নারীবান্ধব বিশ্ব

26

বাংলাদেশসহ এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে নারীশিক্ষার উন্নয়ন ও ব্যবসায়িক উদ্যোগে ব্যাপক ভূমিকার জন্য এবার ‘গ্লোবাল উইমেনস লিডারশিপ অ্যাওয়ার্ড’-এ ভূষিত হলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। অস্ট্রেলিয়ার সিডনিতে এক জমকালো অনুষ্ঠানে তাঁর হাতে এই পুরস্কার তুলে দেওয়া হয়। তাঁর এই অর্জন বাংলাদেশের জন্য অতি গৌরবের। অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী নারীর ক্ষমতায়নে বাংলাদেশের অবস্থা ও অবস্থান বিষয়ে কথা বলেছেন। ২০১৭ সালের ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের প্রতিবেদন অনুযায়ী বিশ্বের ১৪৪টি দেশের মধ্যে ৪৭তম অবস্থানে থাকা বাংলাদেশ নারীর রাজনৈতিক ক্ষমতায়নে ১৫৫টি দেশের মধ্যে সপ্তম। সুষ্ঠু, অধিকারভিত্তিক, লিঙ্গ সংবেদনশীল ও বাস্তবসম্মত অবস্থান নিয়েই নারীর ক্ষমতায়নে ভূমিকা রেখেছে সরকার। অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিশ্বে নারীর অধিকার আদায়ের লক্ষ্যে চারটি প্রস্তাব তুলে ধরেছেন। এগুলো হচ্ছে ক. নারীর সক্ষমতা নিয়ে প্রচলিত যে ধারণা সমাজে রয়েছে, তা ভাঙতে হবে। খ. প্রান্তিক অবস্থানে ঝুঁকির মুখে থাকা নারীদের কাছে পৌঁছতে হবে, যারা আজও কম খাবার পাচ্ছে, যাদের স্কুলে যাওয়া হচ্ছে না, যারা কম মজুরিতে কাজ করতে বাধ্য হচ্ছে এবং সহিংসতার শিকার হচ্ছে। গ. নারীদের উৎপাদন ক্ষমতা বাড়াতে তাদের স্বাস্থ্যঝুঁকির বিষয়গুলো নিয়ে কাজ করতে হবে। ঘ. জীবন ও জীবিকার ক্ষেত্রে নারীদের জন্য সমান সুযোগ তৈরি করতে হবে।
এ অনুষ্ঠানে বক্তৃতায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশে নারীর অবস্থা ও অবস্থান পরিবর্তনের চিত্র তুলে ধরেছেন। আমাদের দেশে সমাজের দুষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন ঘটেছে অনেক আগেই। নারীশিক্ষার দিক থেকে বাংলাদেশ অনেক অগ্রগামী। ২০১৭ সালে পরিচালিত এ জরিপে বলা হয়েছে, ২০০১ সালে নারীদের মধ্যে অশিক্ষিতের হার ছিল ৪৭ শতাংশ, ২০১০ সালে তা কমে হয়েছে ৩৪ শতাংশ। ২০১৬ সালে তা ২১ শতাংশে নেমে এসেছে। গত দুই বছরে এই হার যে আরো কমেছে, তা বলার অপেক্ষা রাখে না। ২০০১ সালে প্রাথমিক শিক্ষায় শিক্ষিতের হার ছিল ২১ শতাংশ। ২০১০ সালে তা বেড়ে দাঁড়ায় ৩০ শতাংশে। ২০১৬ সালে এই হার ছিল ৪৭ শতাংশ। সমাজের ইতিবাচক মনোভাবের কারণে কর্মক্ষেত্রে নারীর অংশগ্রহণ বেড়েছে। রাজনীতিতেও নারীর অংশগ্রহণ উল্লেখ করার মতো। বিভিন্ন সময়ে সরকার নারীশিক্ষা, নারীর ক্ষমতায়ন ও বাল্যবিয়েবিরোধী যেসব ব্যবস্থা নিয়েছে, সমাজে তার ইতিবাচক প্রভাব পড়েছে। সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন ঘটেছে। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিশ্বপরিমণ্ডলে যে উদাহরণ দিয়েছেন, সে চিত্র বাংলাদেশেরই।
বিশ্বের সব দেশ নারীমুক্তি, নারীশিক্ষা ও নারীর ক্ষমতায়নে যদি প্রধানমন্ত্রীর চার দফা বাস্তবায়নে ব্যবস্থা গ্রহণ করে, তার ইতিবাচক প্রভাব পড়বে বিশ্বসমাজে। নারীবান্ধব বিশ্ব গড়ে তুলতে তখন আর বেগ পেতে হবে না।