মাধ্যমিক পর্যায় পরীক্ষা

34

শিক্ষার্থীদের ওপর থেকে চাপ কমাতে জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট (জেএসসি) ও জুনিয়র দাখিল সার্টিফিকেট (জেডিসি) পরীক্ষায় তিনটি করে বিষয়ের পাশাপাশি পরীক্ষার নম্বর ২০০ কমানো হয়েছে। জেএসসি-জেডিসিতে এত দিন বাংলা ও ইংরেজির দুটি করে পত্রে ১৫০ নম্বরের পরীক্ষা দিতে হতো। এখন বাংলা ও ইংরেজিতে আর আলাদা পত্র থাকবে না। একেকটি বিষয়ে ১০০ নম্বরের পরীক্ষা হবে। অষ্টম শ্রেণি বা জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট পরীক্ষায় আগে ১০টি বিষয়ে পরীক্ষা দিতে হতো। এখন বাংলা ও ইংরেজির দুটি এবং চতুর্থ বিষয়ের পরীক্ষা দিতে হবে না। পরিবর্তিত সিদ্ধান্ত অনুযায়ী জেএসসিতে এখন ৮৫০ নম্বরের পরিবর্তে ৬৫০ নম্বর এবং জেডিসিতে ১১৫০ নম্বরের পরিবর্তে ৯৫০ নম্বরের পরীক্ষায় বসতে হবে শিক্ষার্থীদের। ঐচ্ছিক বিষয়ে শ্রেণিকক্ষে ধারাবাহিক মূল্যায়ন করা হবে।
বাংলাদেশে শিক্ষা নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা অতীতে কম হয়নি, এখনো কম হচ্ছে না। একটি জাতীয় শিক্ষানীতি থাকার পরও সুনির্দিষ্ট কোনো লক্ষ্য স্থির করা সম্ভব হয়নি। এমনকি কোমলমতি শিক্ষার্থীদের নিয়েও পরীক্ষা-নিরীক্ষা কম হয়নি। এমনিতেই দেশের শিক্ষাব্যবস্থায় কারো কোনো নিয়ন্ত্রণ বা কর্তৃত্ব আছে বলেও মনে হয় না। শহরাঞ্চলের বেশির ভাগ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান শিক্ষার্থীদের ব্যাগে বইয়ের বোঝা চাপিয়ে দিতে পারাকেই তাদের সাফল্য বলে মনে করে। অভিভাবকদের অনেকেই এই বইয়ের বোঝাকে বড় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের উদাহরণ হিসেবে মনে করে থাকেন। অথচ এর ফল কখনো ভালো হয়নি। শিক্ষার্থীদের মধ্যে বই ও পরীক্ষা ভীতি দেখা দেয়। অন্যদিকে পরীক্ষার ব্যাপারেও শিক্ষার্থীদের মধ্যে এক ধরনের ভীতি তৈরি হয়। এমনিতেই এখন দেশের বেশির ভাগ অভিভাবককে পেয়ে বসেছে জিপিএ ৫ প্রবণতা। এই প্রবণতাকে অনেকটা সামাজিক ব্যাধিও বলা যেতে পারে। এর প্রভাব পড়ছে শিক্ষার্থীদের ওপর। জিপিএ ৫ নামের মরীচিকার পেছনে ছুটতে গিয়ে শৈশব-কৈশোর হারিয়ে যাচ্ছে বদ্ধ ঘরে আর প্রাইভেট টিউশনিতে। যেকোনো শিক্ষার্থীর মানসিক স্বাস্থ্যের জন্যও এটা অস্বাভাবিক। জিপিএ ৫ ও পাসের হার আমাদের শিক্ষাব্যবস্থার যে ক্ষতি করেছে, তা বলার নয়। অথচ এমন হওয়ার কথা ছিল না। আমাদের দেশে গত বেশ কয়েক বছর সরকার সুনির্দিষ্ট সময়ে প্রাথমিক ও মাধ্যমিকের বই বিতরণ করছে। বর্তমান সরকারের এটাও একটি বড় সাফল্য। কিন্তু জিপিএ ৫ লক্ষ্য হয়ে পড়ায় লেখাপড়ার মান কতটুকু রক্ষা করা যাচ্ছে, সে প্রশ্নটা এখন প্রকট হয়েই দেখা দিয়েছে। তা ছাড়া পিইসি, জেএসসি, জেডিসি ও এসএসসি প্রাথমিক থেকে মাধ্যমিক পর্যায়ে কি এত পরীক্ষার প্রয়োজন আছে? বিশেষজ্ঞরা বারবারই বলেছেন, পরীক্ষার কারণে শিক্ষার্থীদের মানসিক চাপের মধ্য দিয়ে যেতে হবে, যা তাদের মানসিক স্বাস্থ্যের অনুকূল নয়। অথচ পরীক্ষার চাপ কম থাকলে বা প্রাথমিকের পর যদি শুধু জেএসসি বা জেডিসি পরীক্ষা হতো, তাহলে শিক্ষার্থীরা চাপমুক্ত থাকতে পারত। আমরা আশা করব, বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে আলোচনা করে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ একটি সঠিক সিদ্ধান্তে যেতে পারবে।