দেশকে সমৃদ্ধির সোপানে নিয়ে যাওয়াই স্বপ্ন ॥ সংসদে ৪ লাখ ৬৪ হাজার ৫৭৩ কোটি টাকার বাজেট পেশ ॥ ৭০ ও ৮০ দশকে আমি ‘বিশ্ব ভিক্ষুক’ বলে অবহেলিত হয়ে আজকে একজন সফল অর্থমন্ত্রীর সম্মান পাচ্ছি

61

কাজিরবাজার ডেস্ক :
নির্বাচনের বছরে আওয়ামী লীগ সরকারের শেষ বাজেটে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত দেশবাসীকে সমৃদ্ধির সোপানে নিয়ে যাওয়ার স্বপ্ন দেখিয়েছেন। সেই স্বপ্ন হচ্ছে আগামী ২০৪১ সালে বাংলাদেশ হবে সুখী সমৃদ্ধ একটি উন্নত দেশ। উন্নত দেশ হতে হলে উচ্চতর প্রবৃদ্ধি তথা আর্থিক বৃদ্ধি দরকার। আর উচ্চতর প্রবৃদ্ধি অর্জন করতে হলে বাড়াতে হবে বাজেটের আকার। তাইতো, সমৃদ্ধ আগামীর পথযাত্রায় অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে আগামী ২০১৮-১৯ অর্থবছরের জন্য ৪ লাখ ৬৪ হাজার ৫৭৩ কোটি টাকার বাজেট পেশ করেছেন।
প্রস্তাবিত এ বাজেটের আকার চলতি অর্থবছরের চেয়ে ২৫ শতাংশ বড়। টাকার অঙ্কে গত বছরের চেয়ে এ বাজেটের আকার বেড়েছে ৬৮ হাজার কোটি টাকা। এরমধ্যে উন্নয়ন ব্যয় হচ্ছে ১ লাখ ৭৯ হাজার ৬৬৯ কোটি টাকা। নির্বাচনী এই বাজেটে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচীর (এডিপি) আকার নির্ধারণ করা হয়েছে ১ লাখ ৭৩ হাজার কোটি টাকা। অন্যদিকে, অনুন্নয়ন বা পরিচালন ব্যয় হচ্ছে ২ লাখ ৮২ হাজার ৪১৫ কোটি টাকা।
দ্রুত উচ্চ মধ্যম আয়ের দেশে উত্তীর্ণ হতে বাজেটের উন্নয়ন কর্মসূচীতে মানবসম্পদ উন্নয়ন এবং যোগাযোগ অবকাঠামো উন্নয়ন খাতকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেয়া হয়েছে। এই দুই খাতে ব্যয় হবে মোট উন্নয়ন কর্মসূচীর ৫৩ দশমিক ২ শতাংশ, যা আর্থিক মূল্যমানে ৯০ হাজার ৯০২ কোটি টাকা।
আট শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জনের পথে ‘সমৃদ্ধ আগামী পথযাত্রায় বাংলাদেশ’ শীর্ষক বাজেট বক্তৃতায় অর্থমন্ত্রী আগামী অর্থবছরের জন্য সাত দশমিক আট শতাংশ আর্থিক বৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছেন। যেখানে চলতি ২০১৭-১৮ বাজেটে প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ৭ দশমিক ৪ শতাংশ। তার বিপরীতে চলতি অর্থবছরে প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়েছে ৭ দশমিক ৬৫ শতাংশ। প্রস্তাবিত বাজেটে মূল্যস্ফীতি নির্ধারণ করা হয়েছে ৫ দশমিক ৬ শতাংশ শতাংশ।
বৃহস্পতিবার দুপুর সাড়ে ১২টায় স্পীকার শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে সংসদ অধিবেশন শুরু হয়। এরপর স্পীকারের অনুমতি নিয়ে অর্থমন্ত্রী দেশের ৪৭ বছরের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় বাজেট ঘোষণা করেন। ব্যক্তিগতভাবে এটি অর্থমন্ত্রীর ১২তম বাজেট। আর এর মধ্য দিয়ে টানা দশবার বাজেট পেশের রেকর্ড সৃষ্টি করছেন অর্থমন্ত্রী। এছাড়া বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকারের এটি ১৯তম বাজেট।
এই বাজেট ঘোষণা করতে গিয়ে অর্থমন্ত্রী বাংলাদেশের অতীত ইতিহাস স্মরণ করে গর্ববোধ করেন। বাজেট বক্তৃতায় তিনি বলেন, ‘তলাবিহীন ঝুড়ি’ বলে একদিন যে দেশকে অবজ্ঞা করা হয়েছে, সে দেশ বিশ্বাসীর কাছে এখন এক ‘উন্নয়ন-বিস্ময়’। বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক অগ্রযাত্রা এখন বিশ্বের রোড মডেল। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের পরিসংখ্যানে বাংলাদেশ পৃথিবীর ৪৩তম বৃহৎ অর্থনীতির দেশ। প্রাইস ওয়াটারহাউস কুপার্সের প্রক্ষেপণে ২০৩০ সাল নাগাদ বাংলাদেশ হবে বিশ্বের ২৮তম বৃহত্তম অর্থনীতি এবং ২০৫০ সালে বাংলাদেশের অবস্থান হবে ২৩তম।’
এ প্রসঙ্গে অর্থমন্ত্রী তার নিজের গর্বের বিষয় উল্লেখ করে বলেন, ‘ব্যক্তিগতভাবে আমার গর্বের বিষয় হলো, বিগত শতাব্দীর ৭০ ও আশির দশকে আমি ‘বিশ্ব ভিক্ষুক’ বলে অবহেলিত হয়ে আজকে সফল একজন অর্থমন্ত্রীর সম্মান পাচ্ছি।’
রাজস্ব আয় : বিরাট আকারের বাজেট বাস্তবায়নের জন্য এবারও অর্থের জন্য অর্থমন্ত্রী জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের ওপরই গুরু দায়িত্ব অর্পণ করেছেন। ২০১৮-১৯ অর্থবছরের প্রাবিত বাজেটে রাজস্ব আয়ের প্রাক্কলন করা হয়েছে ৩ লাখ ৩৯ হাজার ২৮০ কোটি টাকা, যা জিডিপির ১৩ দশমিক ৪ শতাংশ। এর মধ্যে করসমূহ থেকে পাওয়া যাবে ৩ লাখ ৫ হাজার ৯২৮ কোটি টাকা। এরমধ্যে আবার জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকেই সংগ্রহ করতে হবে ২ লাখ ৯৬ হাজার ২০১ কোটি টাকা (জিডিপির ১১ দশমিক ৭ শতাংশ)।
এ প্রসঙ্গে সমালোচকদের উদ্দেশে অর্থমন্ত্রী বলেন, রাজস্ব আদায়ের এ লক্ষ্যমাত্রা বাস্তবসম্মত। কারণ, ইতোমধ্যে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের জনবল ও কর্মপদ্ধতিতে ব্যাপক সংস্কার সাধন করা হয়েছে। অর্থনৈতিক কর্মকান্ড স্বাভাবিক অবস্থানে রয়েছে। কর পরিপালনের প্রবণতা দেশে বর্তমানে বেশ উচ্চমানের এবং এ প্রবণতা অব্যাহত রাখার বিষয়টি নিশ্চিত করার মাধ্যমে এ লক্ষ্যমাত্রা অর্জন সম্ভব হবে।
এছাড়া, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড বহির্ভূত সূত্র হতে কর রাজস্ব প্রাক্কলন করা হয়েছে ৯ হাজার ৭২৭ কোটি টাকা (জিডিপির ০.৪ শতাংশ)। এছাড়া কর-বহির্ভূত খাত থেকে রাজস্ব আহরিত হবে ৩৩ হাজার ৩৫২ কোটি টাকা (জিডিপির ১.৩ শতাংশ)।
অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে রাজস্ব বাড়ানোর প্রত্যাশী অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত আগামী পাঁচ বছরে আয় করদাতার সংখ্যা এক কোটিতে নিয়ে যাওয়ার আশা করছেন। নানা তৎপরতায় গত কয়েক বছরে নিবন্ধিত করদাতার সংখ্যা ৩৫ লাখ ছাড়িয়েছে; অর্থমন্ত্রী এই ধারা এগিয়ে নিতে চান। বাজেট বক্তৃতায় তিনি বলেন, কর আদায় এখন হয়রানিমূলক উপাখ্যান হিসেবে বিবেচিত হয় না। করভিত্তি এখন অনেক সম্প্রসারিত, নিবন্ধিত করদাতা ও রিটার্ন দাখিলের সংখ্যা প্রত্যাশার চেয়েও বেশি হারে বেড়েছে। তাই আগামী ৫ বছরের মধ্যে নিবন্ধিত করদাতার সংখ্যা এক কোটি এবং রিটার্ন দাখিলের সংখ্যা ৮০ লাখে উন্নীত করা যাবে বলে আমি আশা করি।
সরকারের মেয়াদের শেষ বছরের এই বাজেটে কর মোটের উপর না বাড়লেও করদাতার সংখ্যা বাড়িয়ে সেই ঘাটতি মেটাতে চান মুহিত। তিনি বলেন, ‘অর্থনৈতিক অগ্রযাত্রাকে অব্যাহত রাখার জন্য অভ্যন্তরীণ উৎস হতে পর্যাপ্ত রাজস্ব আহরণ প্রয়োজন। করহার না বাড়িয়ে কর ব্যবস্থার সংস্কার করে করভিত্তি সম্প্রসারণ ও স্বেচ্ছা পরিপালনের মাধ্যমে রাজস্ব আহরণের উপর জোর দেয়া হয়েছে।’ এ সময় অর্থমন্ত্রী কর প্রশাসনে তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহার বাড়িয়ে কর ব্যবস্থাপনাকে সম্পূর্ণ অটোমেটেড ও ডিজিটালাইডজ করার উদ্যোগ নেয়ার কথাও জানান। তিনি বলেন, ‘ই-টিআইএন রেজিস্ট্রেশন খুব ভালভাবে কাজ করছে। অনলাইনে রিটার্ন দাখিল পদ্ধতি চালু করা হয়েছে, যা আরও সমৃদ্ধ করার পরিকল্পনা নেয়া হচ্ছে। আগামী কয়েক বছরের মধ্যে উল্লেখযোগ্যসংখ্যক করদাতা অনলাইনে রিটার্ন দাখিল করবেন আশা করা হচ্ছে।
বাজেট ঘাটতি : নতুন বাজেটেও অর্থায়নের ক্ষেত্রেও ঘাটতি জিডিপির ৫ শতাংশের মধ্যেই সীমাবদ্ধ রেখেছেন অর্থমন্ত্রী। সার্বিকভাবে বাজেট ঘাটতি দাঁড়াচ্ছে ১ লাখ ২৫ হাজার ২৯৩ কোটি টাকা, যা জিডিপির ৪.৯ শতাংশ। এই ঘাটতি অর্থায়নে বৈদেশিক উৎস থেকে পাওয়া যাবে ৫৪ হাজার ৬৭ কোটি টাকা। আর আভ্যন্তরীণ উৎস থেকে সংগ্রহ করা হবে ৭১ হাজার ২২৬ কোটি টাকা। আভ্যন্তরীণ উৎসের মধ্যে ব্যাংক থেকে ঋণ নেয়া হবে ৪২ হাজার ২৯ কোটি টাকা এবং সঞ্চয়পত্র থেকে নেয়া হবে ২৬ হাজার ১৯৭ কোটি টাকা। বাকি তিন হাজার কোটি টাকা অন্যান্য উৎস থেকে সংগ্রহ করবেন অর্থমন্ত্রী।
প্রতি বছরই বাজেটের আকার বাড়লেও বাজেট বাস্তবায়নের হার কমে যাচ্ছে। ২০১০-১১ অর্থবছরে বাজেট বাস্তবায়নের হার ৯৭ শতাংশ থাকলেও চলতি ২০১৭-১৮ অর্থবছরে তা ৭৪ শতাংশে নেমে আসছে। গত ৮ অর্থবছরে বাজেট বাস্তবায়নের হার কমেছে ২৩ শতাংশ। এ নিয়ে অর্থমন্ত্রীকেও প্রতিবার বাজেট ঘোষণার পর অর্থনীতিবিদদের সমালোচনার মুখে পড়তে হয়। তাই আগামী অর্থবছরে নির্বাচনী ডামাডোলে বাজেট বাস্তবায়ন যাতে পিছিয়ে না পড়ে সেজন্য অর্থমন্ত্রী এবার বিশেষ দৃষ্টি রেখেছেন।
বাজেট বাস্তবায়ন নিয়ে তিনি শুধু অর্থনীতিবিদই নন, দেশবাসীকেও আশ্বস্ত করার চেষ্টা করেছেন। এ প্রসঙ্গে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেছেন, ‘বাজেট বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে আগামীতে আমরা অনেক ভাল অবস্থানে থাকব। বাজেট বাস্তবায়ন নিয়ে আর সবার মতো আমাদেরও ভাবনা আছে। সেভাবে ব্যবস্থা নিচ্ছি, উন্নতিও হচ্ছে। এই বছরের সংশোধিত বাজেট বাস্তবায়নের হার আবার ৯২ শতাংশ হবে বলে আশা করছি।’
সামনে নির্বাচন। তাই আওয়ামী লীগ সরকারের শেষ বাজেটে গ্রামীণ উন্নয়নের দিকে যেমন গুরুত্ব দেয়া হয়েছে, তেমনি জনকল্যাণকেও অগ্রাধিকার দেয়া হয়েছে। প্রস্তাবিত বাজেটে সর্বোচ্চ বরাদ্দ দেয়া হয়েছে স্থানীয় সরকার বিভাগে। অন্যদিকে সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচীর আওতা যেমন বাড়ানো হয়েছে, তেমনি বাড়ানো হয়েছে আওতাধীন সুবিধাভোগীদের ভাতার পরিমাণ। অসচ্ছল যুদ্ধাহত ও অসুস্থ মুক্তিযোদ্ধা বা তাদের স্ত্রী, ছেলেমেয়ে অথবা নাতি-নাতনীদের সহায়তা দেয়ার একটি ব্যবস্থা মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় তৈরি করছে। এজন্য আগামী বাজেটে প্রায় ৪০০ কোটি টাকার বরাদ্দ রাখা হয়েছে। বয়স্ক ভাতাভোগীর সংখ্যা ৩৫ লাখ থেকে বাড়িয়ে ৪০ লাখ করা হচ্ছে। বিধবা ও স্বামী নিগৃহীতা নারী ভাতাভোগীর সংখ্যা ১২ লাখ ৬৫ হাজার থেকে ১৪ লাখ করা হচ্ছে। বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানী ভাতা ও উৎসব ভাতার পাশাপাশি বার্ষিক দুই হাজার টাকা হারে বাংলা নববর্ষ ভাতা চালু করা হচ্ছে। এছাড়া জীবিত মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য বিজয় দিবস উপলক্ষে জনপ্রতি পাঁচ হাজার টাকা করে বিশেষ সম্মানী ভাতা চালু করা হচ্ছে। বিদেশী কায়দায় দেশের সব মানুষের জন্য পেনশন ব্যবস্থা চালুর করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে বাজেটে। সবমিলিয়ে ভোটের বছরে ভোটারদের তুষ্ট করার একটা প্রবণতা আওয়ামী লীগ সরকারের শেষ বাজেটে দেখা যাচ্ছে।
২০১৮-১৯ অর্থবছরের বাজেটে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচীর খাত ওয়ারি বরাদ্দ বিশ্লেষণে দেখা গেছে, স্থানীয় সরকার বিভাগে সর্বোচ্চ ১৪ দশমিক ৬ শতাংশ বা ২৫ হাজার ৩৩৮ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। বিদ্যুত বিভাগের জন্য ১৩ দশমিক ২ শতাংশ বা ২২ হাজার ৮৯৩ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগে প্রস্তাব করা হয়েছে ১২ শতাংশ বা ২০ হাজার ৮১৭ কোটি টাকার বরাদ্দ।
এছাড়া প্রস্তাবিত বাজেটে ২০১৮-১৯ অর্থবছরের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচীর খাত ওয়ারি বরাদ্দকে চার ভাগে ভাগ করা হয়েছে। এই ভাগের সর্বোচ্চ বরাদ্দ মানবসম্পদ বিভাগে, যা উন্নয়ন বাজেটের ২৬ দশমিক ৯ শতাংশ বা ৪৬ হাজার ৪৫২ কোটি টাকা। এরপরই রয়েছে যোগাযোগ অবকাঠামো খাত। এই খাতের বরাদ্দ ২৬ দশমিক ৩ শতাংশ বা ৪৫ হাজার ৪৫০ কোটি টাকা। এছাড়া কৃষি ও পল্লী উন্নয়ন খাতে ২১ দশমিক ৮ শতাংশ বা ৩৭ হাজার ৬৫২ কোটি টাকা ও জ্বালানি অবকাঠামো খাতে ১৪ দশমিক ৩ শতাংশ বা ২৪ হাজার ৭১৩ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব রয়েছে।
সংশোধিত বাজেট : জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের রাজস্ব আয় কার্যক্রম আশানুরূপ না হওয়ায় চলতি ২০১৭-১৮ অর্থবছরের বাজেট ২৮ হাজার ৭৭১ কোটি টাকা কাটছাঁট করে সংশোধন করা হয়েছে। এ অর্থবছরের বাজেটে সর্বমোট সরকারী ব্যয়ের প্রাক্কলন করা হয়েছিল চার লাখ ২৬৬ কোটি টাকা। সংশোধিত বাজেটে এ ব্যয় ২৮ হাজার ৭৭১ কোটি টাকা কমিয়ে ৩ লাখ ৭১ হাজার ৪৯৫ কোটি টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। এরমধ্যে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচীর আকার ১ লাখ ৫৩ হাজার ৩৩১ কোটি টাকা থেকে কিছুটা হ্রাস করে ১ লাখ ৪৮ হাজার ৩৮১ কোটি টাকায় নির্ধারণ করা হয়েছে। অন্যদিকে, পরিচালন তথা অনুন্নয়ন ব্যয় কমানো হয়েছে ২৩ হাজার ৮২১ কোটি টাকা।
মূল বাজেটের মতো সংশোধিত বাজেটেও ঘাটতি জিডিপির ৫ শতাংশে সীমাবদ্ধ রাখা হয়েছে। মূল বাজেটে ঘাটতির পরিমাণ ছিল ১ লাখ ১২ হাজার ২৭৫ কোটি টাকা। সংশোধিত বাজেটে এই ঘাটতি নির্ধারণ করা হয়েছে এক লাখ ১২ হাজার ৪১ কোটি টাকা। মূল বাজেটে ঘাটতির বিপরীতে বৈদেশিক সূত্র থেকে অর্থায়ন ধরা হয়েছিল ৫১ হাজার ৯২৪ কোটি টাকা। সংশোধিত বাজেটে তা হ্রাস করে ৪৬ হাজার ২৪ কোটি টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। এছাড়া অভ্যন্তরীণ উৎসের মধ্যে সঞ্চয়পত্র ও অন্যান্য সূত্র থেকে অর্থায়নের পরিমাণ ধরা হয়েছে ৪৬ হাজার ১০০ কোটি টাকা।
বাজেট বক্তৃতার শেষ অংশে মুহিত বলেন, ‘বিগত বছরগুলোর ধারাবাহিকতায় এবারও বাজেটের আকার বেড়েছে। উচ্চ প্রবৃদ্ধি পেতে হলে এর কোন বিকল্পও নেই। এছাড়া দেশের জনগণের জীবনমানে মৌলিক পরিবর্তন আনার অন্যতম পূর্বশর্ত হলো টেকসই উচ্চ প্রবৃদ্ধি। চলতি বছর পাইপলাইনে থাকা বৈদেশিক সাহায্য ব্যবহারে আমরা বেশ সফলতা দেখিয়েছি।’
অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘রাজস্ব আহরণ ও সরকারী আর্থিক ব্যবস্থাপনা সংস্কারের যে উদ্যোগ আমরা নিয়েছি তাতে রাজস্ব আহরণ যেমন বাড়বে, তেমনি দক্ষ ব্যয় ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে রাজস্ব পরিসর বৃদ্ধি পাবে।’ তিনি বলেন, ‘সামনের দিনগুলোতে আমরা প্রবৃদ্ধিকে সুসংহত ও টেকসই করব। পাশাপাশি, সংস্কার ও প্রাতিষ্ঠানিক উন্নয়নের মাধ্যমে সম্পদ ও সেবায় আপামর জনসাধারণের সহজ সুযোগ গ্রহণ নিশ্চিত করে উন্নয়নের সুফল সবার কাছে পৌঁছে দেব। আমাদের লক্ষ্য যুগপৎ সমৃদ্ধি ও সাম্য।’
তিনি বলেন, ‘আজ দেশে-বিদেশে সবাই স্বীকার করে যে এ ১০ বছরে দেশ অনেক খানি এগিয়েছে। তবুও স্বপ্নের সীমারেখা এখনও স্পর্শ করা যায়নি। এটি নিরন্তর বহমান একটি প্রক্রিয়া। সব মিলিয়ে দেশকে কতটা দিতে পেরেছি তার মূল্যায়ন দেশবাসী আর বিশ্ব করছে। তবে এটুকু দ্বিধাহীন চিত্তে বলতে পরি আমার মননে ও কর্মে আমি কেবল আমার দেশের অগ্রযাত্রাকেই বিবেচনায় রেখেছি। আমি নিশ্চিত এ বাজেট বাস্তবায়নে দেশের আপামর জনগণ তাদের উদ্যোগ, সৃজনশীলতা, কর্মদক্ষতা, অংশীদারিত্ব এবং সর্বাত্মকভাবে স্বতঃস্ফূর্ততা নিয়ে অংশগ্রহণ করবে।’
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপস্থিতিতে সংসদে এ বাজেট প্রস্তাব উপস্থাপন করেছেন অর্থমন্ত্রী। এর আগে মন্ত্রিসভার অনুমোদনের পর ওই প্রস্তাবে সই করেন রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদ। এর আগে দুপুর সাড়ে বারোটার পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে জাতীয় সংসদ ভবনে মন্ত্রিপরিষদের বৈঠকে ২০১৮-১৯ অর্থবছরের জন্য এই বাজেট অনুমোদন দেয়া হয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত ওই বৈঠকে মন্ত্রী, সচিবসহ সংশ্লিষ্টরা উপস্থিত ছিলেন।