নবীগঞ্জে বউ-শাশুড়ী খুনের ঘটনায় আটক ৪

43

তোফাজ্জল হোসেন নবীগঞ্জ থেকে :
নবীগঞ্জ উপজেলার কুর্শি ইউনিয়নের সাদুল্লাপুর গ্রামে অজ্ঞাত দুবৃর্ত্তদের হাতে এক লন্ডন প্রবাসীর স্ত্রী ও তার মা নির্মমভাবে খুন হয়েছেন। গত রবিবার দিবাগত রাত ১১ টার দিকে লোমহর্ষক এ ঘটনাটি সংঘটিত হয়। ঘটনার খবর পেয়ে পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ঘটনাস্থল পরির্দশন করে তদন্তে নেমেছেন। এ ঘটনাটিকে পরিকল্পিত হত্যাকান্ড বলে মনে করছেন স্থানীয় লোকজন। উভয় মরদেহের গায়ে ধারালো অস্ত্রের একাধিক আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। নিহতরা হলেন, ওই গ্রামের মৃত রাজা মিয়ার স্ত্রী মালা বেগম (৫৫) ও তার পুত্রবধূ রুমি বেগম (২২)। পুলিশ ঘটনার প্রায় ৪ ঘন্টা পর প্রথমে সাদুল্লাপুর গ্রামের আবু তালেব (১৮) নামের এক যুবককে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করে। এর ঘন্টাখানেক পর একই গ্রামের ক্বারী আব্দুস সালাম (৬০), তার পুত্র শহিদুর রহমান (৩৫) ও অপর যুবক শুভ রহমান (৩০) নামের আরো ৩ জনকে আটক করে।
এলাকাবাসী ও পুলিশ সূত্রে জানা যায়, নবীগঞ্জ উপজেলার কুর্শি ইউনিয়নের সাদুলাপুর গ্রামের মৃত রাজা মিয়ার পুত্র আকলাক চৌধুরী ওরপে গুলজার দীর্ঘদিন যাবৎ লন্ডনে বসবাস করছেন। গত প্রায় ২ বছর পূর্বে একই গ্রামের কুয়েত প্রবাসী সুজন চৌধুরীর কন্যা ও পল্লী চিকিৎসক নজরুল ইসলামের ছোট বোন রুমি বেগমকে বিয়ে করেন। বিয়ের পর থেকে তার বাড়িতে শুধু মা মালা বেগম ও স্ত্রী রুমি বেগম থাকতেন। দিনের বেলায়ও ঘরের সকল গেইটে তালা লাগানো থাকতো। গত রবিবার দিবাগত রাত ১১ টার দিকে হঠাৎ চিকিৎকার শুনে গ্রামের বিভিন্ন মানুষ ঘর থেকে বেড়িয়ে এসে দেখতে পান লন্ডন প্রবাসী আকলাক চৌধুরী ওরপে গুলজার মিয়ার বাড়িতে রক্তাত লাশ পড়ে আছে। স্থানীয় লোকজন ওই বাড়িতে গিয়ে ঘরের বাহির থেকে গৃহবধূ রুমি ও ঘরের ভিতর থেকে তার শাশুড়ি মালা বেগমের ক্ষতবিক্ষত লাশ উদ্ধার করে নবীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে আসলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাদেরকে মৃত বলে ঘোষণা করেন। নবীগঞ্জ থানা পুলিশ হাসপাতাল গিয়ে লাশ দু‘টির সুরতহাল রিপোর্ট তৈরী করে। খবর পেয়ে হবিগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আ.স.ম.শামছুর রহমান ভ’ইয়া, নবীগঞ্জ-বাহুবল সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার পারভেজ আলম চৌধুরীসহ নবীগঞ্জ থানার অফিসারগন ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। এছাড়াও পুলিশের পিআইবি, ডিবি ও র‌্যাবও ঘটনাস্থলে গিয়ে তদন্ত করছে।
নিহত রুমি বেগমের বড় ভাই পল্লী চিকিৎসক নজরুল ইসলাম জানান, প্রতিদিনই তিনি তার বোনের বাড়ির লোকজনের খোঁজ খবর রাখতেন। গতকাল রাতে বোন রুমি মোবাইল ফোনে কল দিয়ে জানায় চোঁখে আঘাত পেয়েছে ঔষধ দেওয়ার জন্য। পরে বোনের পাশের বাড়ির জনৈক তালেব মিয়ার মাধ্যমে রাত ১০ টার দিকে বোনের জন্য ঔষধ দিয়ে পাঠান নজরুল। এরপর রাত ১১ টার দিকে নির্মম এ ঘটনার খবর পান। এদিকে লাশ উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে আসা কয়েকজন স্থানীয় লোক জানান, চিৎকার শুনে তারা বাড়িতে গিয়ে লাশ দু‘টি দেখতে পান। এ সময় ঘরের একটি টেবিলে ৪ টি চায়ের কাপও ছিল। এতে স্থানীয় লোকজন ধারনা করছেন হত্যাকারীরা ঘটনার পুর্বেই বাড়িতে অবস্থান করে চা পান করে। তবে ঘরের কোন মালামাল খোয়া যায়নি বলে নিহতের স্বজনরা জানিয়েছেন। এদিকে কি কারনে বউ-শাশুড়ীকে হত্যা করা হলো এ নিয়ে মূখরোচক আলোচনা চলছে। ধারণা করা যাচ্ছে, হত্যাকারীরা পূর্ব পরিচিত। পুলিশ ঘরের ভিতর থেকে চায়ের কাপ, এক জুড়া জুতা ও ১টি হাতঘড়ি উদ্ধার করেছে বলে জানা গেছে। নবীগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ এস.এম আতাউর রহমান ৪ জনকে আটকের কথা নিশ্চিত করেছেন। গ্রামবাসী নির্মম এই হত্যাকান্ডের সুষ্ঠু বিচার দাবী করছেন।