চীনে কাজের সুযোগ পাবেন বাংলাদেশি পাইলটরা

38

কাজিরবাজার ডেস্ক :
বেসরকারি বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক) অবশেষে চীনে কাজের সুযোগ পেতে যাচ্ছেন বাংলাদেশের পাইলটরা। ইন্টারন্যাশনাল সিভিল এভিয়েশন অর্গানাইজেশনের (আইকাও) সেফটি স্টান্ডার্ড কমপ্লায়েন্সে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) র‌্যাংকিং বৃদ্ধি পাওয়ায় পাইলটদের পাশাপাশি কেবিন ক্রুদেরও সেই সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। সম্প্রতি চীন সফরে গিয়ে সিভিল এভিয়েশন অ্যাডমিনিস্ট্রেশন অব চায়না’র সঙ্গে বৈঠক করেন বেবিচক কর্মকর্তারা। এভিয়েশন খাতসহ পাইলটদের চীনে কাজের সুযোগ সৃষ্টি নিয়ে আলোচনা হয় ওই বৈঠকে।
বেবিচক সূত্রে জানা গেছে, বেবিচকের সদস্য (পরিকল্পনা ও পরিচালনা) মোস্তাফিজুর রহমানের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল এয়ার সার্ভিস এগ্রিমেন্ট কনসেনট্রেশন বৈঠকে যোগ দিতে তিনদিনের সফরে চীনে যায়। সেখানে সিভিল এভিয়েশন অ্যাডমিনিস্ট্র্রেশন অব চায়নার সঙ্গে এভিয়েশন খাতের বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা করেন বেবিচকের প্রতিনিধি দলের সদস্যরা।
কোনও দেশের সেফটি স্টান্ডার্ড কমপ্লায়েন্সে র‌্যাংকিং স্কোর ৬০-এর নিচে থাকলে চীন সেদেশের পাইলটদের কাজের সুযোগ দেয় না। সুতরাং এতদিন কাজের অনেক সুযোগ থাকলেও র‌্যাংকিংয়ে পিছিয়ে থাকার কারণে তা সম্ভব হচ্ছিল না।
বৈঠকে বাংলাদেশি পাইলট ও কেবিন ক্রুদের চাকরির সুযোগ নিয়ে আলোচনা হলে চীন র‌্যাংকিং নিয়ে বেবিচক’কে আপত্তি জানায়। বৈঠকে বেবিচক জানায়, ২০১৭ সালে ইন্টারন্যাশনাল সিভিল এভিয়েশন অর্গানাইজেশন (আইকাও) বাংলাদেশে আইকাও ভ্যালিডেশন মিশন অডিট কার্যক্রম সম্পন্ন করে। এতে শতকরা ৭৭ দশমিক ৪৬ ভাগ অর্জন করে বাংলাদেশ। আইকাও’র ৬ সদস্যের একটি দল বাংলাদেশে অডিট পরিচালনা করে। তারা ৮টি বিষয় আমলে নেয়। বিষয়গুলো হচ্ছে বাংলাদেশে বেসামরিক বিমান চলাচলের ক্ষেত্রে প্রাইমারি এভিয়েশন লেজিসলেশন, অর্গানাইজেশন, পার্সোনাল লাইসেন্সিং, অপারেশনস, এয়ারওয়ার্দিনেস, এয়ারক্রাফট অ্যাক্সিডেন্ট ইনভেস্টিগেশন, এয়ার নেভিগেশন সার্ভিসেস এবং অ্যারোড্রোস অ্যান্ড গ্রাউন্ড এইডস। অডিট শেষে গত ২৭ সেপ্টেম্বর অডিট দল বাংলাদেশের সাফল্য ঘোষণা করে।
বৈঠকে বেবিচকের সদস্য মোস্তাফিজুর রহমান ও পরিচালক চৌধুরী জিয়াউল কবির র‌্যাংকিংয়ের হালনাগাদ (আপডেট) তথ্য সিভিল এভিয়েশন অ্যাডমিনিস্ট্রেশন অব চায়না’র কর্মকর্তাদের সামনে উপস্থাপন করেন। বাংলাদেশের র‌্যাংকিং স্কোর ৬০ অতিক্রম করায় বাংলাদেশি পাইলট ও কেবিন ক্রুরা চীনে কাজের সুযোগ পাবেন বলেও আশ্বাস দেন চীনের কর্মকর্তারা।
এ প্রসঙ্গে বেবিচকের পরিচালক (ফ্লাইট সেফটি অ্যান্ড রেগুলেশন্স) উইং কমান্ডার চৌধুরী এম জিয়াউল কবির বাংলা ট্র্রিবিউনকে বলেন, ‘চীনের কাছে আমাদের র‌্যাংকিংয়ের আপডেট তথ্য ছিল না, কিন্তু এবার বৈঠকে তাদের আপডেট তথ্য উপস্থাপন করা হয়েছে। যে দেশের সিভিল এভিয়েশনের র‌্যাংকিং ৬০-এর নিচে সে দেশের পাইলটদের চীন কাজ করার সুযোগ দেয় না। আমাদের র‌্যাংকিং এখন ৭৭ দশমিক ৪৬ ভাগ।’
এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান নেতৃস্থানীয়। আইকাও’র সেফটি স্টান্ডার্ড কমপ্লায়েন্সে (ইফিকটিভ ইমপ্লিমেন্টেশন) কাতারের অবস্থান ৬৩ দশমিক ৮১ শতাংশ, রাশিয়া ৭০ দশমিক ৮৭ শতাংশ, মালয়েশিয়া ৭৪ দশমিক ৭৪ শতাংশ, ইন্দোনেশিয়া ৫১ দশমিক ৬১ শতাংশ, ভারত ৬৫ দশমিক ৮২ শতাংশ।’
বেবিচকের পরিচালক বলেন, ‘বাংলাদেশের এই অর্জনের ফলে বিশ্বে বাংলাদেশের বেসামরিক বিমান চলাচল কর্মকাণ্ডের গ্রহণযোগ্যতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে বাংলাদেশি বেসামরিক বিমান পরিবহন কার্যক্রম ও কাজের ক্ষেত্র অনেকগুণ বৃদ্ধি পাবে।’
এ বিষয়ে গ্যালাক্সি ফ্লাইং একাডেমি লিমিটেডের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা উইং কমান্ডার (অব.) এটিএম নজরুল ইসলাম বলেন, ‘এটি অবশ্যই ভালো উদ্যোগ। সিভিল এভিয়েশনের র‌্যাংকিং গুরুত্বপূর্ণ, অথরিটির গ্রহণযোগ্যতা না থাকলে এ দেশের পাইলট, ইঞ্জিনিয়ারদের গ্রহণযোগ্যতা থাকবে না। র‌্যাংকিং ভালো পর্যায়ে আসায় এখন দেশি-বিদেশি এয়ারলাইন্সে কাজের সুযোগ বাড়বে। অনেক দেশে বাংলাদেশি পাইলটরা সুনামের সঙ্গে কাজ করছেন। চীনের বাজারে সুযোগ বৃদ্ধি পাওয়ায় সম্ভাবনা আরও বাড়লো।’