মাদক কঠোরভাবে দমন করুন

30

জঙ্গি দমনের পর দেশ থেকে মাদক নির্মূলে প্রধানমন্ত্রী কঠোর হওয়ার নির্দেশ দেওয়ার পর সম্প্রতি বিভিন্ন স্থানে মাদক কারবারি চক্রের বিরুদ্ধে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বিভিন্ন বাহিনীর অভিযান পরিচালিত হচ্ছে। মাদকবিরোধী অভিযানের মধ্যে গত কয়েক দিনে বন্দুকযুদ্ধে অন্তত ৩৫ জনের মৃত্যু হয়েছে বিভিন্ন জেলায়। মাদকের বিস্তার নিয়ে উদ্বেগ থাকলেও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী যেভাবে দমন করতে শুরু করেছে, তাতে সংশয় প্রকাশ করেছেন মানবাধিকারকর্মীরা। অন্যদিকে ক্ষমতাসীন দলের সাধারণ সম্পাদক বলেছেন, তরুণসমাজকে সর্বনাশা পথ থেকে ফিরিয়ে আনার জন্য এই অভিযান যুগান্তকারী পদক্ষেপ। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জিরো টলারেন্সের কথা উল্লেখ করে বলেছেন, কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না।
মাদক পাচার ও সেবন দেশ ও সমাজের জন্য মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠলেও মাদক কারবারের বড় হোতাদের ধরা যাচ্ছে না। বিচারের আওতায় আনা যাচ্ছে না মাদক কারবারের হোতাদের। যাদের গ্রেপ্তার করা হচ্ছে, তারাও আইনের ফাঁকফোকর দিয়ে বেরিয়ে যাচ্ছে। বিদ্যমান আইনে মাদকের সংজ্ঞায় অনেক মাদকদ্রব্যের নাম নেই। অথচ প্রতিদিন নতুন নতুন নামে মাদক আসছে। আইনসংশ্লিষ্টরা মনে করেন, আইনের ধারাই মাদকের গডফাদারদের রক্ষা করে চলেছে। যার কাছে মাদক পাওয়া যাবে, শুধু তার বিরুদ্ধেই মামলা করা যায়। ফলে মাদকের গডফাদাররা থেকে যায় আড়ালে। বিদ্যমান আইনে শুধু মাদকের অধিকারীদের বিরুদ্ধেই মামলা করা যায়। কিন্তু আড়াল থেকে যারা মাদকের কারবার নিয়ন্ত্রণ করে, তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া যাচ্ছে না।
মাদকের অপব্যবহার এখন শুধু মাদকেই সীমিত থাকছে না। মাদকের কারণে নানা অপরাধে জড়াচ্ছে দেশের তরুণসমাজ। সমাজে যেমন অপরাধপ্রবণতা বাড়ছে, তেমনি মাদকসেবীরা পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রের জন্য সমস্যা হয়ে দাঁড়াচ্ছে। এভাবে চলতে থাকলে সমাজ শুধু পঙ্গু হয়ে যাবে, তা নয়। দেশের সব উন্নয়ন প্রচেষ্টাও মুখ থুবড়ে পড়বে। বিভিন্ন সময় বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা থেকেও বাংলাদেশ যে ক্রমেই ভয়ংকর পথে এগিয়ে যাচ্ছে, সে ব্যাপারে সতর্ক করা হয়েছে। কিন্তু আমাদের সমাজ বা রাষ্ট্রের এ নিয়ে খুব একটা দুর্ভাবনা ছিল বলে মনে হয় না। দেশে মাদক উৎপাদিত হয় না বললেই চলে। মাদকের প্রায় সবটাই আসে বাইরে থেকে অবৈধ পথে। তাই মাদক নিয়ন্ত্রণের জন্য প্রথমেই কঠোরভাবে মাদক চোরাচালান বন্ধ করতে হবে। মাদকসংক্রান্ত মামলাগুলো ঝুলে থাকে, অপরাধীরা পার পেয়ে যায়। তাদের জন্য দ্রুত ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে। প্রয়োজনে নতুন আইন করতে হবে। আইনি দুর্বলতা কাটিয়ে উঠতে হলে আইনের সংস্কার জরুরি। আইনি দুর্বলতার কারণেই মাদক কারবারের হোতাদের আইনের আওতায় আনা যাচ্ছে না। যুগোপযোগী আইনই মাদকের ভয়াবহতা রোধ করতে পারে।