২১ আগষ্ট গ্রেনেড হামলায় নিহতদের স্বজন ও আহতদের মধ্যে চেক বিতরণকালে প্রধানমন্ত্রী ॥ খালেদা জিয়াকে গণতন্ত্রের মা উপাধি দেয়া জাতির সঙ্গে তামাশা

120

কাজিরবাজার ডেস্ক :
দলীয় চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে বিএনপির গণতন্ত্রের মা উপাধি দেয়া জাতির সঙ্গে তামাশা বলে মনে করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি মনে করেন, সাবেক প্রধানমন্ত্রীর নাম হওয়া উচিত খুনির মা বা চোরের মা।
২০১৪ সালের ২১ আগস্ট বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের জনসভায় করা গ্রেনেড হামলায় তারেক রহমান জড়িত ছিলেন অভিযোগ করে খালেদা জিয়ার খুনির মা নাম হওয়া উচিত বলে মন্তব্য করেন প্রধানমন্ত্রী।
আবার বিএনপি নেত্রীর দুই ছেলে তারেক রহমান রহমান এবং আরাফাত রহমান কোকোর বিদেশে পাচার করা টাকা যুক্তরাষ্ট্র এবং সিঙ্গাপুরে ধরা পড়া, ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে পরিশোধ না করার কথা তুলে ধরে খালেদা জিয়ার উপাধি চোরের মা হওয়া উচিত বলে মনে করেন প্রধানমন্ত্রী।
মঙ্গলবার গণভবনে গ্রেনেড হামলা মামলায় নিহতদের স্বজন এবং আহতদের মধ্যে চেক বিতরণ অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখছিলেন প্রধানমন্ত্রী।
এ সময় ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা ছাড়াও জিয়াউর রহমান ও খালেদা জিয়ার আমলে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের হত্যা-নির্যাতনের বিষয়টি উল্লেখ করেন শেখ হাসিনা।
বঙ্গবন্ধু হত্যার বিষয়ে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই হত্যার সাথে জিয়াউর রহমান যে জড়িত ছিল, তাতে তো কোনো সন্দেহ নাই। খুনি ফারুক, রশিদরাই বিবিসিতে বলেছে।
এই পরিবারটা কেবল খুনখারাবিই করতে পারে। আর কিছু জানে না। আর এখন তো এতিমখানার জন্য টাকা এসেছে, তাও আবার চুরি করে খেয়ে বসে আছে।
গণতন্ত্রের মা হলো কীভাবে?
খালেদা জিয়াকে কীভাবে গণতন্ত্রের মা উপাধি দেয়া হলো, সে প্রশ্নও রাখেন প্রধানমন্ত্রী।
বিএনপি নেত্রীর বিরুদ্ধে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলার কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ১০ বছর ধরে মামলা চলেছে। বিএনপির আইনজীবীরা এটা প্রমাণ করতে পারে নাই যে এতিমের টাকা খালেদা জিয়া মেরে দেয় নাই বা এই টাকা আত্মসাৎ করে নাই।
১০ বছর ধরে একটা মামলা চলা সোজা কথা না। তারপর তার শাস্তি হয়েছে। যে গ্রেনেড হামলা করায়, মানুষ খুন করে, এতিমের টাকা মেরে খায়, তার নাম আবার তারা বলে গণতন্ত্রের মা। সে তো ‘খুনির মা, বলতে হয়, চোরের মা।
গত ৮ ফেব্রুয়ারি খালেদা জিয়ার পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দেয়া এক মাস পর ১০ মার্চ খুলনার এক জনসভায় খালেদা জিয়াকে গণতন্ত্রের মা উপাধি দেন দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
প্রধানমন্ত্রী এর প্রতিক্রিয়ায় বলেন, যে খুন করে, এতিমের টাকা আত্মসাৎ করে, তাকে বানিয়েছে গণতন্ত্রের মা। গণতন্ত্র হলো কীভাবে?
যে (খালেদা জিয়া) ভোট চুরিতে এক্সপার্ট, মানুষ খুনে এক্সপার্ট, দুর্নীতিতে, এক্সপার্ট কালো টাকা সাদা করে, সে আবার গণতন্ত্রের মা হয়।
বাংলাদেশের মানুষের সঙ্গে তামাশা করা ছাড়া এটা আর কিছুই না।
এ সময় ৯৬ সালে বিএনপির একদলীয় নির্বাচনের পর আন্দোলনের মুখে খালেদা জিয়ার ক্ষমতা ছাড়ার কথাও তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী। বলেন, ৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি যে ভোট চুরি করে ক্ষমতায় থেকে খুব বড়াই করছিল দ্বিতীয়বার প্রধানমন্ত্রী হলাম। কিন্তু আন্দোলন সংগ্রাম করেছে জনগণ। জনগণের ভোট চুরি জনগণ মেনে নেয়নি। তার ফলে তাকে সে পদত্যাগে বাধ্য হয়েছিল। ৩০ মার্চ সে পদত্যাগ করে।
তাদের অপকর্মের শেষ নেই
এ সময় দুর্নীতির দুই মামলায় তারেক রহমানের সাজা হওয়ার বিষয়টি উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী। বলেন, তার (খালেদা জিয়া) ছেলে মানিলন্ডারিং করে। এফবিআই (যুক্তরাষ্ট্রের তদন্ত সংস্থা) থেকে এসে সাক্ষী পর্যন্ত দিয়ে গেছে। তার ছেলে সাজাপ্রাপ্ত।
তারেক রহমানের সাজা হয়েছে দুইটা কেসে। একটা ১০ বছর, একটা সাত বছর।
তাদের তো আরও অপকর্মের শেষ নেই। ব্যাংকের টাকা লুটপাট করে খেয়ে চলে গেছে। টাকা পয়সা সব বিদেশে পাচার করেছে, সে টাকা ধরা পড়েছে আমেরিকায়, ধরা পড়েছে সিঙ্গাপুরে।
কিছু টাকা আমরা ফেরতও এনেছি। এই যে ঘটনাগুলো তারা ঘটিয়েছে। একদিনে জনগণের অর্থ আত্মসাৎ করা, মানি লন্ডারিং করা, বিদেশে টাকা পাচার করা আর সেটা ধরা পড়ল বিদেশিদেরই কাছে। এখানে আমাদের তো দোষ দিয়ে লাভ নেই।
আমেরিকার কোর্টে ধরা পড়েছে, সিঙ্গাপুরের কোর্টে ধরা পড়েছে। কিছু টাকা আমরা উদ্ধারও করেছি। জনগণের জন্য নিয়েও এসেছি।
জিয়াউর রহমান ক্ষমতায় থাকাকালে সেনাবাহিনীতে হাজার হাজার মুক্তিযোদ্ধা অফিসার ও সৈনিককে হত্যার বিষয়টিও তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী। বলেন, সেনাবাহিনীর আকাশ বাতাস তখন ভারী ছিল বিধবার কান্নায়, সন্তানহারা পিতামাতার কান্নায়, পিতাহারা সন্তানদের কান্নায়। এই অবস্থা ছিল দেশে। ১৯টা ক্যু হয়েছিল দেশে। এই রকম অরাজক অবস্থা তারা সৃষ্টি করেছিল।
সেসব ভুলিনি
বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়ার রহমান এবং খালেদা জিয়ার আমলে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের হত্যা-নির্যাতনের কথাও তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী। বলেন, এগুলো তিনি ভুলেননি, ভুলবেন না কখনও।
জিয়াউর রহমান আসার পর থেকে তারা শুরু করেছে আওয়ামী লীগের ওপর নির্যাতন। আবার খালেদা জিয়া আসার পর একই কাজ করেছে। হাজার হাজার নেতা-কর্মী ২০০১ এর পর থেকে ঘরে টিকতে পারেনি কেউ, বাড়িতে টিকতে পারেনি।
মেয়েদের ওপর যে অত্যচার তারা করেছে রাস্তায় ফেলে একদিনে পুলিশ আরেক দিকে বিএনপির ক্যাডাররা, সেটা তো তো ভুলে যাইনি, আমরা ভুলতে পারি না।
খালেদা জিয়ার কাজ তো এটাই ছিল, খুন খারাবি। আমাদের আওয়ামী লীগের হাজার হাজার নেতা-কর্মী, আজকে এখানে কত জন আছে, তার ছেলেকে হত্যা করা হয়েছে।
মেয়র ইলেকশনের পর (১৯৯৪ সালে ঢাকা সিটি করপোরেশন নির্বাচন) ছয় জন বা সাত জনকে হত্যা করল। এ রকম সারা বাংলাদেশে তারা এই ধরনের হত্যাযজ্ঞ করেছে।
বাংলাদেশকে অন্য মর্যাদায় নিয়ে গেছি
বাংলাদেশের প্রথম স্যাটেলাইট উৎক্ষেটণের বিষয়টিও তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশকে একটা অন্য মর্যাদায় নিয়ে গেছি। মাত্র নয় বছরে বাংলাদেশে আমরা যে যে আর্থিক উন্নতি করেছি, আর তো কেউ করতে পারেনি।
বিএনপি কেন এই উন্নয়ন করতে পারেনি প্রশ্ন রেখে নিজেই এর জবাব দেন শেখ হাসিনা। বলেন, ওরা করবে কেন? ওরা রাজাকার আলবদর, যুদ্ধাপরাধী, তাদেরকে মন্ত্রী জানিয়েছি। জাতির পিতার খুনি, তাদেরকে ভোট চুরি করে এমপি বানিয়েছে। তাদের কাজই হচ্ছে খুনি, দুর্নীতিবাজ, সন্ত্রাসী, জঙ্গিবাদ, এদেরকে নিয়ে। এরা তো দেশের কল্যাণ চায় না, মানুষের স্বাধীনতাতেই বিশ্বাস করে না।
তার (খালেদা জিয়া) হৃদয়ে তো আছে পেয়ারে পাকিস্তান, সেখানে বাংলাদেশ তো নাই।
এই ধরনের খুনি, জালেম, জঙ্গিবাদে বিশ্বাস করে যারা, ৫০০ জায়গায় বোমা হামলা করে, আমাদের দুই জন এমপিকে হত্যা করে, এই সমস্ত খুনিদের কাছে যেন আর বাংলাদেশের ক্ষমতা না যায়।