শ্রীমঙ্গলে কৃষকের স্বপ্নের ধানে ‘চিটা’

17

মৌলভীবাজার থেকে সংবাদদাতা :
সোনার ফসল ঘরে তোলার স্বপ্ন থেকে বড় ধরনের ধাক্কার সম্মুখীন হচ্ছেন শ্রীমঙ্গলের কৃষকেরা। এখন তাদের মাথায় হাত। সোনালি ফসল কাটতে গিয়ে দেখেন শিষে ধান নেই, ধরেছে চিটা। উঠতি বোরো ধানের এ বিপর্যয়ে দিশাহারা কৃষক।
মাত্র কয়েক দিন আগে যে কৃষক তার ধানিজমির আইলে বসে নির্ভাবনার স্বপ্ন বুনতেন, তারা এখন ধুঁকছেন স্বপ্নভঙ্গের যন্ত্রণায়। ধানে চিটা বাড়ায় ব্যাপক ক্ষতির মুখে তারা।
উপজেলার বোরো জমিগুলোতে বিক্ষিপ্তভাবে ‘নেকব্লাস্ট’ রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি প্রাদুর্ভাব হাওর এলাকায়। আক্রান্ত জমিতে ধানের বদলে ‘চিটা’ হয়ে যাচ্ছে।
আরো লক্ষ্যণীয় বিষয়, এ বিষয়ে করণীয় কী বা কীভাবে এর থেকে মুক্তি মিলবে এসব কিছুই জানেন না শ্রীমঙ্গল ইউনিয়নের পশ্চিম ভাড়াউড়া এলাকার কৃষকরা। স্থানীয় কৃষি অফিসের নেই চিটা আক্রান্ত এলাকায় কোনো প্রকারের নজরদারি। কৃষি কর্মকর্তারা কখনো যাননি এই চিটা আক্রান্ত এলাকায়।
১৬ এপ্রিল (সোমবার) শ্রীমঙ্গল শহরের হাইল হাওর সমৃদ্ধ এলাকা পশ্চিম ভাড়াউড়া এলাকায় সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, কৃষকেরা বেদনার মলিন মুখ নিয়ে ধান কাটছেন।
এলাকার কৃষক তাহির মিয়া, উরুস আলী এবং ইসমাইল মিয়া বলেন, আমাদের সমস্ত জমির ধান ‘চুছা’ (চিটা) হয়ে গেছে। আমরা এখন কি খাবো? বাচ্চা-কাচ্ছাদের নিয়ে কি খাবো?
তারা আরো অভিযোগ করে বলেন, উপজেলার কৃষি অফিসের কোনো কর্মকর্তা আমাদের এদিকে এসে আমাদের এই দুর্দশা সরেজমিনে কখনোই দেখে যাননি।
এলাকার জলিল মিয়া বলেন, আমি সিতেশ রঞ্জন দেবের কাছ থেকে ৩ কেয়ার জায়গা ১২ হাজার অগ্রিম টাকা দিয়ে দুই ফসলের জন্য বাগি (বর্গা) নিয়েছি। আমার ক্ষেতের সব ধানে চিটা ধরার কারণে পুরো টাকাই নষ্ট হয়ে গেছে। গরু-মহিষও এই ধান খায় না।
ওয়াহিদ মিয়া এবং মোসাদ্দর মিয়া- তারা দু’জনও এলাকার প্রভাবশালী ব্যক্তি সিতেশ রঞ্জন দেবের জায়গা বাগি নিয়েছেন। এখন তাদেরও মাথায় হাত।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা নিলুফার ইসাসমীন মোনালিসা সুইটি বলেন, এটাকে আমরা ‘নেটব্লাস্ট’ বলি। মূলত বিআর-২৮ প্রজাতির বোরো ধানে নেকব্লাস্ট ছত্রাকের এর আক্রমণ সবচেয়ে বেশি। সেটা আবার এমনভাবে হয়েছে দুই দিনেই সমস্ত ধান চিটা হয়ে গেছে।
তিনি আরো বলেন, উপজেলার ৫ থেকে ৭ হেক্টর জমির ধানে এই ছত্রাকটি আক্রমণ করেছিল; এখনও ৩/৪ হেক্টর জমির ধানে এই ছত্রাকটির আক্রমণ রয়েছে। এই ছত্রাকের আক্রমণ যদি পাতাতে থাকে তবে তা নির্মূল করা সম্ভব হয়; কিন্তু শিষে চলে গেলে আর নির্মূল করা সম্ভব হয় না। শ্রীমঙ্গলের হাওরের অংশগুলোতে এই ছত্রাকের আক্রমণটা একটু বেশি। যেমন বিআর-২৯ প্রজাতির বোরো ধানে এই ছত্রাকটি পাতায় দেখা যাচ্ছে। আমরা বিভিন্ন পরামর্শ দিয়ে কৃষকদের সহযোগিতা করার চেষ্টা করছি। আমরা কিন্তু এ ব্যাপারে প্রচুর লিফলেট বিলি করেছি কৃষকদের মাঝে।
পশ্চিম ভাড়াউড়া এলাকায় কৃষি অফিসের কোনোপ্রকার নজরদারি না থাকার অভিযোগে এ কৃষি কর্মকর্তা বলেন, আমাদের তো জানাতে হবে। না জানালে আমরা যাবো কি করে? আরেকটা বিষয়, আমাদের জনবল সংকটও রয়েছে। তাই সব স্থানে যাওয়া আমাদের সম্ভব হয় না। আমি তো কৃষকদের বিভিন্ন কর্মশালা, সভায় আমার মোবাইল নম্বর কৃষকদের দিয়ে দিয়েছি।
এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে বিভাগীয় কৃষি অফিস, সিলেট এর অতিরিক্ত পরিচালক (এডি) কৃষিবিদ মো. আলতাফুর রহমান বলেন, কৃষি কর্মকর্তাদের মাঠ পর্যায়ে গিয়ে সরেজমিন পরিদর্শন না করার বিষয়টি আমার জানা ছিল না। এ বিষয়ে আমি প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিচ্ছি।