মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী, উপমন্ত্রী ও সচিবরা বিনামূল্যে ৭৫ হাজার টাকা দামের মোবাইল পাচ্ছেন

22

কাজিরবাজার ডেস্ক :
মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী, উপমন্ত্রী ও সচিবদেরকে বিনামূল্যে ৭৫ হাজার টাকায় মোবাইল ফোন দেয়ার প্রস্তাবে নীতিগত অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা।
এর আগে মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী, উপমন্ত্রী ও সচিবদের জন্য মোবাইল কেনার জন্য বরাদ্দ ছিল ১৫ হাজার টাকা। সেটি পাঁচ গুণ করার পেছনে মন্ত্রিপরিষদ সচিবের যুক্তি হলো, ‘এর চেয়ে নিচে ভালোমানের অ্যানড্রয়েড ফোন পাওয়া যায় না।’
কেবল সেট নয়, তাদের বিলও দেয়া হবে সরকারি কোষাগার থেকে। আর সেটাও নির্দিষ্ট অংক নয়।
সোমবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে মন্ত্রিসভার বৈঠকে এ বিষয়ে একটি প্রস্তাবে সায় দেয়া হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে এই বৈঠকের পর সচিবালয়ে আলোচ্যসূচি ও সিদ্ধান্ত নিয়ে সাংবাদিকদের জানান মন্ত্রিপরিষদ সচিব।
সচিব বলেন, ‘ভালোমানের মোবাইল সেট কিনতে কমপক্ষে ৭৫ হাজার টাকার নিচে সম্ভব নয়। তাই তাদের জন্য এ টাকা বরাদ্দ দিয়ে একটি আইনের খসড়া অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা।’
মন্ত্রিসভার বৈঠকে অনুমোদন হওয়া খসড়া নীতিমালার নাম ‘সরকারি টেলিফোন, সেলুলার, ফ্যাক্স ও ইন্টারনেট নীতিমালা ২০১৮ ।
এ সংক্রান্ত একটি নীতিমালা ২০০৪ সাল থেকে ছিল। নীতিমালাটি সংশোধন করে আইন আকারে করা হচ্ছে।
নীতিমালায় সুপ্রিম কোর্টের বিচারকদের মোবাইল বরাদ্দের সুযোগ ছিল না। এ আইনে তা যুক্ত করা হচ্ছে।
তবে বিচারকদের কত টাকা দামের মোবাইল সেট দেওয়া হবে সেটি এখনও ঠিক হয়নি জানিয়ে বিষয়টি পরে আইনে যুক্ত করা হবে বলে জানান মন্ত্রিপরিষদ সচিব।
শফিউল আলম বলেন, ‘মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী, উপমন্ত্রী ও সচিবদের জন্য মোবাইল বিল নির্ধারিত নয়। পোস্ট-পেইড পদ্ধতিতে সরকারি কোষাগার থেকে তাদের মোবাইলের মাসিক বিল পরিশোধ করা হবে।’
‘তবে অতিরিক্ত সচিব, যুগ্ম সচিব ও উপসচিবদের জন্য মোবাইল বিল বাড়ানো হয়েছে এ আইনে।’
আগে তাদের প্রতি মাসে বিল বাবদ দেয়া হতো ৬০০ টাকা। এখন তা বাড়িয়ে করা হয়েছে দেড় হাজার টাকা। তবে এ পর্যায়ের সরকারি কর্মকর্তাদের মোবাইল সেট দেবে না সরকার।
বর্তমানে ৩৩ জন মন্ত্রী, ১৮ জন প্রতিমন্ত্রী, ২ জন উপমন্ত্রী ও ৭৮ জন সচিব রয়েছেন। এদের পেছনে এই মোবাইল ফোন কিনতে খরচ হবে ৯৮ লাখ ২৫ হাজার টাকা।
মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সূত্রে জানা গেছে, মন্ত্রী ও সচিবদেরকে বিনামূল্যে ফোন ও তাদের বিল দেয়ার এই প্রস্তাবটি গেছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে।
মন্ত্রী প্রতিমন্ত্রী বা সচিবরা তো এমনিতেই তাদের পছন্দ মতো ফোন ব্যবহার করেন। তাহলে কেন তাদেরকে আবার ফোন কিনে দিতে হবে, এ বিষয়ে জানতে চাইলে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মোজাম্মেল হক খান কিছু বলতে রাজি হননি। তিনি বলেন, ‘এ বিষয়ে আমি কিছু বলব না।
এদিকে দেশি প্রতিষ্ঠান ওয়ালটনের সিনিয়র অপারেটিভ ডিরেক্টর উদয় হাকিম দাবি করেন, ওয়ালটন বিশ্বমানের স্মার্টফোন তৈরি করছে। ভালো মানের এসব ফোনের দাম আমদানি করা বিদেশি ফোনের তুলনায় অনেকাংশে কম।
মন্ত্রিসভায় ‘হাউজিং অ্যান্ড বিল্ডিং রিসার্চ ইনস্টিটিউট আইন ২০১৭’ এর খসড়ার চূড়ান্ত অনুামোদন দেওয়া হয়েছে। আইনটি ১৯৭৫ সালের একটি আইন। এটিকে বাংলায় রূপান্তর করা হয়েছে।
তবে পরিবর্তিত ৬ ধারায় বলা হয়েছে এ আইনে ইনস্টিটিউট পরিচালনার জন্য একটি পরিষদ থাকবে। এর প্রধান থাকবেন গণপূর্ত মন্ত্রী।
উপপ্রধান থাকবেন ওই মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী বা উপমন্ত্রী। তবে সদস্য সচিব থাকবেন মন্ত্রণালয়ের সচিব।
মোস্তফা জব্বার যা বলছেন : ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার জানান, ফোন কেনার এই প্রস্তাব তার মন্ত্রণালয়ের নয়।
মন্ত্রী বলেন, ‘আপনি এই প্রশ্নের উত্তর মন্ত্রিপরিষদ সচিবের কাছে পাবেন। এই নীতিমালাটা কেবিনেট ডিভিশন তৈরি করেছে। ফোন কেনার টাকার বরাদ্দ ও অন্যান্য বিষয় কেবিনেট ডিভিশন ঠিক করেছে। তাই আমি বলব, এর সঙ্গে আমি কোনো ভাবেই সংশ্লিষ্ট নই।’
‘কেবিনেট ডিভিশন ভালো বলতে পারবে কেন তারা মোবাইল ফোন কেনার জন্য ৭৫ হাজার টাকা রেখেছে, কেন পাঁচ হাজার টাকা রাখেনি।’
মোস্তফা জব্বার বলে, ‘বাংলাদেশেও ৭৫ হাজার টাকা দামের ভালো মানের ফোন পাওয়া যাবে। যদি স্যামসাংয়ের মত বিদেশি প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশে ফোন উৎপাদন শুরু করে তখন এ দেশেও ৭৫ হাজার টাকা দামের ফোন তৈরি হবে।’
এদিকে দেশি প্রতিষ্ঠান ওয়ালটনের সিনিয়র অপারেটিভ ডিরেক্টর উদয় হাকিম দাবি করেন, ওয়ালটন বিশ্বমানের স্মার্টফোন তৈরি করছে। ভালো মানের এসব ফোনের দাম আমদানি করা বিদেশি ফোনের তুলনায় অনেকাংশে কম।