বিয়ানীবাজারে ব্যবসায়ী হত্যাকান্ডের রহস্য উদঘাটন, প্রধান ঘাতকসহ আটক ৪

78

বিয়ানীবাজার থেকে সংবাদদাতা :
বিয়ানীবাজারের ব্যবসায়ী সইবন আহমদ (৫০) স্বপরিবারে আমেরিকা যাওয়ার স্বপ্নে বিভোর ছিলেন। তাকে স্বপরিবারে আমেরিকায় পাঠানোর জন্য দেড় কোটি টাকা নেয় সিলেট শহরের গাড়ি ব্যবসায়ী জাকির হোসেন। কিন্তু গত জানুয়ারী মাসে আমেরিকায় পাঠানোর মেয়াদ অতিবাহিত হলে টাকার জন্য জাকিরকে চাপ দেন সইবন।
বিয়ানীবাজার থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) শাহজালাল মুন্সী জানান, গত বৃহস্পতিবার টাকা ফেরত প্রদানের জন্য তাকে সিলেট শহরে ফোন করে নেয়া হয়। টাকা আনতে আমেরিকা যাওয়ার বদলে তাকে চিরতরে পরপারে পাঠিয়ে দেয় ঘাতকরা-এমন তথ্য জানান তিনি। তার দাবী, সইবন হত্যাকান্ডে ঢাকার এক আদম ব্যবসায়ীও জড়িত রয়েছেন।
এদিকে পুলিশ হত্যাকান্ডে জড়িত সন্দেহে জাকির হোসেন (৩৩) নামের এক যুবককে গ্রেফতার করেছে। তাকে বিয়ানীবাজার উপজেলার খশির সড়ক ভাংনী এলাকায় তার শ্বশুর বাড়ি থেকে গ্রেফতার করা হয়। পরে রাতেই অভিযান চালিয়ে পুলিশ সিলেটের আখালিয়া এলাকার সামছ উদ্দিনের বাড়ি থেকে হত্যাকান্ডে ব্যবহৃত রক্তাক্ত একটি মাইক্রো (নং ঢাকা মেট্রো-চ ১৫-৫১১৯) জব্দ করে। গ্রেফতারকৃত জাকির হলো সামছ উদ্দিনের ছেলে। পুলিশের দাবী, ওই মাইক্রোতে করে নিহত সইবনের মরদেহ বিয়ানীবাজারের গাছতলা এলাকায় এনে ফেলে দেয়া হয়েছে। জব্দ করা ওই মাইক্রোতে রক্তের জমাট বাঁধা চিহ্ন রয়েছে।
অপরদিকে ব্যবসায়ী সইবন হত্যায় পুলিশ জাকিরের শ্বাশুড়ি সুলতানা (৪৭), তার মেয়ে রিপা (২৬) ও সামছ উদ্দিন (৬০) কে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে। আটককৃত সুলতানা হত্যাকান্ডের প্রধান সন্দেহভাজন জাকিরের শ্বাশুড়ি রিপা তার স্ত্রী এবং সামছ উদ্দিন পিতা।
বিয়ানীবাজার থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) জাহিদুল হক জানান, গ্রেফতার জাকির এবং নিহত ব্যবসায়ী সইবনের মধ্যে বেশ ভালো সম্পর্ক ছিল। এ সম্পর্কের সূত্রধরে তাদের মধ্যে আমেরিকা পাঠানোর চুক্তি হয়। হত্যাকান্ডে পেশাদার খুনীরা জড়িত বলে তিনি জানান।
নিহতের ভাগ্নে নুরুজ্জামান জানান, আমার মামা সইবন আহমদের পরিবারসহ আরো বেশ কয়েকটি পরিবারকে আমেরিকা পাঠানোর জন্য জাকিরকে টাকা দেয়া হয়। টাকার পরিমাণ দেড় কোটি টাকার উপরে হবে। তিনি বলেন, আমেরিকা যাওয়ার জন্য নির্ধারিত টাকায় চুক্তিবদ্ধ হওয়ার পর কিছু টাকা অগ্রীম নেয়া হত। এভাবে বেশ কয়েকটি পরিবারের কাছ থেকে নেয়া অগ্রীম টাকার পুরোটাই জাকিরের হাতে তুলে দেয়া হয়।
নুরুজ্জামান আরোও জানান, জাকির গাড়ি ক্রয়-বিক্রয়ের পাশাপাশি পার্টসের ব্যবসাও করে। সিলেট নগরীর দরগা গেইটে তার একটি নিজস্ব গাড়ি ক্রয়-বিক্রয়ের দোকান আছে। তিনি বলেন, আমেরিকান দূতাবাসের একাধিক কর্মকর্তার সাথে জাকিরের যোগাযোগ আছে বলে সে গল্পগুজব করতো। তবে জাকিরের শ্বশুর আফতাব আলী আমেরিকায় বৈধভাবে বসবাস করেন। তিনিও নাকি আমেরিকায় লোক নেয়ার ব্যবসায় জড়িত আছেন।
তদন্ত সূত্র জানায়, টাকা ফেরত পাওয়ার কথা শুনে সইবন আহমদ একটি ভাড়া করা গাড়ি নিয়ে বৃহস্পতিবার সিলেট পৌছান। বিকাল ৪টার দিকে তিনি বিয়ানীবাজার শহর থেকে সিলেটের উদ্দেশ্যে যাত্রা করেন। এরপর সন্ধ্যা ৭টা থেকে তাঁর মোবাইল ফোন বন্ধ পাওয়া যায়।
গত শুক্রবার সিলেট-বিয়ানীবাজার সড়কের গাছতলা এলাকা থেকে পৌরশহরের ধণাঢ্য ব্যবসায়ী সইবন আহমদের গলাকাটা লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। নিহত ব্যক্তি বড়লেখা উপজেলার ইটাউরী গ্রামের মকবুল আলীর ছেলে। তিনি বর্তমানে বিয়ানীবাজার পৌরশহরের দাসগ্রাম এলাকায় পরিবার-পরিজন নিয়ে স্থায়ীভাবে বসবাস করেন। এখানকার জামান প্লাজায় আবরণী ফ্যাশন নামক দু’টি কাপড়ের দোকান রয়েছে তার।
এ দিকে ব্যবসায়ী হত্যাকান্ডের প্রতিবাদে শনিবার বিয়ানীবাজার পৌরশহরে মানববন্ধন ও শোকযাত্রা কর্মসূচি পালন করা হয়েছে। প্রতিবাদ কর্মসূচি হিসেবে তিনটি বিপনী বিতান বন্ধ রাখা হয়েছে। হত্যাকান্ডের ঘটনায় থানায় মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে।