কোটা আন্দোলন রাজপথে স্থগিত, চলবে ধর্মঘট

117

কাজিরবাজার ডেস্ক :
কোটা বাতিলের প্রজ্ঞাপন জারির দাবিতে আন্দোলনরতরা ঘোষণা দিয়েছেন, জনদুর্ভোগের কথা চিন্তা করে তারা আর রাজপথে নামবেন না। তবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ সারাদেশের বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজগুলোয় অনির্দিষ্টকালের ছাত্র ধর্মঘট চলবে।
সোমবার সন্ধ্যা সাতটার দিকে শাহবাগে এক সংবাদ সম্মেলনে এই ঘোষণা দেন কোটা সংস্কার আন্দোলনের যুগ্ম আহ্বায়ক নুরুল হক নুর।
এর আগে দুপুর থেকে শাহবাগে অবস্থান নেন আন্দোলনকারীরা। এতে গুরুত্বপূর্ণ এই সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। যানজট দেখা দেয়া রাজধানীজুড়ে। দুর্ভোগে পড়েন সাধারণ মানুষ।
নুরুল হক নুরু জানান, কোটা বাতিলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতীয় সংসদে যে ভাষণ দিয়েছেন তা তিনি বাস্তবায়ন করবেন বলে আন্দোলনকারীদের কাছে বার্তা এসেছে। এজন্য তারা প্রজ্ঞাপন জারির দিকে তাকিয়ে আছেন। তবে এই দাবি জোরালো করতে সারাদেশে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যে ধর্মঘট চলছে তা অব্যাহত থাকবে বলে জানান তিনি।
পূর্বঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী সোমবার সকাল থেকেই ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন করে বিক্ষোভ করে আন্দোলনকারীরা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে মিছিল করার পর বেলা একটার দিকে শাহবাগ মোড়ে অবস্থান নেয় তারা।
এর আগে রবিবার বিকাল ৫টার মধ্যে কোটা বাতিলের প্রজ্ঞাপন জারি করা না হলে সোমবার থেকে দেশের সব কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে লাগাতার ধর্মঘট পালন করা হবে ঘোষণা দিয়েছিল আন্দোলনকারীদের সংগঠন ‘বাংলাদেশে সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ।’
সোমবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ সারাদেশের বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজগুলোয় অনির্দিষ্টকালের ছাত্র ধর্মঘট ও অবস্থান কর্মসূচি পালিত হয়। আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা বলছেন, প্রজ্ঞাপন জারি না হলে তারা তাদের আন্দোলন চালিয়ে যাবে।
সকালে ঢাবির কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে জড়ো হন হাজারো শিক্ষার্থী। এসময় কোনো কালক্ষেপণ না করে অবিলম্বে চাকরিতে কোটাপদ্ধতি সংস্কারে প্রজ্ঞাপন জারির আহ্বান জানিয়ে বিভিন্ন স্লোগান দেন তারা।
ঢাবি ক্যাম্পাস ঘুরে দেখা গেছে, সোমবার ধর্মঘটের প্রভাব পড়েছে সামগ্রিক শিক্ষা কার্যক্রমে। কয়েকটি বিভাগে ক্লাস ও পরীক্ষা হলেও সাধারণ শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি ছিল কম। ধর্মঘটের কারণে প্রতিদিনকার কোলাহলে ভাটা পড়ে ক্যাম্পাসে।
এর আগে কোটা বাতিলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেয়া ঘোষণা ৩০ এপ্রিলের মধ্যে বাস্তবায়নের দাবিতে ২৬ এপ্রিল পর্যন্ত আলটিমেটাম দিয়েছিলেন সরকারি চাকরিপ্রত্যাশী সাধারণ শিক্ষার্থীদের এ প্লাটফর্ম। এই সময়ের মধ্যে গেজেট প্রকাশ না হলে ১ মে থেকে ফের আন্দোলনের ঘোষণা দিয়েছিলেন তারা।
এমতাবস্থায় ২৭ এপ্রিল কোটা সংস্কার আন্দোলনের ১৫ সদস্যের একটি প্রতিনিধিদলের সঙ্গে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির নানক ও সাংগঠনিক সম্পাদক এ কে এম এনামুল হক শামীমের বৈঠক হয়। প্রায় দেড় ঘণ্টার ওই বৈঠক শেষে আওয়ামী লীগ নেতাদের অনুরোধে এবং মামলা প্রত্যাহারের আশ্বাসে ৭ মে পর্যন্ত আলটিমেটামের সময় বৃদ্ধি করেছিলেন আন্দোলনকারীরা। এই সময়েও প্রজ্ঞাপন জারি না হওয়ায় ৯ মে মানববন্ধন করে ১০ মের মধ্যে প্রজ্ঞাপন জারি করতে ফের আলটিমেটাম দেন তারা।
তবে এরপরও প্রজ্ঞাপন জারি না হলে রবিবার (১৩ মে) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বিক্ষোভ করেন তারা। বিক্ষোভ শেষে দুপুরে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলন নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করেন বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের আহ্বায়ক হাসান আল মামুন। এ সময় উপস্থিত ছিলেন পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক নুরুল হক নূর, মো. রাশেদ খান, ফারুক হোসেন প্রমুখ।
প্রসঙ্গত, সরকারি চাকরিতে কোটা ৫৬ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১০ শতাংশে নামিয়ে আনার দাবিতে গত ফেব্রুয়ারি থেকে আন্দোলনে নামে সংগঠনটি। ৮ এপ্রিল রাজধানীর শাহবাগে পুলিশের সঙ্গে আন্দোলনকারীদের সংঘর্ষের পর দেশের সব সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ে। পরে নামে সরকারি চাকরিতে অনীহা দেখানো বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররাও। আর ১২ এপ্রিল সংসদে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘কোনো কোটার দরকার নেই।’
কয়েকটি দেশ সফর শেষে দেশে ফিরে প্রধানমন্ত্রী ২ মে সংবাদ সম্মেলনে বলেন, তিনি কোটা বাতিলের বিষয়ে যে কথা বলেছেন, সেটা পাল্টাবেন না।
তবে সবশেষ সোমবার মন্ত্রিসভার বৈঠক শেষে মন্ত্রিপরিষদ সচিব শফিউল আলম জানিয়েছেন, এ বিষয়ের সারাংশ প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে পাঠানো। শিগগির এ ব্যাপারে প্রজ্ঞাপন জারি হবে।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ‘কোটা সংস্কারের প্রজ্ঞাপনের জন্য জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে কেবিনেট সচিবকে প্রধান করে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। সেই কমিটি ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী এবং নারী কোটার বিষয়ে একটি সার-সংক্ষেপ প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে পাঠিয়েছে। তবে আমি এখনও কোনো কাগজপত্র পাইনি। হয়তো কয়েকদিনের মধ্যেই পেয়ে যাবো। অবিলম্বে এই প্রজ্ঞাপন জারি করা হবে।’