বিয়ানীবাজারে রায়খাইল গ্রামের আড়াইশ’টি পরিবার নদী ভাঙ্গনের শিকার

43

বিয়ানীবাজার থেকে সংবাদদাতা :
বিয়ানীবাজার উপজেলার রায়খাইল গ্রামের ২৫০টি পরিবার নদী ভাঙ্গনের শিকার। সুুরমা নদীর পার ঘেঁষে তেমনি একজন আব্দুল মতিনের বাড়ি। নদীর পার ভাঙতে শুরু করেছে। ঝুঁকি জেনেও ঘরের ভেতরে ছিলেন হতদরিদ্র মতিন। হঠাৎ হুড়মড়িয়ে বাড়িটি নদীগর্ভে চলে যায়। ঘরের সঙ্গে তিনি নিজেও নদীতে পড়ে যান। স্থানীয় লোকজন তাঁকে উদ্ধার করে। তবে মেরুদন্ডে আঘাত পেয়ে কয়েক দিন শয্যশায়ী ছিলেন রায়খাইল গ্রামের বাসিন্দা মতিন। বিয়ানীবাজার উপজেলার আলীনগর ইউনিয়নের মধ্যে রায়খাইল একটি দরিদ্র জনগোষ্টির বাস এ গ্রামে।
স্থানীয় ইউপি সদস্য আফতাব উদ্দিন বলেন, আব্দুল মতিনসহ গত এক সপ্তাহে গ্রামের সাতজনের বাড়িঘর নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত অন্য ছয়জন হলেন আব্দুল সাত্তার, আব্দুল আহাদ, আব্দুল বাছেত, আমজাদ হোসেন, পারভেজ আহমদ, খলিল উদ্দিন ও জসিম উদ্দিন।
সরেজমিনে দেখা যায়, রায়খাইল গ্রামের পাশ দিয়েই অনেকের আধভাঙা বসতঘর। গ্রামে নদী ভাঙনের শিকার রয়েছে প্রায় ২৫০টি বসতঘর। এর মধ্যে ভাঙনের ঝুঁকিতে রয়েছে আরও প্রায় ২০টি বাড়ি। নদীভাঙন নিয়ে গ্রামবাসীর মধ্যে রীতিমতো আতঙ্ক বিরাজ করছে।
নদী ভাঙনের শিকার আব্দুল সাত্তার বলেন, প্রতিনিয়ত ভাঙছে নদীর পার। ভাঙনে আমার বাড়ির আসবাবসহ প্রায় ৪-৫ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে। বর্তমানে আমি পরিবারের সদস্যদের নিয়ে আত্মীয়ের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছি।
নদী ভাঙনের শিকার ব্যাক্তিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, কয়েক বছর ধরেই এখানে সুরমার পাড়ে ভাঙন স্বাভাবিক ঘটনায় পরিণত হয়েছে। এর প্রতিকার চেয়ে একাধিকবার বিভিন্ন মহলে যোগাযোগ করেছেন গ্রামবাসী। কিন্তু কোনো প্রতিকার পাওয়া যায়নি। নদী ভাঙনে বাড়িঘর ভেসে গেলে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিরা সেখান থেকে সরে গিয়ে অন্য জায়গায় বাড়ি নির্মাণ করেন। এভাবেই ভাঙা-গড়ার মধ্যেই জীবন চলছে।
গ্রামের বাসিন্দা হামিদুর রহমান সুরমা নদীর একটি অংশ দেখিয়ে বলেন, আগে ওই স্থানে গ্রামের মসজিদ ছিল। নদীর ভাঙনে সেটিও বিলীন হয়ে গেছে। পরে নতুন করে একটি মসজিদ তৈরি করা হয়েছে।
আলীনগর ইউপি চেয়াম্যান মামুনুর রশীদ মামুন বলেন, ‘প্রায় দুই বছর ধরে রায়খাইল গ্রামের নদী ভাঙন রোধ করতে এবং এর থেকে উত্তরণের জন্য বিভিন্ন দপ্তরে যোগাযোগ করেছি। কিন্তু কোনো সুফল পাওয়া যায়নি।
রায়খাইল গ্রামের মূল সড়ক ঘেঁষে বয়ে গেছে সুরমা নদী। গ্রামবাসী বলছেন, বর্ষা মৌমুমে নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে সড়কে উঠে যায়। মূল সড়কটিও যদি ভাঙনের মুখে পড়ে, তাহলে পুরো গ্রাম তলিয়ে যাবে। সেই সঙ্গে ভাসিয়ে নিয়ে যাবে ফসল।
সিলেট পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী সিরাজুল ইসলাম বলেন, বিষয়টি আমাদের অনেকেই অবহিত করেছেন। আমরা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে প্রকল্প তৈরি করার উদ্যোগ নিয়েছি। তবে কবে নাগাদ প্রকল্প নেওয়া হবে কিংবা অনুমোদন হবে, সেটি বলা যাচ্ছেনা।
এদিকে নদী ভাঙ্গনের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে গ্রামবাসীর পক্ষ থেকে মানববন্ধন কর্মসূচী পালন করা হয়েছে।