ছাত্রীদের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে হলে ফেরানোর আল্টিমেটাম, অন্যথায় কঠোর আন্দোলন

28

কাজিরবাজার ডেস্ক :
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কবি সুফিয়া কামাল হল থেকে বের করে দেয়া ছাত্রীদের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে হলে ফিরিয়ে নেয়ার জন্য কর্তৃপক্ষকে আল্টিমেটাম দিয়েছে বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ। এই সময়ের মধ্যে ছাত্রীদের হলে ফেরত না নিলে কঠোর আন্দোলনের হুঁশিয়ারি দিয়েছেন কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলন করা সংগঠনটি।
শুক্রবার বিকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের সামনে এই হুঁশিয়ারি দেন সংগঠনটির যুগ্ম আহ্বায়ক নূরুল হক নূর।
ছাত্রীদের হলে ফেরত নিতে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে ২৪ ঘণ্টার আল্টিমেটাম দিয়ে তিনি বলেন, ‘হল থেকে বের করে দেয়া শিক্ষার্থীদের সম্মানের সহিত হলে তুলে নিতে হবে। অন্যথায় বাংলার ছাত্র সমাজ আবারও রাজপথে দাবানল দেখাবে।’
বৃহস্পতিবার রাতে সুফিয়া কামাল হলের তিন ছাত্রীকে হলত্যাগে বাধ্য করা হয়েছে এমন অভিযোগে রাত দুইটার দিকে হলটির সামনে যান বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের নেতারা। পরে শুক্রবার দেশের প্রতিটি কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে বিক্ষোভ কর্মসূচি ঘোষণা করে সেখান থেকে চলে আসেন তারা। তবে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে জানানো হয়, ওই ছাত্রীদের হল থেকে বের করে দেয়া হয়নি। তাদের অভিভাবকদের হাতে তুলে দেয়া হয়েছে। সকালে অভিভাবকদের ডাকা হলেও আসতে দেরি করায় রাতে ছাত্রীদের অভিভাবকদের হাতে তুলে দেয়া হয়েছে।
কোটা সংস্কার আন্দোলনের নেতা নূরুল হকের দাবি ছাত্রীদের ভয়ভীতি দেখানো হয়েছে। তিনি বলেন, ‘হল থেকে বের করে দেয়া ছাত্রীদের ভয়ভীতি ও হুমকি দেয়া হয়েছে। যার কারণে তারা সেদিন সাংবাদিকদের কাছে প্রকৃত ঘটনার তথ্য প্রকাশ করতে পারেননি।’
সুফিয়া কামাল হল ছাত্রলীগের সভাপতি এশাকে হেনস্তার অভিযোগে ওই ছাত্রীদের বের করে দেয়া হয়েছে বলে হলে কর্তৃপক্ষ দাবি করেছে-সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে নূরুল হক বলেন, ‘যদি কেউ সহিংসতামূলক কাজের সঙ্গে জড়িত থাকে তাহলে সেটার দায়ভার আমরা নেব না। তবে আমরা খবর নিয়েছি তারা এর সঙ্গে জড়িত ছিল না।’
‘শুধুমাত্র আন্দোলনে অংশ নেয়ার কারণেই তাদেরকে এভাবে বের করে দেয়া হয়েছে। তাদের নানাভাবে হুমকি-ধামকিও দেয়া হচ্ছে। এমনকি আন্দোলনের সঙ্গে জড়িত আরও ২৪ শিক্ষার্থীকে যেকোনো সময় হল থেকে বের করে দেয়া হবে বলে আমাদের কাছে অভিযোগ রয়েছে।’
সুফিয়া কামাল হলের প্রাধ্যক্ষকে প্রত্যাহারের দাবি জানিয়ে নূরুল হক বলেন, ‘হলের প্রাধ্যক্ষের একটি অডিও রেকর্ড এরই মধ্যে প্রচার হয়েছে যেখানে তিনি বলেছেন দুই হাজার ছাত্রীও যদি এই আন্দোলন সংশ্লিষ্ট কাজের সঙ্গে জড়িত থাকে তাহলে তাদেরকে আমি বহিষ্কার করবো।’
তিনি বলেন, ‘সুফিয়া কামাল হলে প্রশাসন যে হীন কাজ করেছে তাতে নৈতিক অবক্ষয় ঘটেছে। আর অতি দ্রুত সময়ের মধ্যে হলের প্রাধ্যক্ষকে হল থেকে প্রত্যাহারের দাবি জানান তিনি।
কোটা সংস্কার আন্দোলনে জড়িত সাধারণ ছাত্ররা যেনো হেনস্থার শিকার না হয় সে বিষয়ে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে ঢাবি প্রশাসনের প্রতি আহ্বান জানান নূরুল হক।
এছাড়া প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কোটা বিলুপ্তির যে ঘোষণা দিয়েছেন, প্রজ্ঞাপন জারি করে দ্রুত তা যেন বাস্তবায়ন করা হয় সে আহ্বানও জানান নূরুল হক। বলেন, ‘আপনার সন্তানেরা আজকে অস্থিরতার মধ্যে রয়েছে যে তাদের এটা কি বাস্তবায়ন হবে কি না? এ দাবি দ্রুত বাস্তবায়ন করে ছাত্রদের পড়ার টেবিলে ফিরে যেতে দিন।’
কোটা সংস্কারের দাবিতে যারা আন্দোলন করেছেন তাদের অনেককে প্রাণনাশের হুমকি দেয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন সংগঠনটির আরেক যুগ্ম আহ্বায়ক রাশেদ খান। তিনি বলেন, ‘কর্তৃপক্ষকে বলতে চাই ছাত্রদের আর হেনস্তা করবেন না, ছাত্রদের মাঝে আর আতঙ্ক বিরাজ করাবেন না।’
রাশেদ বলেন, ‘হলে হলে ছাত্রীদের আতঙ্কিত করা হচ্ছে এবং তাদের ছাত্রত্ব বাতিলের হুমকি দেয়া হচ্ছে। ফলে ছাত্রীরা আন্দোলনে আসতে ভয় পাচ্ছে।’
এর আগে বিকাল সাড়ে চারটার দিকে একটি বিক্ষোভ বের করে ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ। রাজু ভাস্কর্যের সামনে থেকে প্রায় দুই শতাধিক শিক্ষার্থীকে নিয়ে বের হওয়া মিছিলটি শাহবাগের কাছে গিয়ে আবারো রাজু ভাস্কর্য চত্বরে ফিরে আসে।
বিক্ষোভে ‘ছাত্রী নির্যাতনের’ প্রতিবাদে প্রশাসনের জবাব চেয়ে স্লোগান দেন অংশ নেয়া শিক্ষার্থীরা। ‘আমার বোন বাইরে কেন, প্রশাসন জবাব চাই’, ‘হলে হলে নির্যাতন কেন?’, ‘নিপীড়ন রুখে দাও’সহ বিভিন্ন ধরনের শ্লোগান দেন শিক্ষার্থীরা। এছাড়া তাদের হাতে বিভিন্ন শ্লোগান সম্বলিত প্ল্যাকার্ডও আছে। হামলা করে আন্দোলন বন্ধ করা যাবে না বলেও হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন শিক্ষার্থীরা।