সারাদেশে ১ লাখ ওয়াইফাই হটস্পট নির্মাণ কাজ শেষের দিকে, আরো ১ হাজার নির্মাণের প্রস্তাব

60

কাজিরবাজার ডেস্ক :
সারাদেশে সরকারের ১ লাখ ওয়াইফাই হটস্পট নির্মাণ কাজের এক-চতুর্থাংশ শেষ হয়েছে। শিগগিরই আরও ১ হাজার হটস্পট তৈরির প্রস্তাব মন্ত্রিসভায় উঠবে বলে জানা গেছে। এর পাশাপাশি চলছে নীতিমালা তৈরির কাজও।
অন্যদিকে দেশের দুর্গম এলাকায় ফোর-জি সেবা দিতে ব্যয়বহুল টাওয়ার স্থাপন বা নেটওয়ার্ক তৈরি না করে হটস্পটের মাধ্যমে বিপুলসংখ্যক মোবাইল ফোন ব্যবহারকারীদের এই সেবা দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
মূলত হটস্পট নির্মাণের নীতিমালা না থাকা এবং ইন্টারনেট ব্যবহারের কোনও নির্দেশনা না থাকায় বিষয়টি দিন দিন ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠছিল বলে সংশ্লিষ্ট মহল থেকে একাধিক বার বলা হয়। এসব কারণে ১ লাখ হটস্পট তৈরির উদ্যোগে ধীরগতি দেখা দেয়। এই ধীরগতি দূর করতে হটস্পট নির্মাণের নীতিমালা তৈরি হচ্ছে। একইসঙ্গে তৈরি হচ্ছে ইন্টারনেট ব্যবহারের নিয়ম-কানুনও।
জানতে চাইলে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) বিভাগের প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক বলেন, ‘১ লাখ হটস্পটের মধ্যে ২৫ ভাগের নির্মাণ শেষ হয়েছে। অবশিষ্টগুলোও তৈরি করা হবে। তবে কিছু বিষয় তার আগে শেষ করতে হবে।’ তিনি জানান, আরও ১ হাজার হটস্পট তৈরির প্রস্তাব অনুমোদনের জন্য শিগগিরই মন্ত্রিসভায় উঠবে। এই ১ হাজার হটস্পট তৈরির বিষয়ে এবার আরও কৌশলী হওয়া হবে বলে তিনি জানান। প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘যেকোনও জায়গায় নয়, আমরা বেছে বেছে যেখানে প্রয়োজন, তরুণ প্রজন্মের চাহিদা আছে, এমন জায়গায় বেশি সক্ষমতার ডিভাইস বসিয়ে আরও বেশি জায়গা কাভারেজের আওতায় নিয়ে আসার ওপর জোর দেবো।’
তিনি জানান, এরই মধ্যে দেশের ১৮ হাজার সরকারি অফিস, সচিবালয়, কয়েকটি কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় এবং ২ হাজার ৯০০টি শেখ রাসেল ডিজিটাল ল্যাবে ওয়াইফাই স্পট তৈরি করা হয়েছে। আগামীতে ৮ হাজার ৫০০ ডাকঘর, ভূমি অফিস, কমিউনিটি হেলথ ক্লিনিকসহ আরও অনেক প্রতিষ্ঠান হটস্পটের আওতায় আনা হবে।
জুনাইদ আহমেদ পলক আরও জানান, ফোর-জি যেখানে পৌঁছাতে পারছে না সেখানে ১-২ কিলোমিটার বা তারও বেশি এলাকা কাভারেজ দিতে সক্ষম এমন ডিভাইস বসিয়ে ফোর-জি সেবা পৌঁছানোরও উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
আইসিটি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, ফ্রি ওয়াইফাই ও ইন্টারনেটের জন্য বছরে বিল হতো ৬০ কোটি টাকা। গত বছর পর্যন্ত এই টাকা আইসিটি বিভাগ পরিশোধ করতো। কিন্তু আইসিটি বিভাগ মনে করে, প্রতিটি সরকারি অফিসকে যেমন বিদ্যুৎ বিল, টেলিফোন বিল পরিশোধ করতে হয়, তেমনি ইন্টারনেট বিলও পরিশোধ করা উচিত। কারণ, ইন্টারনেটও এখন জরুরি হয়ে পড়েছে। ফলে আগামীতে যেসব হটস্পট তৈরি হবে এবং সেখানে যে পরিমান বিল হবে তা সংশ্লিষ্ট পক্ষ থেকে পরিশোধের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
জানা গেছে, নিরাপদ ইন্টারনেট ব্যবহারের জন্য সাইবার সিকিউরিটি গাইডলাইন তৈরি হচ্ছে। ইন্টারনেট ব্যবহার করতে হলে এই গাইডলাইন মানতে হবে। হটস্পটের ইন্টারনেট ব্যবহারে যাতে কোনও অনিয়ম না হয়, কেউ যেন কারও ক্ষতি করতে না পারে, কোনও অপকর্ম হতে না পারে, সেজন্য এ গাইডলাইন। গাইডলাইন হলে হটস্পটসহ সব ধরনের ইন্টারনেট সেবা নিরাপদ থাকবে বলে সংশ্লিষ্টরা আশা করছেন।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, হটস্পটের ফ্রি ওয়াইফাই ব্যবহার করে রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে কোনও ধরনের অপকর্ম করে কেউ যাতে পার পেয়ে যেতে না পারে সেজন্য একটি নীতিমালার অভাব অনুভূত হচ্ছিল। সেই অভাব পূরণে নীতিমালা তৈরি হচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্র, ভারত, ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত (ইইউ) দেশ, ইন্দোনেশিয়া ও সিঙ্গাপুরের ফ্রি ওয়াইফাই হটস্পট নির্মাণের নীতিমালাগুলো দেখে এবং যাচাই-বাছাই করে একটি স্বতন্ত্র নীতিমালা তৈরি করা হবে। সেই নীতিমালা মেনে দেশে ওয়াইফাই হটস্পট তৈরি করা হবে।
জানা গেছে, হটস্পটে ‘ইয়ুথ কর্নার’ তৈরি করা হবে। এ কর্নারকে আইটি কর্নার ও ইনফরমেশন সেন্টার হিসেবে গড়ে তোলার পরিকল্পনা রয়েছে সরকারের। সেখানে স্থাপন করা হবে ইন্টারনেট কিয়স্ক ও একটি বড় এলইডি টিভি। ওয়াইফাই জোন হওয়ায় কিয়স্কে থাকবে উচ্চগতির ইন্টারনেট। সেখানে ওয়াইফাইয়ের গতি কত হবে, কতটুকু এলাকা এর আওতাভুক্ত হবে, কোন ধরনের জায়গায় বসানো হবে, কী ধরনের নিরাপত্তা ব্যবস্থা রাখা হবে ইত্যাদি বিবেচনায় নিয়ে পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে।
বেসরকারিভাবে অনেক প্রতিষ্ঠানও দেশে ওয়াইফাই হটস্পট নির্মাণ করছে। এর মধ্যে মোবাইল ফোন অপারেটর, মোবাইল ফোন নির্মাতা প্রতিষ্ঠান, ইন্টারনেট সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানও রয়েছে। দেশের কয়েকটি দূরপাল্লার রুটের বাসে, ঢাকা শহরের কিছু বাসে ওয়াইফাই সেবা দেওয়া হচ্ছে। জানা গেছ, বেসরকারি উদ্যোগে নির্মিত হটস্পটগুলো ১ লাখ ওয়াইফাই হটস্পটের মধ্যে পড়বে না।
বর্তমান সরকার দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় আসার পরে আইসিটি বিভাগ সারাদেশে ১ লাখ ফ্রি ওয়াইফাই হটস্পট তৈরির ঘোষণা দেয়। ওই ঘোষণায় বলা হয়, ইউনিয়ন পর্যায়ের হাট-বাজার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, লঞ্চঘাট, এয়ারপোর্ট, বাস টার্মিনালসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ও লোকসমাগমের স্থানে এসব হটস্পট তৈরি করা হবে। সরকারি যেসব অফিসে ইন্টারনেট সংযোগ আছে সেখানে রাউটার বসিয়ে ওই অফিসে আসা লোকজনকেও ইন্টারনেট সেবা দেওয়া যাবে।