শব্দদূষণ রোধের বিকল্প নেই

42

উন্নয়ন-আধুনিকায়নের অন্যতম পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হচ্ছে দূষণ। বায়ুদূষণ, পানিদূষণ, শব্দদূষণ বিবিধ দূষণ ঘটছে। সামগ্রিকভাবে এসবের নাম পরিবেশদূষণ। অবকাঠামো নির্মাণের তোড়জোড়, যন্ত্রযানের আধিক্য ও বর্জ্য নিষ্কাশনের অব্যবস্থাপনার ফলে দূষণপ্রক্রিয়া ত্বরান্বিত হয়। বাংলাদেশ এ বৈশ্বিক প্রপঞ্চের বাইরে নয়। দূষণের মাত্রা গ্রামাঞ্চলের চেয়ে শহরাঞ্চলে অনেক বেশি। বড় শহরগুলোতে তা শঙ্কার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে, বিশেষ করে শব্দদূষণ। পরিবেশ অধিদপ্তরের সাম্প্রতিক এক জরিপ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রাজধানী ঢাকায় শব্দদূষণ স্বাভাবিক মাত্রার চেয়ে প্রায় আড়াই গুণ বেশি। বন্দরনগরী চট্টগ্রাম এবং অন্যান্য বিভাগীয় শহরেও দূষণের চিত্র প্রায় একই রকম। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডাব্লিউএইচও) মানদণ্ড অনুযায়ী স্বাভাবিক শব্দমাত্রা ৪৫ থেকে ৫৫ ডেসিবল। কিন্তু ঢাকায় তা ১৩২ ডেসিবল, চট্টগ্রাম ও রাজশাহীতে ১৩৩, খুলনায় ১৩২, বরিশাল, সিলেট ও ময়মনসিংহে ১৩১ এবং রংপুরে ১৩০ ডেসিবল পর্যন্ত উঠেছে।
অবকাঠামো নির্মাণ ও যানবাহনের হর্ন শব্দদূষণের প্রধান উৎস। সামাজিক, রাজনৈতিক ও ধর্মীয় অনুষ্ঠান এবং কলকারখানাও বড় উৎস। রাজধানীতে সবচেয়ে বেশি শব্দদূষণ হচ্ছে। উন্নয়নের প্রয়োজনে অনেক অবকাঠামো নির্মিত হচ্ছে ঢাকা ও অন্যান্য বিভাগীয় শহরে। ফলে শব্দদূষণের মাত্রা বাড়ছে। অনেকেই গাড়ি কিনছে। সেগুলো রাস্তায় নামছে এবং শব্দদূষণের মাত্রা বাড়াচ্ছে। এর কারণে মানুষ, বিশেষ করে শিশু-কিশোররা মানসিক ও শারীরিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। শব্দদূষণের কারণে রক্তচাপ বাড়ে, হৃদস্পন্দনে পরিবর্তন ঘটে, হৃদপণ্ড ও মস্তিষ্কে অক্সিজেন সরবরাহ কমে যেতে পারে। শ্বাসকষ্ট, মাথা ঘোরা, বমি ভাব বা বমি হওয়া, দিক ভুলে যাওয়া এসব সমস্যাও দেখা দেয়। দীর্ঘদিন মাত্রাতিরিক্ত শব্দের মধ্যে থাকলে শ্রবণক্ষমতা নষ্ট হয়। ডাব্লিউএইচওর হিসাব মতে, বাংলাদেশে ১১.৭ শতাংশ মানুষ শ্রবণক্ষমতা হারিয়েছে। বিশ্বজনসংখ্যার ৫ শতাংশ শ্রবণজনিত সমস্যার কারণে নানা প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হচ্ছে।
রাষ্ট্র ও সরকারের কাছে পরিবেশদূষণবিষয়ক কথাবার্তা দীর্ঘকাল বুদ্ধিজীবীর প্যাঁচাল বা অর্বাচীনের প্রলাপ হিসেবে বিবেচিত হয়েছে। ক্ষমতাসীনরা এ বিষয়ে আলোচনা বা পরামর্শকে ‘উন্নয়নবিরোধী কথামালা’ আখ্যায়িত করতে দ্বিধাবোধ করেন না। পরিবেশবাদী আন্দোলনকে খুবই সন্দেহের চোখে দেখা হয়। সরকার ও সরকারি দলের সদস্যরা এসব কর্মকাণ্ডকে বামপন্থীদের ‘অবকাশ যাপন কর্মসূচি’ আখ্যা দিয়ে সব দায় এড়িয়ে যেতে যান। আর ফাঁকে বেড়ে চলে দূষণের মাত্রা। অথচ আলোচনা-সমালোচনা, সমীক্ষার ফল বিবেচনায় নিলে তাঁদের লাভ ছাড়া ক্ষতি হতো না। দেশ ও দশের লাভও হতো। পরিবেশ অধিদপ্তর শব্দদূষণের যে শঙ্কাজনক চিত্র তুলে ধরেছে, সে ব্যাপারেও সরকার যেন উদাসীন ও দায় এড়ানোর মনোভাবের প্রকাশ না ঘটায়। উন্নয়নপ্রক্রিয়ার সুষ্ঠুতার স্বার্থেই তার হুঁশ ফেরা উচিত।