বাজার নিয়ন্ত্রণ নিশ্চিত করুন

31

পবিত্র রমজান মাস শুরু হওয়ার আগে দ্রব্যমূল্য না বাড়াসহ নানা ধরনের আশ্বাস দেওয়া হয়েছিল। বরাবরের মতো সেসব আশ্বাস শুধু আশ্বাসই থেকে গেছে, বাস্তবে ধরা দেয়নি। বাজারে প্রায় প্রতিটি নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্যপণ্যের দাম বেড়েছে। সিটি করপোরেশন থেকে গরুর মাংসের দাম নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছিল ৪৫০ টাকা কেজি। বেশির ভাগ বাজারেই ৪৮০ থেকে ৫০০ টাকা কেজি দরে তা বিক্রি হচ্ছে। নির্ধারিত দাম কার্যকর করার ব্যাপারে সিটি করপোরেশনগুলোর কোনো উদ্যোগও চোখে পড়ে না। চিনি আমদানির খরচ টনপ্রতি ৫০ ডলার কমলেও দেশের বাজারে চিনির দাম বেড়ে কেজিপ্রতি ৫৫ টাকা হয়েছে। ছোলা, পেঁয়াজ, রসুনের দাম রোজা শুরুর কয়েক দিন আগে থেকেই বাড়ছে। ক্রেতাদের প্রশ্ন, তাহলে এমন দাম নির্ধারণ বা আশ্বাস দেওয়ার অর্থ কী?
বাজারে যেসব পণ্যের দাম বেড়েছে তার কোনোটিরই এভাবে দাম বাড়ার কোনো যৌক্তিক কারণ নেই। বাজারসংশ্লিষ্টরা মনে করেন, রমজানের অতিরিক্ত চাহিদাকে পুঁজি করে এক শ্রেণির ব্যবসায়ীর অতিরিক্ত মুনাফার মনোবৃত্তিই রমজানে মূল্যবৃদ্ধির অন্যতম কারণ। এ ক্ষেত্রে রাষ্ট্রের কোনো নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা নেই বললেই চলে। টিসিবির মাধ্যমে খোলাবাজারে অল্প কিছু পণ্য বিক্রির যে চেষ্টা করা হয়, তা এতটাই সামান্য যে বাজারে কার্যত তার কোনো প্রভাবই পড়ে না। নিয়মিত ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হলে এবং বাজারগুলোতে নজরদারি থাকলে হয়তো কিছুটা উপকার হতো, কিন্তু তা-ও খুব একটা দেখা যায় না। ফলে বিক্রেতারা অনেক ক্ষেত্রেই স্বেচ্ছাচারী হয়ে উঠেছে। যেখানে যার কাছ থেকে যতটুকু নেওয়া যাচ্ছে, তার সর্বোচ্চটাই তারা নেওয়ার চেষ্টা করছে। শুধু মূল্যবৃদ্ধিই নয়, বাজারে যেসব খাদ্যদ্রব্য পাওয়া যাচ্ছে, তার মান নিয়েও রয়েছে অনেক সংশয়। ক্রেতাদের অভিযোগ, বেশির ভাগই নিম্নমানের এবং ভেজালযুক্ত। এসব কিনে তাঁরা প্রতারিত হচ্ছেন। আশ্বাস দেওয়া হয়েছিল, পবিত্র রমজান মাসে গ্যাস সরবরাহেও ঘাটতি হবে না। এ জন্য গাড়িতে সিএনজি সরবরাহের সময়ও দুই ঘণ্টা কমানো হয়েছে। কিন্তু প্রকাশিত খবরে দেখা যায়, সেই আশ্বাসও ঠিক থাকেনি। রাজধানী সহ অনেক এলাকায়ই গ্যাসের তীব্র সংকট রয়েছে, ইফতার-সাহরির খাদ্য তৈরিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে।
সরকারের দায়িত্ব হচ্ছে, নাগরিকদের দুর্ভোগ যথাসাধ্য দূর করা, শুধু আশ্বাস দেওয়া নয়। আমাদের বাজারের চরিত্র সরকারের শীর্ষস্থানীয়দের অজানা নয়। এখানে অযৌক্তিক মূল্যবৃদ্ধি রোধ করার জন্য স্থায়ী ব্যবস্থা নিতে হবে। জরুরি সময়ে নাগরিক সেবাগুলো নিশ্চিত করার জন্য আগে থেকেই পরিকল্পিত উদ্যোগ নিতে হবে।