ম্যানেজ করে নিন্মমানের নির্মাণ সামগ্রী ব্যবহার করে নির্মান কাজ করেন। বিষয়টি নিয়ে আমরা একাধিকবার অভিযোগ করেও কোনো প্রতিকার পাইনি। এক পর্যায়ে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান তড়িগড়ি করে গার্ডওয়াল নির্মাণ করে দেয়ালের পাশে মাটি ভরাট না করেই চলে যান। পরবর্তীতে এ বিষয়ে আমরা ঠিকাদার ফারুককে চাপ দিলে মাটি ভরাটের জন্য তিনি (ঠিকাদার) আমাদেরকে ১৫ হাজার টাকা দেন। এই টাকার সাথে আমরা আরো ১০ হাজার টাকা পূরণ করে মাটি ভরাট করাই কিন্তু তাতে কাজের কাজ কিছুই হয়নি। দেয়ালটি ধসে যাওয়ায় গ্রামের রাস্তাটিও ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে তাই দেয়ালটি পুন:নির্মাণের জন্য আমরা জোর দাবি জানাচ্ছি। উমরপুর ইউপি চেয়ারম্যান গোলাম কিবরিয়া বলেন- ধসে পড়া দেয়ালটি আমি দেখেছি। নি¤œমানের কাজ করায় দেওয়ালটি ধসে পড়েছে। উপজেলা পরিষদের সমন্বয় সভায় আমি এবিষয়টি তুলে ধরব। নির্মাণ কাজের ঠিকাদারী প্রতিষ্ফানের কর্ণধার ফারুক আহমদ বলেন- উপজেলা এলজিইডি প্রকৌশলীদের নকশা অনুযায়ী আমি কাজ সম্পুর্ন করেছি। এখানে আমার কাজের কোনো ত্রুটি নেই। দেয়ালটি ধসে পড়ার দুটি কারণ থাকার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন-অপরিকল্পিত নকশা এবং অতিরিক্ত মাটি ভরাটের কারণে এটি ধসে পড়তে পারে বলে আমার ধারণা।
ওসমানীনগর উপজেলা এলজিইডি উপ-সহকারী প্রকৌশলী আব্দুর রহিম নির্মিত দেয়ালের নকশায় ত্র“টি এবং এলাকাবাসীর অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তিনি বলেন- সদ্য নির্মাণকৃত দেওয়ালটি ধসে পড়ার বিষয়টি আমরা ঠিকাদারকে জানিয়েছি। ঠিকাদার ঈদের পর ধসে পড়া দেয়ালটিতে কাজ করবেন।