রোহিঙ্গা সংকট দ্রুত সমাধান

19

রোহিঙ্গা সংকটের আশু কোনো সমাধান দেখা যাচ্ছে না। মিয়ানমার চুক্তি ও আলোচনার নামে যা করছে, তা কালক্ষেপণের কৌশল ছাড়া আর কিছুই নয়। মিয়ানমারে তাদের ফিরে যাওয়ার মতো পরিবেশও তৈরি হয়নি। বরং সেখানে রোহিঙ্গাবিরোধী নানা ধরনের আন্দোলন তৈরি হচ্ছে

অথবা তৈরি করা হচ্ছে। রোহিঙ্গাদের গ্রাম-ভিটা বুলডোজার দিয়ে গুঁড়িয়ে সেখানে নানা ধরনের স্থাপনা তৈরি করা হচ্ছে। তারা জানে, বসতভিটা ও জমিজমা ফিরে না পেলে কোনো রোহিঙ্গাই ফিরতে চাইবে না। একে কূটকৌশল ছাড়া আর কী বলা যায়। তাহলে এই সংকট বাংলাদেশ কিভাবে এবং কত দিন ধরে মোকাবেলা করতে থাকবে? এদিকে এই সংকট ক্রমেই নতুন নতুন মাত্রা পাচ্ছে। ক্যাম্পের ঘিঞ্জি পরিবেশে থাকা লাখ লাখ রোহিঙ্গা ক্রমেই অসহিষ্ণু হয়ে উঠছে। যে যেভাবে পারে ক্যাম্প ছেড়ে পালাতে চাইছে। পালাতে সহায়তা করার জন্য গড়ে উঠেছে দালালচক্র। জানা যায়, এভাবে প্রতিদিন দলে দলে রোহিঙ্গা ক্যাম্প থেকে পালিয়ে যাচ্ছে এবং দেশের নানা প্রান্তে ছড়িয়ে পড়ছে। দেশের সম্পূর্ণ বিপরীত প্রান্ত ঠাকুরগাঁও-দিনাজপুর থেকেও অনেক রোহিঙ্গাকে আটক করা হয়েছে। এভাবে চলতে থাকলে তা দেশের জন্য এক ভয়াবহ বিপর্যয় ডেকে আনবে বলেই মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
গত ১৬ জানুয়ারি মিয়ানমারের সঙ্গে প্রত্যাবাসনসংক্রান্ত চূড়ান্ত চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে। চুক্তির চার মাস অতিক্রান্ত হতে চলেছে, এখন পর্যন্ত একজন রোহিঙ্গাও ফেরত নেয়নি মিয়ানমার। বাংলাদেশ প্রথম দফায় আট হাজার রোহিঙ্গার একটি তালিকা দিয়েছিল। যাচাই-বাছাই শেষে মিয়ানমার বলেছে, এর মধ্যে মাত্র ৩৭৪ জন রাখাইন প্রদেশের বাসিন্দা। সেই ৩৭৪ জনকেও ফেরত নেয়নি, বরং সীমান্তের নো ম্যানস ল্যান্ডে আটকে পড়া রোহিঙ্গাদের পাঁচজনের একটি পরিবারকে তুলে নিয়ে তারা দুনিয়াকে দেখাতে চাইছে যে প্রত্যাবাসন শুরু হয়ে গেছে। তারা আলোচনার শুরু থেকে এমনই নানা শঠতার আশ্রয় নিচ্ছে। মুখে বলছে এক কথা আর কাজে করছে অন্যটা। তাহলে এই সংকটের সমাধান কী? বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, প্রবল বৈশ্বিক চাপ ছাড়া কোনোভাবেই এর সমাধান হবে না। ছোটখাটো নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেও কোনো লাভ হবে না। মিয়ানমারের প্রতি সহানুভূতিশীল দুই পরাশক্তি চীন এবং রাশিয়াকেও এখানে ভূমিকা রাখতে হবে। জাতিসংঘের আওতায় মিয়ানমারের ওপর প্রয়োজনে সর্বাত্মক অবরোধ আরোপ করতে হবে। মিয়ানমারের সরকার, সেনাবাহিনী ও স্বেচ্ছাসেবক বাহিনীকে কালো তালিকাভুক্ত করতে হবে। আন্তর্জাতিক ফৌজদারি আদালতে গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারকাজ শুরু করতে হবে। এসব না করে শুধু বাগাড়ম্বর করে কোনো লাভ হবে না।
১১ লাখ রোহিঙ্গার জীবন রক্ষায় বিশ্বসম্প্রদায়কে এগিয়ে আসতে হবে। মিয়ানমারের ওপর কার্যকর চাপ সৃষ্টি করতে হবে। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অস্ট্রেলিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী জুলি বিশপের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাতের সময়ও একই আহ্বান জানিয়েছেন। বাংলাদেশকে এ ব্যাপারে কার্যকর দূতিয়ালি আরো বাড়াতে হবে। বিশেষ করে চীন ও রাশিয়ার সঙ্গে এই ইস্যুতে আলোচনা জোরদার করতে হবে। আমরা চাই, দ্রুত রোহিঙ্গা সংকটের একটি সম্মানজনক সমাধান হোক।