শপথ নিলেন রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ

35

কাজিরবাজার ডেস্ক :
দ্বিতীয় মেয়াদে রাষ্ট্রপতি হিসেবে শপথ গ্রহণ করেছেন আবদুল হামিদ। মঙ্গলবার সন্ধ্যা ৭টা ৪৫ মিনিটে বঙ্গভবনের দরবার হলে তাকে শপথবাক্য পাঠ করান জাতীয় সংসদের স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, প্রধান বিচারপতি, দেশের সাবেক রাষ্ট্রপতি, বিচারক, মন্ত্রিসভার সদস্য, সংসদ সদস্য, সিনিয়র রাজনীতিক, কূটনীতিক এবং অন্যান্য বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ শপথ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। শপথ অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব শফিউল আলম।
মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক আবদুল হামিদ দেশের ২১তম রাষ্ট্রপতি হিসেবে শপথ নিলেন। পরপর দুইবার রাষ্ট্রপতি হওয়ার বিরল রেকর্ডও গড়লেন তৃণমূল থেকে উঠে আসা এই রাজনীতিবিদ।
১৫ এপ্রিল সন্ধ্যায় দরবার হলে রাষ্ট্রপতির শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠান হওয়ার কথা ছিল। তবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আট দিনের সফরে সৌদি আরব ও যুক্তরাজ্যে যাওয়ায় তা নয় দিন পিছিয়ে যায়।
গত গত ৩১ জানুয়ারি আওয়ামী লীগের সংসদীয় বোর্ড আবদুল হামিদকে দ্বিতীয় মেয়াদে রাষ্ট্রপতি করতে দলের মনোনয়ন দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। পরদিন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজে বঙ্গভবনে গিয়ে এই সিদ্ধান্ত তার হাতে তুলে দেন। নির্বাচন কমিশন রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের প্রস্তুতি নিয়ে রাখলেও আর কোনো প্রতিদ্বন্দ্বী না থাকায় আবদুল হামিদকে নির্বাচিত ঘোষণা করে।
আবদুল হামিদের বর্ণাঢ্য জীবন
১৯৪৪ সালের ১ জানুয়ারি কিশোরগঞ্জের মিঠামইন উপজেলার কামালপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন আবদুল হামিদ। তার রাজনৈতিক জীবন শুরু হয় ১৯৫৯ সালে, ছাত্রলীগে যোগ দেয়ার মধ্য দিয়ে।
১৯৭০ সালের নির্বাচনে ময়মনসিংহ-১৮ আসন থেকে পাকিস্তান জাতীয় পরিষদের সর্বকনিষ্ঠ সদস্য হিসাবে নির্বাচিত হন আবদুল হামিদ। মুক্তিযুদ্ধে অবদানের স্বীকৃতি হিসাবে চলতি বছর আব্দুল হামিদকে স্বাধীনতা পদকে ভূষিত করা হয়।
১৯৭৩ সালের ৭ মার্চ দেশের প্রথম সাধারণ নির্বাচনে কিশোরগঞ্জ-৫ আসন থেকে নির্বাচিত হন আবদুল হামিদ। ১৯৮৬ সালের তৃতীয় সংসদ, ১৯৯১ সালের পঞ্চম সংসদ, ১৯৯৬ সালের সপ্তম সংসদ, ২০০১ সালের অষ্টম সংসদ এবং সর্বশেষ ২০০৮ সালের নির্বাচনেও তিনি সাংসদ নির্বাচিত হন।
সপ্তম সংসদে ১৯৯৬ সালের ১৩ জুলাই থেকে ২০০১ এর ১০ জুলাই পর্যন্ত ডেপুটি স্পিকারের দায়িত্ব পালনের পর ২০০১ এর ২৮ অক্টোবর পর্যন্ত স্পিকার হিসাবে সংসদ পরিচালনা করেন আবদুল হামিদ।আর নবম সংসদে নির্বাচিত হওয়ার পর দ্বিতীয়বারের মতো স্পিকার হন।
আবদুল হামিদ রাষ্ট্রপতি হওয়ার পরও তার ‘সাধারণ মানুষের’ পরিচয় ধরে রেখেছেন। নানা সময় তার সে নমুনাও দেখা গেছে।
২০১৭ সালের মার্চে কিলোরগঞ্জের মিঠামইন সফরে গিয়ে রিকশায় করে রাষ্ট্রপতির বাজার পরিদর্শনের ছবিতে মানুষ চমকিত হয়েছে, তবে আবদুল হামিদ বরাবর তার এই সাধারণ মানুষের ভাবমূর্তি কখনও পাল্টাতে চান না।
২০১৩ সালে সিঙ্গাপুর সফরে গিয়ে হোটেলে নামি হোটেলের স্যুইট ভাড়া দিনে সাত হাজার ডলার শুনে কম দামি হোটেলে ৬০০ ডলারের স্যুইটে থেকেছেন। ফলে আগের সফরে গ্র্যান্ড হায়াতে রাষ্ট্রপতির হোটেল স্যুইটের ভাড়া যত ছিল সে সময় ২৩ সদস্যের প্রতিনিধিদলের (নিরাপত্তাকর্মীসহ) সবার হোটেল ভাড়া মিলেও তত হয়নি।
আবদুল হামিদ বরাবর জনগণের সঙ্গে থাকতে পছন্দ করেন। তিনি বহুবার বিষয়টি বলেছেন। নিরাপত্তার ঘেরাটোপ তার ভালো লাগে না। কঠোর নিরাপত্তার মধ্যেও তিনি বিশেষ করে নিজ এলাকার লোকদের জন্য তার দুয়ার উন্মুক্ত রেখেছেন।
২০১৩ সালের ২৪ এপ্রিল রাষ্ট্রপতি হিসেবে শপথ নেন আবদুল হামিদ। আর রাষ্ট্রপতি হওয়ার এক বছর পূর্তির পর গণমাধ্যমকে দেয়া সাক্ষাৎকারে তিনি জানান, বঙ্গভবন তার ভালো লাগে না।
আবদুল হামিদ সেদিন বলেন, ‘খাঁচার পাখিরে যতই ভালো খাবার দেয়া হোক, সে তো আর বনের পাখি না। আমি একটা দায়িত্ব হিসেবে এখানে এসেছি। সংসদে মনের খোরাক পেতাম, বঙ্গভবনে পাই না। মনটা অনেক কিছু চায়।’
আবদুল হামিদ এর আগে ২০১৩ সালের ২২ এপ্রিল বাংলাদেশের ২০তম রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হন এবং ২৪ এপ্রিল শপথগ্রহণ করেন। এর আগে রাষ্ট্রপতির অনুপস্থিতিতে তিনি ২০১৩ সালের ১৪ মার্চ ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব গ্রহণ করেন। এ সময় তৎকালীন রাষ্ট্রপতি মো. জিল্লুর রহমান সিঙ্গাপুরে চিকিৎসাধীন ছিলেন। জিল্লুর রহমানের মৃত্যুর পর তিনি ২০১৩ সালের ২০ মার্চ ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রপতি হন।