সিলেট মিরর-এর প্রকাশনাপূর্ব সুধী সমাবেশ ॥ বিবেক, সাহস ও পেশাদারিত্ব একটি পত্রিকার প্রধান বৈশিষ্ট্য

115

সাংবাদিকতার মাধ্যমে মানবিকতার উন্নয়ন করা যায়। সমাজ ও রাষ্ট্রের অসংগতি তুলে ধরার পাশাপাশি সামাজিক কল্যাণেও সংবাদপত্রকে ভূমিকা রাখতে হয়। সাধারণ মানুষের দুঃখ দুর্দশার চিত্র পত্রিকার পাতায় উঠে আসলে মানুষের দুর্ভোগ প্রশমনের সুযোগ সৃষ্টি হয়। সাংবাদিকতার মহত্বকে মানবিক কল্যাণে প্রয়োগ করতে হবে। সকলে মিলে মানবিক সাংবাদিকতাকে এগিয়ে নিতে হবে।
আশুপ্রকাশিতব্য দৈনিক সিলেট মিরর-এর প্রকাশনাপূর্ব সুধী সমাবেশে সুধীজনেরা এসব কথা বলেছেন। শনিবার নগরীর রিকাবীবাজারস্থ কবি নজরুল অডিটোরিয়ামে অনুষ্ঠিত সুধী সমাবেশে জাতীয় পর্যায়ের বিশিষ্টজনেরাসহ সিলেটের বিভিন্ন শ্রেণিপেশার সুধীরা বক্তব্য রাখেন।
মুক্ত চিন্তার দৈনিক শ্লোগানে সিলেটে শীঘ্রই আত্মপ্রকাশ করছে নতুন দৈনিক সিলেট মিরর। পত্রিকার প্রকাশনা শুরুর আগে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার ব্যক্তিবর্গের মতামত, পরার্মশ ও প্রত্যাশা জানতে সুধী সমাবেশের আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠানের শুরুতেই পত্রিকার সম্পাদকীয় নীতি ও লক্ষ্য উদ্দেশ্য তুলে ধরেন সিলেট মিরর সম্পাদক আহমেদ নূর।
সুধী সমাবেশে অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন বাংলা একাডেমির সাবেক মহাপরিচালক, একুশে পদকপ্রাপ্ত লেখক ও গবেষক, বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালস এর বঙ্গবন্ধু অধ্যাপক ড. সৈয়দ আনোয়ার হোসেন,বিশিষ্ট সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব,একুশে পদকপ্রাপ্ত নাট্যজন রামেন্দু মজুমদার এবং ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের অধ্যাপক,গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব ড. আসিফ নজরুল।
সিলেটের সুধীজনের মধ্যে বক্তব্য রাখেন, জাতিসংঘে বাংলাদেশের সাবেক স্থায়ী প্রতিনিধি ও রাষ্ট্রদূত ড.এ কে আব্দুল মোমেন, সিলেট সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র ও মহানগর আওয়ামী লীগ সভাপতি বদরউদ্দিন আহমদ কামরান, বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা খন্দকার আব্দুল মুক্তাদির, লিডিং ইউনিভার্সিটির সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. কবির হোসেন, প্রবীণ রাজনীতিবিদ ও আইনজীবী বেদানন্দ ভট্টাচার্য, যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী সাংবাদিক মাহবুবুর রহমান, জেলা জাসদের সাধারণ সম্পাদক লোকমান আহমদ, সিলেট স্টেশন ক্লাবের সভাপতি এমাদউল্লাহ শহিদুল ইসলাম, মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক বদরুজ্জামান সেলিম, জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আলী আহমদ, শাবিপ্রবির সাবেক রেজিষ্টার জামিল আহমদ চৌধুরী,মদন মোহন কলেজের অধ্যক্ষ আবুল ফতেহ ফাত্তাহ, জালালাবাদ এসোসিয়েশনের ট্রাস্টি বোর্ডের সাধারণ সম্পাদক কাইয়ুম চৌধুরী, জেলা ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক মাহি উদ্দিন আহমেদ সেলিম, মহিলা ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক মারিয়ান চৌধুরী মাম্মী, সিলেট প্রেসক্লাবের সভাপতি ইকরামুল কবির, ওয়াকার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সিকান্দর আলী, আইনজীবী ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব দেওয়ান মিনহাজ গাজী, বাসদ সিলেটের জেলা শাখার সমন্বয়ক আবু জাফর,সম্মিলিত নাট্য পরিষদের সভাপতি মিশফাক আহমেদ চৌধুরী মিশু, ইমজার সভাপতি আশরাফুল কবির,সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সাধারণ সম্পাদক গৌতম চক্রবর্তী, বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) সিলেটের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল করিম কিম ও সম্মিলিত নাট্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রজত কান্তি গুপ্ত।
অনুষ্ঠানে সিলেট মিররের বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান বারাকা গ্র“প-এর পক্ষ থেকে বক্তব্য রাখেন বারাকা গ্রুপের চেয়ারম্যান ফয়সল আহমদ চৌধুরী ও ম্যানেজিং ডিরেক্টর গোলাম রাব্বানী চৌধুরী। পুরো অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন সিলেট মিররের বার্তা সম্পাদক মুক্তাদীর আহমদ মুক্তা।
ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক, লেখক ও গবেষক ড. সৈয়দ আনোয়ার হোসেন সাংবাপত্রকে বিবেক, সাহস ও পেশাদারিত্বের অনন্য একটি প্রতিষ্ঠান বলে মন্তব্য করেন। বক্তৃতায় বলেন, বিবেক, সাহস ও পেশাদারিত্ব একটি পত্রিকার প্রধান বৈশিষ্ট্য। একটি পত্রিকা কখনো সব মানুষের পত্রিকা হতে পারে না। পত্রিকার মাধ্যমে মানুষের বিবেককে তুষ্ট করতে হবে। দেশে পেশাদারি পত্রিকার অভাব জানিয়ে তিনি বলেন, পত্রিকায় পেশাদারিত্ব বজায় রাখতে হবে। পেশাদারিত্ব চরিত্র বজায় রাখতে সত্য ও ন্যায়ের পক্ষে থাকতে হবে। এসময় তিনি পাঠককে ভালো পত্রিকা উপহার দিতে ভাষার প্রয়োগের ব্যাপারে সচতেন থাকার পরামর্শ দেন।
সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব রামেন্দু মজুমদার বলেন, একটি সংবাদ পত্রের মাধ্যমে অনেক কিছু করা যায়। একটি সংবাদপত্রের মাধ্যমে আপনি হয়ত বিপ্লব ঘাটাতে পারবেন না কিন্তু কিছু মানুষের বিবেক জাগ্রত করতে পারবেন। বাস্তবতাকে বিবেচনা করে তাদের মত করে যদি সমাজের কথা বলতে পারেন তাহলে পত্রিকার সার্থকতা আসবে। তিনি বলেন, সাংবাদিকদের কোন বন্ধু নেই। তার ওপর সংবাদপত্র ও সাংবাদিকদের জন্য আছে আইসিটি সহ বিভিন্ন আইন। সাংবাদিকদের জন্য কিরকম বিপদ ডেকে এনেছে তা সবারই জানা। এইসব আইনের বিরুদ্ধে অবশ্যই সকলকে কথা বলতে হবে। বর্তমানে দেশে পাকিস্তান আমলের চেয়ে দশ গুন বেশি সাম্প্রদায়িকতা দেখা যায়। রাজনীতিতে ধর্মের অপব্যবহার বাড়ছে। পাঠকের কাছে সুন্দর একটি পত্রিকা উপহার দিতে হলে নতুন এ দৈনিককে অসাম্প্রদায়িক, প্রগতিশীল চিন্তা চেতনাকে লালন করতে হবে।
গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব অধ্যাপক আসিফ নজরুল বলেন, শুধুমাত্র মানুষ হিসেবে জন্ম নেয়ার জন্য যে অধিকারগুলো সবাই পাবে সেটাই হচ্ছে মানবাধিকার। মানবাধিকারের সাথে প্রতিটি মানুষের মৌলিক অধিকারও রয়েছে। সংবাদ পরিবেশনের ক্ষেত্রে মানবাধিকার ও মৌলিক অধিকারের উপর বিশেষ গুরুত্ব দিতে হবে। পত্রিকাকে সবার বিরুদ্ধে দাঁড়াতে হবে এমন নয়, মানবাধিকারের বিষয়ে সচেতন থাকতে হবে, দাঁড়াতে হবে অন্যায় ও বৈষম্যের বিরুদ্ধে।
আসিফ নজরুল আরও বলেন, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা হচ্ছে বাহাত্তরের সংবিধান, গণপরিষদ বির্তক, বঙ্গবন্ধুর ছয় দফা, এগারো দফা, সাতই মার্চ ইত্যাদি। মুক্তিযুদ্ধের সবচেয়ে বড় চেতনা হচ্ছে অন্যায় ও বৈষম্যের বিরুদ্ধে রুখে দাড়াঁনো, গণতন্ত্র, অসাম্প্রাদায়িকতার পক্ষে কথা বলা। যারা গুম করে, যারা ব্যাংকের টাকা লুট করে, মানুষের ভোটাধিকার কেড়ে নেয় তারা সবচেয়ে বড় মুক্তিযুদ্ধের চেতনা লঙ্ঘনকারী। আওয়ামী লীগ, বিএনপি যে দলই এই অন্যায় করুক তাদের বিরুদ্ধে কথা বলতে হবে। বিজ্ঞপ্তি