তিন মাসের মধ্যে আমিরাতে কর্মী যাবে

19

কাজিরবাজার ডেস্ক :
সংযুক্ত আরব আমিরাতের সঙ্গে শ্রমিক পাঠাতে সই হওয়া সমঝোতা স্মারক অনুযায়ী তিন মাসের মধ্যেই ১৯ ধরনের শ্রমিক রপ্তানি শুরু হবে বলে আশাবাদী প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রণালয়। এর মধ্যেই অভিবাসন ব্যয় এবং শ্রমিক পাঠানোর প্রক্রিয়া চূড়ান্ত হয়ে যাবে।
গত ১৭ এপ্রিল দুই দেশের মধ্যে সই হওয়া সমঝোতা স্মারকের বিষয়ে বিস্তারিত জানাতে সোমবার প্রবাসীকল্যাণ ভবনে এক সংবাদ সম্মেলনে এক প্রশ্নের জবাবে এ কথা জানান প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সচিব নমিতা হালদার।
সচিব জানান, আমিরাতে যে লোক পাঠানো হবে, তাতে নারী-পুরুষ নির্বিশেষে সবাই যেতে পারবে।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, ১৯ শাখায় লোক নেয়ার বিষয়ে যে সমঝোতা স্মারক সই হয়েছে, তার অধীনে দুই দেশকে নিয়ে কমিটি গঠন করা হবে। আর এই কমিটি ঠিক করবে কীভাবে কত খরচে লোক যাবে। মাইগ্রেশন কস্ট (অভিবাসন ব্যয়), মেডিকেল থেকে শুরু করে প্রত্যেকটি বিষয় জয়েন্ট কমিটিতে ঠিক হবে।’
‘আমরা আশা করছি আগামী তিন মাসের মধ্যে এই ১৯ ক্যাটাগরিতে কর্মী পাঠাতে পারব। তবে কোন কোন রিক্রুটমেন্ট এজেন্সিকে দায়িত্ব দেয়া হবে সেটিও এখনো চূড়ান্ত নয়।’
সংবাদ সম্মেলনে থাকা প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রী নুরুল ইসলাম বলেন, ‘সংযুক্ত আরব আমিরাতে আমাদের কর্মী কিন্তু সব সময়ই গেছে। কিন্তু নতুন ১৯ ক্যাটাগরিতে কর্মী পাঠানোর বিষয়ে এমওইউ সই হয়েছে। আমি সবাইকে বলব এই ১৯ ক্যাটাগরিতে আমিরাতে যাওয়ার জন্য কেউ যেন কাউকে টাকা না দেয়।’
মন্ত্রী বলেন, ‘সমঝোতা স্মারক অনুযায়ী ১৯টি ক্যাটাগরির লোক বিষয়টি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরের সঙ্গে সঙ্গে কার্যকর হয়েছে। সংযুক্ত আরব আমিরাতের মানবসম্পদ ও এমিরাটাইজেশন মন্ত্রণালয়ের তত্ত্বাবধায়নে কর্মী নিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান, ‘তদবির সেন্টার’ অর্থাৎ ‘ম্যানেজমেন্ট সেন্টারের’ মাধ্যমে বাংলাদেশি কর্মীদের নিয়োগ করা হবে। ‘তদবির সেন্টারটি’ ইউএই সরকারের মানবসম্পদ ও এমিরাটাইজেশন মন্ত্রণালয়ের নিয়ন্ত্রণে সরাসরি কাজ করবে। এ কাজে ওই দেশের অন্য কোনো রিক্রুটমেন্ট এজেন্সির কোনো ভূমিকা থাকবে।’
যে ১৯টি শাখায় শ্রমিক যাবে : যে ১৯টি শাখায় শ্রমিক পাঠানোর বিষয়ে সমঝোতা স্মারক সই হয়েছে সেগুলো হলো: হাউজমেড (গৃহশ্রমিক), প্রাইভেট সেইলর (ব্যক্তিমালিকানাধীন জাহাজের নাবিক), ওয়াচশ্যান অ্যান্ড সিকিউরিটি গার্ড (নিরাপত্তাকর্মী), হাউজ হোল্ড শেফার্ড (রাখাল), ফ্যামিলি চোফার (গাড়িচালক), পার্কিং ভ্যালে ওয়ার্কার্স (গাড়ি পার্কিংয়ের শ্রমিক), হাউজহোল্ড হর্স গ্রুমার (ঘোড়া পালার সরিষ), হাউজ ফ্যালকন কেয়ারটেকার অ্যান্ড ট্রেইনার (বাজপাখি পালক), ডমেসটিক লেবার (গৃহভৃত্য), হাউজ কিপার (গৃহ তত্ত্বাবধায়ক), প্রাইভেট কোচ, বেবি সিটার (শিশু পরিচর্যাকারী, হাউজহোল্ড ফার্মার (কৃষি শ্রমিক), গার্ডেনার (মালি), প্রাইভেট নার্স (ব্যক্তিগত সেবির্কা, প্রাইভেট পিআরও (ব্যক্তিগত সহকারী), প্রাইভেট এগরিকালচার ইঞ্জিনিয়ার (কৃষিবিদ), কুক (পাচক)।
আমিরাতে কারাগারে এক হাজার বাংলাদেশি
আরব আমিরাতে বাংলাদেশি শ্রমিকদের মধ্যে অপরাধে জড়িয়ে এক হাজার শ্রমিক এখন এখন বিভিন্ন কারাগারে আছে বলেও জানান প্রবাসীকল্যাণ সচিব। বলেন, ‘বেশ কিছু শ্রমিকদের নেতিবাচক কর্মকাণ্ডের কারণেই বাংলাদেশের অন্যতম বৃহৎ শ্রমবাজারটি খুলতে দেরি হচ্ছে।’
যেসব বাংলাদেশি কারাগারে আছে তাদের ৫৬ জন খুনের মামলার আসামি এবং এদের ১৪ জন ফাঁসির আসামি বলেও জানান সচিব।
নমিতা হালদার জানান, আমিরাতে শ্রমবাজার খোলার আলোচনায় বারবার এই বিষয়টি সামনে নিয়ে এসেছে সে দেশের কর্তৃপক্ষ। বলেন, ‘তারা আমাদের দুর্বলতাগুলো কিন্তু তারা বার বার বলার চেষ্টা করেছে। এসব আমাদের বার বার পিছিয়ে দেয়।’
‘যে কথা আমাদেরকে শুনতে হয়েছে যে, যেকোন ক্ষেত্রেই আমরা ১৯ ক্যাটাগরিতে আমরা গৃহকর্মী পাঠাই না কেন আমরা শৃঙ্খলায় না থাকলে আমাদের জন্য সমস্যা থেকেই যাবে। ’
যারা জেলে আছে তাদের ফেরাতে সরকারের কোনো উদ্যোগ আছে কি না, এমন প্রশ্নে সচিব বলেন, ‘আমাদের উদ্যোগ আছে। আমরা সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছি। তবে আদালতের বিষয় তো, এ কারণে বিষয়টি সময়সাপেক্ষ।’
এক প্রশ্নের জবাবে সচিব বলেন, ‘আমিরাতের মন্ত্রী আমাদের বলেছেন অতীতে যেহেতে অনেক বিশৃঙ্খলা হয়েছে এ কারণে তারা ৫০০ রিক্রুটমেন্ট এজেন্সি বাতিল করেছে। সেই ৫০০ এজেন্সি বন্ধ করে দিয়েছে। একটি মাত্র এক্সিকিউটিভ অর্ডারে তারা বন্ধ করেছে। শুধুমাত্র তাকবির সেন্টারের মাধ্যমে তারা লোক নেবে।’
সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন বিএমইটির মহাপরিচালক সেলিম রেজা প্রমুখ।