কানাইঘাটে ইমাম নিয়োগকে কেন্দ্র করে দু’পক্ষের সংঘর্ষে নিহত ১, আহত ১৫

53

কানাইঘাট থেকে সংবাদদাতা :
কানাইঘাট সদর ইউপির গোসাইনপুর গ্রামের মসজিদের রমজান মাসের তারাবীর ইমাম রাখাকে কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগ ও জামায়াত সমর্থিতদের মধ্যে সংঘর্ষে স্থানীয় ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ নেতা মোহাম্মদ আলী (৬০) নিহত ও ১৫ জন আহত হয়েছেন। এ ঘটনাটি ঘটেছে গতকাল বাদ জুম্মা গোসাইনপুর জামে মসজিদ প্রাঙ্গণে। সংঘর্ষের খবর পেয়ে কানাইঘাট থানার অফিসার ইনচার্জ আব্দুল আহাদ ও ওসি (তদন্ত) মো: নুনু মিয়ার নেতৃত্বে বিপুল সংখ্যক পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে উভয় পক্ষের লোকজনদের ছত্র ভঙ্গ করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন। পুলিশ হত্যাকান্ডের সাথে জড়িত থাকার দায়ে গোসাইনপুর গ্রামের জামায়াত নেতা মাদ্রাসা শিক্ষক মাও: জামাল উদ্দিন (৫০), অবসরপ্রাপ্ত প্রাইমারি শিক্ষক বশির আহমদ (৬৫) ও আখলু মিয়ার পুত্র মাসুম আহমদ (২৫)কে আটক করেছে। এ ঘটনায় এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা মোহাম্মদ আলীর হত্যাকারীদের আটক করতে পুলিশ গোসাইনপুর গ্রাম ও আশপাশ এলাকায় জামায়াত-শিবির সমর্থীত নেতাকর্মীদের বাড়িতে অভিযান চালাচ্ছে। স্থানীয় এলকাবাসী ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, দীর্ঘদিন ধরে গোসাইনপুর গ্রামে আওয়ামী লীগ ও জামায়াত সমর্থিতদের মধ্যে আধিপত্য বিস্তার নিয়ে বিরোধ চলে আসছিল। এর প্রভাব পড়ে মসজিদের ইমাম নিয়োগ নিয়ে। মাও: জামাল উদ্দিন ও গ্রামের জামায়াত সমর্থিত লোকজন আলিয়া মাদ্রাসার অনুসারী ইমাম নিয়োগ দানের পক্ষে ছিলেন। অপরদিকে মসজিদের বর্তমান মোতাওয়াল্লী কমিটির নেতৃবৃন্দ ও আওয়ামী লীগ সমর্থিত লোকজন কৌমী মাদ্রাসা অনুসারী পেশ ইমাম নিয়োগ দেন। এ নিয়ে উভয় পক্ষের লোকজনদের মধ্যে এক ধরনের বিরোধ চলে আসছিল। শুক্রবার বাদ জুম্মা মসজিদে রমজান মাসের খতমে তারাবির ইমাম নিয়োগ নিয়ে আলোচনা শুরু হলে এক পর্যায়ে মাও: জামাল উদ্দিনের মনোনীত লোকজন মোতাওয়াল্লী কমিটির সাথে বাকবিতন্ডায় লিপ্ত হন। এ সময় গ্রামের আওয়ামী লীগ ও জামায়াত সমর্থিত মুসল্লিরা সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন। উভয় পক্ষ মসজিদের আঙ্গিনা ও আশপাশে জড়ো হয়ে বৃষ্টির মত ইট, পাটকেল নিক্ষেপ, ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার সময় ইটের আঘাত মাথায় পড়ে গুরুতর আহত হন মোহাম্মদ আলী সহ অন্তত উভয় পক্ষের আরো ১৫জন। রক্তাক্ত অবস্থায় মোহাম্মদ আলীকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসকগণ তাকে মৃত ঘোষণা করেন। বর্তমানে তার লাশ পুলিশ হেফাজতে ময়না তদন্তের জন্য রয়েছে। সংঘর্ষের খবর পেয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে মসজিদ মোতাওয়াল্লী কমিটির নেতৃবৃন্দ ও গ্রামের গণ্যমান্য লোকজনদের নিয়ে বৈঠক করেন থানার ওসি আব্দুল আহাদ। এ সময় তিনি মোহাম্মদ আলী হত্যা কান্ডের সাথে জড়িতদের দ্রুত গ্রেফতার এবং যারা এ ঘটনা ঘটিয়েছে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে জানান। এ নিয়ে গ্রামে কেউ বিশৃংখলার সৃষ্টি করলে তাদের কঠোর হস্তে দমন করা হবে বলে সবাইকে শান্ত থাকার আহবান জানান তিনি। মসজিদের তারাবীর ইমাম নিয়োগ নিয়ে এ ঘটনাটি ঘটেছে বলে ওসি আব্দুল আহাদ স্থানীয় সাংবাদিকদের জানিয়েছেন। এ ঘটনায় থানায় নিহতের পরিবারের পক্ষ থেকে মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে। গ্রামের আওয়ামী লীগ সমর্থিত লোকজনদের দাবী জামায়াত নেতা মাদ্রাসা শিক্ষক মাও: জামাল উদ্দিন উরফে মাখন মোল্লা তার দলীয় লোকজনদের নিয়ে সবসময় মসজিদে বিশৃংখলা সৃষ্টি করে আসছেন। তারা মসজিদের ইমামকে মেনে নিতে পারেনি। তাদের সমর্থিত ইমাম রাখতে চেয়েছিল। তারাবীর নামাজের ইমাম রাখা নিয়ে বাদ জুম্মা যখন মসজিদে আলোচনা শুরু হয় তখন জামাল উদ্দিনের লোকজন সেখানে চড়াও হয়ে ইটপাটকেল নিক্ষেপ শুরু করে তাদের হামলায় গ্রামের আওয়ামী লীগ সমর্থীত ৯ নং ওয়ার্ডের পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক মোহাম্মদ আলী মারা যান। অপরদিকে জামায়াত সমর্থিত গ্রামের অনেকে জানিয়েছেন, মসজিদ কমিটির লোকজন ও আওয়ামী লীগ সমর্থিতরা গ্রামের লোকজনদের মতামত উপেক্ষা করে মসজিদের পেশ ইমাম ও তারাবীর ইমাম একক ভাবে রাখার সিদ্ধান্ত নিলে এতে আমরা আপত্তি করলে সংঘর্ষের সূত্রপাত ঘটে। তাদের হামলায় মোহাম্মদ আলী মারা যাননি বলে দাবী করেছেন। গ্রামের অনেক নিরপেক্ষ লোকজন জানান,আওয়ামী লীগ ও জামায়াত সমর্থিতরা গ্রামে আধিপত্য বিস্তার ও মসজিদে নিজেদের পছন্দের ইমাম রাখা নিয়ে গতকাল এসংঘর্ষের ঘটনাটি ঘটেছে।