শ্রীমঙ্গলে এবার আনারসের ফলন কম ॥ প্রক্রিয়াজাতকরণ কোনো ব্যবস্থা না থাকায় কমদামে বিক্রি

62

শ্রীমঙ্গল থেকে সংবাদদাতা :
মৌলভীবাজার আনারসের ফলন কম হলেও প্রক্রিয়াজাতকরণ কোনো ব্যবস্থা না থাকায় কমদামে বিক্রি করছেন চাষিরা। আনারস পচনশীল এ ফল যখন একসঙ্গে পাকতে শুরু করে তখন আনারস চাষিরা কমদামে অনেক সময় ফল বিক্রি করতে হয়।
আনারস একটি সুস্বাদু ও পুষ্টিকর ফল। এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ অর্থকরী ফসলও। মৌলভীবাজার জেলার শ্রীমঙ্গলের বিস্তৃীর্ণ অঞ্চলে আনারসের চাষ হয়ে থাকে।
শ্রীমঙ্গল উপজেলার বিষামণি, মাইজদিহি, হোসেনাবাদ, এম আর খান, নন্দরানী, বালিশিরা, নূরজাহান, ডলুছড়া, সাতগাঁও, মোহাজেরাবাদ, মাধবপুর, মাঝেরছড়া, পুরানবাড়ীসহ প্রতিটি এলাকায় প্রচুর আনারস চাষ হয়।
ভরা মৌসুমে প্রতিদিন কাকডাকা ভোর থেকে শত শত ঠেলাগাড়ী আনারস নিয়ে শ্রীমঙ্গলের বাজারে আসে। আবার কেউ জীপ গাড়িতে করে নিয়ে আসেন। এখানে থেকে আনারস চলে যাচ্ছে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে।
আনারস বাগান মালিক চাষী মো. সাইদুল ইসলাম শাহেদ বলেন, এবার শ্রীমঙ্গলে আনারসের মোটামুটি ফলন হয়েছে। সবদিন দামও ভাল পাচ্ছেন না । তিনি আরও বলেন, শ্রীমঙ্গলের মাটি, আবহাওয়া ও জলবায়ু আনারস চাষের বিশেষ উপযোগী হওয়ায় এখানে উঁচুনিচু পাহাড়ি টিলায় প্রচুর আনারসের চাষ হয়। তবে সংরক্ষণের ব্যবস্থা না থাকায় পচনশীল এ ফল যখন একসঙ্গে পাকতে শুরু করে তখন কৃষকদের নামমাত্র মূল্যে অনেক সময় ফল বিক্রি করে দিতে হয়।
এছাড়াও অনেক আনারস পঁেচ নষ্ট হয়। আনারস সংরক্ষণের জন্য শ্রীমঙ্গলে একটি হিমাগার স্থাপন জরুরী। এখানে হিমাগার স্থাপিত হলে কৃষকরা পচনশীল রসালো ফল গুদামজাত করে সারা বছর বাজারজাতসহ বিদেশে রপ্তানি করে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনও সম্ভব হত।
সুনামগঞ্জ থেকে আগত পাইকারী ব্যবসায়ী সাজ্জাদ মিয়া বলেন, আনারসের সাইজ বুঝে দাম। নি¤েœ ছোট পিস ১০টাকা,আর উপরে ২২-৩০ টাকা। তবে আমরা ১৫/২০জন পাইকারী ব্যবসায়ী প্রতি সপ্তাহে শ্রীমঙ্গলে আসি আনারস ও কাঠাঁল নিতে। ব্যবসা খারাপ হচ্ছে না ? ভালই।’
কাঠাঁল ব্যবসায়ী আসকির মিয়া বলেন, বাজারে কাঠাঁলে গতি একটু কম। কারণ মানুষ খাচ্ছে না। কম খাওয়ার কারণে সেলই কম। তেমন লাভ হচ্ছে না।’
আড়ৎতদার র্নিমল বাবু বলেন, বাগানে ফলন কম হয়েছে। গতবারের চেয়ে এবার ফলন কম। তিনি বলেন, ফলন কম হওয়ার কারণ হল বিভিন্ন সার ব্যবহার করায়। কৃষি অফিসের কর্মকর্তাদের মাঠ পর্যায়ে তদারকি নাই।’
এদিকে শ্রীমঙ্গলে সরকারি বা বেসরকারী উদ্যোগে কোন জেম, জুস, জেলীসহ কোন টিনজাত শিল্প গড়ে উঠেনি। এখানে টিনজাত শিল্প গড়ে উঠলে কর্মসংস্থানসহ এলাকার চাহিদা মিটিয়ে টিনজাত পণ্য বিদেশেও রপ্তানি করা যেত।
আমাদের দেশে মূলত সিলেট, মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলে উৎপাদিত আনারস দেশখ্যাত। রসে ভরপুর শ্রীমঙ্গলের আনারসের জুড়ি জেলা ভার। আনারস ফল হিসেবে খাবার পাশাপাশি জেম, জুস কিংবা জেলী হিসেবে খাওয়া যায়।
মৌলভীবাজার কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো.শাহজাহান বলেন, আমি ঢাকায় আছি। তবে তথ্য আছে আনারসের ফলনও ভালো হয়েছে। কাঠাঁল, আম ও লিচুর ফলন কম হয়েছে। আবহাওয়ার কারণে কিছুটা ফলন কম হয়েছে। তারপরও মৌসুমি ফলের ফলন ভাল হয়েছে।’
চাষিদের অভিযোগ সারের কারণে ফলন কম হয়েছে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘একজন চাষি মনে হয় মহা পন্ডিত! কার কাছে জেনেছে সার খারাপ?। যারা কথা বলে তারা একেক জন একেক মন্তব্য হুট করে বলে ফেলে। চাষিরা সার প্রয়োগ করছেন কার পরামর্শে করেছেন। তারা কোনো বিশেষঞ্জের মতামত নিয়েছেন। তারা আমাদের অফিসে যোগাযোগ করে না। যার যার মন মতো কথা বার্তা বলে।’
তিনি আরও বলেন,‘ফসলতো শুধু গাছে পাকলে হবে না। সঠিকভাবে পরিচর্যা না করার কারণে ফলন ভাল হয় না। রাজশাহী ও চাপাইনবাবগঞ্জ এলাকায় শিক্ষিত বাগান আছে। আমাদের বাগানগুলো মিশ্র বাগান, মূলত আমাদের বাগান কম। যারা ম্যানেজমেন্ট ভাল করে তাদের ফলন ভাল হয়।’
বাগান চাষিদের প্রশিক্ষণ দেয়া হয় কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘প্রশিক্ষণ নিতে হলে বাগান চাষিরা কৃষি অফিসে আসতে হবে ?। আপনার কাছে না যায়, তাহলে তথ্য পাবে কোথায় থেকে। যে লোকের বাগান আছে সে বাড়িতে বসে বসে থাকে। সে তো ইনফরমেশন পাবে না। অফিসে আসতে হবে,আমরা ভালো সাজেশন দিবো এবং ভালো মেডিসিন দিবো, ফলন ভালো হবে।’